অঙ্কন: অর্ঘ্য মান্না
‘ম্যানেজার’ই বটে! নইলে এ ভাবে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কেউ ‘ম্যানেজ’ করতে পারে?
নবদ্বীপে দিন কয়েক আগে তিন কিশোরকে বেলগাছে তুলে দিয়ে তাদের সাইকেল ও মোবাইল নিয়ে চম্পট দিয়েছিল এক ব্যক্তি। বৃহস্পতিবার সোনা পরিষ্কার করে দেওয়ার নাম করে হেঁশেলে ঢুকে সোনার হার নিয়ে পালায় দুই যুবক। শনিবার নিজেকে ব্যাঙ্ক ম্যানেজার পরিচয় দিয়ে সোনার হার নিয়ে চম্পট দিল এক দুষ্কৃতী।
একের পর এক এমন ঘটনায় থ নবদ্বীপ। পাড়ার মোড়, চায়ের দোকানে একটাই আলোচনা— ‘এরা তো সব শিল্পী মানুষ গো! দিব্যি খোশগল্প করতে করতে জিনিস নিয়ে ধাঁ। আর এক একটা কেসে এক এক কায়দা!’
শনিবার যেমন। বৌবাজারে সোনার দোকানে একাই বসেছিলেন মাঝবয়সি আশিস দাস। সকাল ১১টায় দোকানের সামনে এসে দাঁড়াল একটি কালো রঙের মোটরবাইক। সানগ্লাস খুলে যে যুবকটি হাসিমুখে দোকানে ঢুকল তার বয়স মেরেকেটে ৩২ বছর। পরনে হলুদ শার্ট, কালো ট্রাউজার্স।
—কী দাদা, খবর সব ভাল তো? অনেক দিন হল ব্যাঙ্কেও যাচ্ছেন না। তারপর, আছেন কেমন?
—আজ্ঞে না, মানে, ইয়ে, আপনাকে ঠিক...
—চিনতে পারছেন না তো? আপনি কোন ব্যাঙ্কের গ্রাহক?
—আজ্ঞে, পোড়ামাতলা....
—আমি সেই ব্যাঙ্কেরই ম্যানেজার। যাক গে, ভাল একটা সোনার চেন দেখান তো?
এ বারে বেশ অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন আশিসবাবু। তাঁর আটপৌরে সোনার দোকানে পা পড়েছে খোদ ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের। ব্যাঙ্কে তিনি মাঝেমধ্যে যান বটে। লেনদেনের সময় ক্যাশিয়ারের সঙ্গে টুকিটাকি কথাবার্তাও হয়। কিন্তু ম্যানেজারের মুখটাই তিনি মনে করতে পারলেন না। কী লজ্জা! এ বারে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন আশিসবাবু, ‘‘স্যারের জন্য একটু চা কিংবা কফি বলি?’’ আশিসবাবুকে থামিয়ে সেই আগন্তুক বলেন, ‘‘ব্যস্ত হওয়ার কিছু নেই। আপনি আমাকে সোনার চেন দেখান তাড়াতাড়ি। এখনই আবার ব্যাঙ্কে যেতে হবে।’’
লক্ষ্মী-গণেশের মুখ মনে করে এক বার প্রণাম সেরে নেন আশিসবাবু। কার মুখ দেখে যে তিনি আজ ঘুম থেকে উঠেছেন! কোনও দাম-দরের ঝামেলা নেই। ধার-বাকির কারবার নেই। যা হবে এক্কেবারে নগদে।
শেষতক একটি চেন পছন্দ হয় আগন্তুকের। দাম কুড়ি হাজার ষাট টাকা। চেকবই বের করতেই আশিসবাবু জানান, চেক না দিলেই ভাল হয়। তখন কার্ডে দাম মেটাতে চান আগন্তুক। কিন্তু আশিসবাবুর তো সোয়াইপ মেশিনও নেই। তাহলে উপায়? মুশকিল আসান করে দেয় ওই যুবক, ‘‘আপনি আমার সঙ্গে ব্যাঙ্কে চলুন। ওখানেই আপনাকে ক্যাশ দিয়ে দিচ্ছি। ততক্ষণ চেনটা আপনার কাছে রাখুন।” ‘ম্যানেজারের’ অমায়িক ব্যবহারে মুগ্ধ আশিসবাবু বলেন, “কী বলছেন স্যার! এটা আপনার কাছেই রাখুন। আপনার সঙ্গেই তো যাচ্ছি।”
বৌবাজার থেকে পোড়ামাতলা পাঁচ মিনিটের পথ। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সেই শাখার সামনে এসে আগন্তুক বলে, ‘‘উপরে গিয়ে আমার চেম্বারে বসুন। আমি বাইকটা রেখেই আসছি।”
আশিসবাবু তরতর করে সিঁড়ি ভেঙে পৌঁছে যান ম্যানেজারের ঘরের সামনে। দীর্ঘ সময় তিনি সেখানে অপেক্ষা করেন। কিন্তু বাইক রেখে ‘ম্যানেজারবাবু’ আর আসেন না। ব্যাঙ্কে কথা বলে আশিসবাবু বুঝতে পারেন, সোনার চেন নিয়ে পাখি হাওয়া। পুলিশ সুপার শীষরাম ঝাঝারিয়া বলেন, ‘‘কেপমারি রুখতে সব রকম পদক্ষেপ করা হচ্ছে। লোকজনকেও সচেতন থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy