নীচু জমিকে ফুট পাঁচেক উঁচু করতে লাখ দশেক টাকার মাটি দিতে হয়েছে। তারপর চার দিকে পাঁচিল তুলে ভিতরে বসানো হয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহের উপযোগী কয়েক কোটি টাকা মূল্যের বড় বড় মেসিন। নবগ্রামের পাঁচগ্রাম এলাকার কিশোরপুর-চুপোরে কয়েক কোটি টাকা খরচ করে অস্থায়ী ওই সাব-পাওয়ার হাউস তৈরি হয়েছে। উদ্দেশ্য, ওই তল্লাটের ৫টি পঞ্চায়েত এলাকার হাজার দশেক বিঘা বোরো খেতে সেচ দেওয়া। কিন্তু বিদ্যুৎ দফতরের সঙ্গে জমি-মালিকের বিবাদের জেরে ওই পাওয়ার হাউস বন্ধ ছিল। ফলে সেচের অভাবে মাঠেই শুকোচ্ছিল বোরো ধান। বন্ধ হয়েই পড়েছিল জরুরি ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত পাওয়ার হাউস। অবশেষে যূথবব্ধ জনতার চাপে দিন চারেক আগে চালু হয়েছে ওই পাওয়ার হাউস। ফলে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে বোরো চাষিরা। আজ, মঙ্গলবার পাকাপাকি ভাবে ওই সমস্যা মেটাতে বিদ্যুৎ দফতের আধিকারিকরা জমির মালিক ও স্থানীয়দের নিয়ে আজ নবগ্রামে বৈঠকে বসবেন।
বর্ষায় দ্বারকা ও ব্রহ্মাণী নদীর জলে প্রতি বছর বানভাসি হয় রাঢ়ের রুখু মাটির অঞ্চল নবগ্রাম। ফলে আমনধান চাষ ও রেশমগুটির খাদ্য তুত গাছের জমি জলমগ্ন হয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েন কৃষকরা। ফলে ওই অঞ্চলের চাষিরা গ্রীষ্মের বোরো মরসুমের দিকে তাকিয়ে থাকেন। গ্রীষ্মে সেই দ্বারকা ও ব্রহ্মাণী নদী জলের অভাবে শুকিয়ে ফুটিফাটা হয়ে যায়। নবগ্রামের জেলা পরিষদ সদস্য কংগ্রেসের ধীরেন্দ্রনাথ যাদব জানান, পাঁচগ্রাম, হজবিবিডাঙা, রসুলপুর, গুড়াপাশলা ও মহরুল মিলে ৫টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় হাজার দশেক বিঘা জমিতে বোরো চাষ হয়। কিন্তু ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে বোরো চাষের এলাকা প্রতি বছর বাড়তে থাকায় নবগ্রামের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থায় টান পড়ে। এ কারণে পাঁচগ্রাম এলাকার কিশোরপুর-চুপোরে বিদ্যুৎ বিভাগের একটি সাব স্টেশন বা পাওয়ার হাউস প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বছর চারেক আগে ওই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে উদ্যোগ নেন স্থানীয় বিধায়ক সিপিএমের কানাইচন্দ্র মণ্ডল। জেলা পরিষদ সদস্য তথা ব্লক তৃণমূলের সভাপতি মহম্মদ এনায়েতুল্লার শ্বশুরের জমিতে শুরু হয় ওই পাওয়ার হাউস গড়ার কাজ। এনায়েতুল্লা বলেন, ‘‘বিদ্যুৎ দফতরের মৌখিক প্রতিশ্রুতিতে আমার শ্বশুর সোয়া দু’বিঘা জমি দেন পাওয়ার হাউস গড়তে। নীচু জমি উঁচু করতে ২০১২ সালে লাখ দশেক টাকার মাটি ফেলা হয়। ৪ বছর কেটে গেলেও বিদ্যুত দফতর ওই জমি রেজিষ্ট্রি করে নেয়নি। জমির মূল্য, বা মাটি ফেলার টাকা কিছুই দেয়নি। তাই পাওয়ার হাউস এতদিন চালাতে দেওয়া হয়নি।’’
হাজার হাজার বিঘা জমির বোরো চাষ নষ্ট হতে বসেছে দেখে স্থানীয় যুবক চঞ্চল শেখের উদ্যোগে দিন চারেক আগে কয়েক হাজার মানুষ বিডিও অফিস ঘেরাও করেন। পরদিন ক্ষুব্ধ জনতার চাপে ওই পাওয়ার হাউস চালু করা হয়। চঞ্চল বলেন, ‘‘অস্থায়ী নয়, ওই পাওয়ার হাউসকে স্থায়ী করতে হবে। জটিলতা মেটাতে হবে বিদ্যুৎ দফতরকে।’’ বর্তমান বাজারদর অনুসারে ওই জমি বাবদ দাবি করা হয়েছে প্রায় ৩ কোটি টাকা। জমিজট ও প্রকল্পের জটিলতার জন্য এনায়েতুল্লা-সহ অনেকেই সরাসরি বিদ্যুৎ দফতরের আধিকারিক দিলীপকুমার সাহার ভূমিকাকে দায়ী করছেন। এ ব্যাপারে দিলীপকুমারবাবু অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy