Advertisement
০৯ নভেম্বর ২০২৪
একুশে দলবদলের দিন

কান্দি এখন ডিগবাজির দিকে চেয়ে

সেই গুঞ্জন, কান্দির হ্যালিফ্যাক্স ময়দানে সম্প্রতি উস্কে দিয়েছেন তৃণমূলের যুবনেতা সৌমিক হোসেন। বলে ছিলেন, “কান্দি মহকুমায় চার বিধায়ক আছে যারা কংগ্রেসের।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

কৌশিক সাহা
কান্দি শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৭ ০৩:৩০
Share: Save:

দলীয় ক্যালেন্ডারে এখনও শহিদ দিবস। তবে, বাংলার গাঁ-গঞ্জে ২১ জুলাই অধুনা একটা চালু লব্জে পরিচিতি পেয়েছে, ‘দলবদলের দিন!’

পালাবদলের পরে, গত ছ’বছরে সেই যোগদানের হিড়িক বেড়েছে আরও কয়েক গুণ। এ বার কে? জুলাইয়ের গোড়া থেকেই প্রশ্নটা ঘুরপাক খায় এলাকায়, চায়ের আড্ডা থেকে দলের পার্টি অফিস— প্রশ্নটা ঘোরে, ‘দলবদলের দিনে এ বার ডিগবাজি খাচ্ছে কে রে?’

কান্দির বাতাসে এ বার সেই তালিকায় এক গুচ্ছ নাম। দিন কয়েক আগেও, যাঁদের সঙ্গে ঘাস ফুলের সংস্রব ভাবতেই পারা যেত না, দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ফেরার পরে, প্রশ্নটা দাঁড়িয়ে গিয়েছে, সেই সব মুখ গুলো এখনও ‘ডিগবাজি বিমুখ’ কেন!

তবে, এ বার তারা আর নিরাশ করছে না বলেই দলের অন্দরের খবর। আজ, একুশের মঞ্চে কংগ্রেস ছেড়ে তাঁদের অনেকেরই তৃণমূলে ভেড়া প্রায় নিশ্চিৎ হয়ে গিয়েছে।

কান্দি মহকুমার তিন তাবড় কংগ্রেস নেতা এবং বিধায়কের নাম এখন খেটো চায়ের ঠেক থেকে পুকুরে স্নানের বিড়ে অহরহ জলডুব দিচ্ছে। তালিকায় প্রথম দিকেই রয়েছেন, কান্দি, বড়ঞা এবং খড়গ্রামের তিন কংগ্রেস বিধায়ক। কেন তাঁরা? তার বিবিধ ব্যাখ্যাও মিলে যাচ্ছে নিশ্চিৎ।

সেই গুঞ্জন, কান্দির হ্যালিফ্যাক্স ময়দানে সম্প্রতি উস্কে দিয়েছেন তৃণমূলের যুবনেতা সৌমিক হোসেন। বলে ছিলেন, “কান্দি মহকুমায় চার বিধায়ক আছে যারা কংগ্রেসের। কিন্তু পরে কান্দিতে আমি যে সভা করতে আসব তখন আমার পাশে তাঁদের তিন জনকেই দেখবেন আমাদের দলীয় পতাকা হাতে দাঁড়িয়ে।’’

তালিকায় প্রথমেই রয়েছেন, একদা অধীর চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ, কান্দির বিধায়ক অপূর্ব সরকার ওরফে ডেভিড। কান্দি পুরসভায় অচলাবস্থার সূত্রে এ যাবত অধীর যা সভা করেছেন তার একটিতেও ডেভিডের দেখা মেলেনি। এমনকী অধীর সভা করলে ডেভিড তার পাল্টা সভাও ডেকেছেন। জেলা তৃণমূলের এক নেতা কোনও রকম রাখঢাক না রেখেই বলছেন, ‘‘ভরতপুরের কংগ্রেস বিধায়ক কমলেশ চট্টোপাধ্যায় কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া সময়ের অপেক্ষা। বড়ঞা ও খড়গ্রামের বিধায়ক প্রতিমা রজক ও আশিস মার্জিতও গোপনে তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। জেলা কংগ্রেস সভাপতি আবু তাহের খানেরও কংগ্রেস ছেড়ে দেওয়ার কথা।’’

যা শুনে প্রতিমা অবশ্য বলছেন, “সবই তৃণমূলের গুজব।” একধাপ এগিয়ে কংগ্রেস দলকে নিজের মায়ের সাথে তুলনা করে বসেছেন খড়গ্রামের বিধায়ক অশিষ মার্জিত, “জেলার কংগ্রেস আগের থেকে অনেক দূর্বল। তাই আমার মা যদি অসুস্থ হয়ে পরে তখন যদি আমি ছেলে হয়ে মাকে ছেড়ে চলে যায় সেটা কী মানায়?’’ আবু তাহের খান বলেন, “২১শে জুলাইয়ের আগে, এমনচা হয়ে থাকে, শুনলাম আমার নামও নাকি আছে। তবে, আমি এখনও জেলা কংগ্রেসের কাজ করছি।’’ আর, ডেভিড বলছেন, “দল থেকে যোগ্য সম্মান পাচ্ছিনা। তা বলে কংগ্রেস ছেড়ে যাওয়ার এখনই কোন সিদ্ধান্ত নিইনি।’’ তবে, রবিবার, কান্দির পুরনো নাগরিকদের সঙ্গে দলত্যাগ বিষয়ে বৈঠক করেছেন ডেভিড। তা অবশ্য মেনে নিয়েছেন তিনি। জানাচ্ছেন, সেখানে তিনি জানিয়ে রেখেছেন, কংগ্রেস তাঁকে ব্রাত্য করে রেখেছে। দলত্যাগ করলে সকলকে জানিয়েই করবেন তিনি।

জেলা কংগ্রেসের নেতারা অবশ্য এ ব্যাপারে মুখে রা কাড়ছেন না। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীরের সঙ্গে ডেভিডের পুরনো সখ্যে যে পাঁচিল উঠেছে তা সকলেই জানেন। অধীর বলছেন, ‘‘ধরে বেঁধে তো রাখা যাবে না, তবে কে যাচ্ছেন আর কে থাকছেন আমার জানা নেই।’’

সেই জানা না-জানার গুঞ্জনে প্রবল দুলছে কান্দি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE