Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
গুন্ডা বাইক

পুলিশ কি অসহায়? 

প্রৌঢ়ার সেই আর্তনাদ কারও কানে পৌঁছেছে বলে মনে হয় না। জেলা জুড়ে বাইক দাপানো চলছেই। 

চলছে বাইকের দাপট। কৃষ্ণনগরে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

চলছে বাইকের দাপট। কৃষ্ণনগরে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

নিজস্ব প্রতিবেদন 
শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:১৪
Share: Save:

কথা বলতে গিয়ে ঝরঝর করে কেঁদে ফেললেন প্রৌঢ়া।

কোনও রকমে বললেন, “জোরে বাইক চালাসনে বাবারা। আমার মতো তোদের মায়েরাও অপেক্ষা করে থাকে বাড়িতে।”

দিন কয়েক আগে মোটরবাইকের ধাক্কায় মারা গিয়েছে তাঁর এক মাত্র ছেলে। শান্তিপুর থানার পুলিশ মা-কে নিয়ে এসেছিল তার কষ্টের কথা সকলের সামনে বলার জন্য। জোরে বাইক চালায় এমন যুবকদের ধরে তাঁর সামনে বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। যাতে মায়ের সন্তান হারানোর যন্ত্রণা কিছুটা হলেও তাদের ধাক্কা দেয়। কিছুটা হলেও শুধরে যায় তারা।

কিন্তু প্রৌঢ়ার সেই আর্তনাদ কারও কানে পৌঁছেছে বলে মনে হয় না। জেলা জুড়ে বাইক দাপানো চলছেই।

জরিমানা থেকে শুরু করে পথ নিরাপত্তা নিয়ে নাটক, হাতে গোলাপ তুলে দিয়ে গাঁধীগিরি, রাস্তায়-রাস্তায় নাকা চেকিং— নানা সময়ে নানা রকম করেছে পুলিশ। কিন্তু কিছুতেই যেন কিছু হওয়ার নয়। বরং বাইকের দাপাদাপি বেড়েই চলেছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বেপরোয়া বাইকের ধাক্কায় মৃত্যুর সংখ্যা।

সম্প্রতি ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ও রাজ্য সড়কে নানা জায়গায় ধরপাকড় করেছে পুলিশ। রানাঘাট থানার হবিবপুর ও ঘাটিগাছা, নোকারি, ধানতলার ন’পাড়া, পানিখালি মোড়, দত্তপুলিয়া, চাকদহ থানার তাতলা ও পাঁচপোতায় নজরদারি চলেছে।

পুলিশের এক কর্তার দাবি, বেশ কিছু দিন ধরেই এই অভিযান চালানো হচ্ছ। যারা বেপরোয়া ভাবে বাইক চালাচ্ছে, তাদের ধরে জরিমানা করা হচ্ছে। যাদের কাগজপত্র নেই, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আবার লাইসেন্স আছে, কিন্তু নিয়ম মানে না এমন বাইক আরোহীদের লাইসেন্স সাময়িক ভাবে বাতিলও করা হচ্ছে।

বেশ কিছু দিন ধরেই অভিযোগ আসছিল যে রানাঘাট ও কৃষ্ণনগর শহরে বিভিন্ন জায়গায় বাইকবাহিনী দৌরাত্ম চালাচ্ছে। তাদের ভয়ে কাঁটা পথচারীরা। জেলা পুলিশের হিসেব বলছে, গত নভেম্বরে বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালানোর জন্য ১৫০ জনকে জরিমানা করা হয়েছে। বেশি গতিতে চালানোর জন্য জরিমানা করা হয়েছে ৫০ জনকে। মত্ত অবস্থায় চালানোর জন্য জরিমানা হয়েছে ১৪৩ জনের। গত মাসেই গোটা জেলা থেকে জরিমানা আদায় হয়েছে প্রায় সাড়ে ১৩ লক্ষ টাকা। ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ বছরের জরিমানা আদায়ের পরিমাণ প্রায় এক কোটি ৪৮ লক্ষ টাকা। যার একটা বড় অংশই মোটরবাইকের থেকে পাওয়া।

কিন্তু এত কিছুর পরও কেন আটকানো যাচ্ছে না বেপরোয়া ভাবে বাইক চালানো? জেলা পুলিশের কর্তাদের দাবি, এক-এক জনকে দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হচ্ছে। কিন্তু এমন কিছু ছেলের হাতে বেশি গতির বাইক এসে গিয়েছে যাদের কাছে দু’পাঁচ হাজার টাকা কোনও ব্যপারই নয়। ওই সব অর্থবান পরিবারের ছেলেরা জরিমানা দেওয়ার পরের দিনই আবার একই ভাবে বাইক চালাচ্ছে। যেন কোনও ব্যপারই নয়। তার উপরে আছে প্রভাবশালীদের ফোন। শাসক দলের নেতারাও তো আছেনই।

তা হলে কি দু’চারটে জরিমানা করেই পুলিশ-প্রশাসন ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে বসে থাকবে? উৎপাত বন্ধের কার্যকর রাস্তা সত্যিই নেই?

অন্য বিষয়গুলি:

Police Death Reckless Driving Bike
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE