সংকীর্ণ রাস্তায় পাশাপাশি চলছে ছোটো-বড় গাড়ি। বেলেডাঙায় সুদীপ ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।
চোখের সামনে দুধের ছেলে বুড়ো হল। ছুঁড়ি গা কুঁচকে হল বুড়ি। তবু ফ্লাইওভারটা হল না। বেলডাঙায় ফ্লাইওভার হওয়া নিয়ে এমনই খেদ সত্তরোর্ধ্ব অরুণ মালাকারের। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, ‘‘তবু মরার আগে যদি এই নরকযন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতাম।’’
ভোটর বাজার গরম করতে ফি বারই রাজনীতির কারবারিরা শহরের ‘দুর্বলতম’ বিষয়টি বেছে নেন। চোঙা ফুঁকে, গরমাগরম ভাষণ দিয়ে সেটিকে এমন পর্যায় নিয়ে যান যে, শহরবাসী ভাবেন কোনও মতে ভোটপর্বটা মিটলে হয়। তারপরেই শুরু হবে ফ্লাইওভারের কাজ।
প্রতিবারই একই স্বপ্ন বুনেন কৃষ্ণনাগরিকেরা। প্রতিবারই মোহভঙ্গ হতে বেশি সময় লাগে না। এখন তাঁদের প্রশ্ন সত্যিই কি কোনও দিন তাঁদের দাবি পূরণ হবে।
৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে কৃষ্ণনগর শহরে ঢোকার মুখে পড়ে বেলেডাঙার রেলগেট। আবার রোগী নিয়ে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে যেতে গেলে ওই রেলগেট পেরোতে হয়। স্কুল কলেজের পড়ুয়াদেরও তাই। কিন্তু ফ্লাইওভার না থাকায় রেললাইন পেরোনোর জন্য দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয় শহরবাসীদের। মুমূর্ষু রোগীদের নিয়ে বিপদে পড়তে হয় পরিবারের লোকজনদের। স্কুল-কলেজে পৌঁছতে দেরি হয়ে যায় পড়ুয়া-শিক্ষকদের। দীর্ঘ সময় রেলগেট বন্ধ থাকায় দু’পাশে লম্বা যানজট লেগে যায়। অনেকে তাই বাধ্য হয়ে গেটের নীচ দিয়ে গলে বিপজ্জনক ভাবে রেল লাইন পার হয়ে যাতায়াত করেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এই রেলগেটে দীর্ঘসময় আটকা পড়ায় হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছিল। শহরেরই এক বৃদ্ধের কথায়, ‘‘সারাটা জীবন আমরা এই ভাবেই কাটিয়ে দিলাম। শিয়ালদহ-কৃষ্ণনগর বা বহরমপুর শাখায় ট্রেনের সংখ্যা যত বেড়েছে ততই পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মানুষের দুর্ভোগ।’’
স্থানীয় বাসিন্দা পিনু মজুমদার বলেন, ‘‘নিত্যদিন এই দৃশ্য দেখতে দেখতে হতাশ। প্রতিদিন মুমূর্ষু রোগীকে নিয়ে পরিবারের লোকজনদের ভোগান্তির শিকার হতে দেখে খুব কষ্ট হয়।’’
পুরপ্রধান তৃণমূলের অসীম সাহা বলেন, ‘‘বেলেডাঙা রেলগেটে একটি ফ্লাইওভার হওয়া খুবই জরুরি। প্রতিদিন বিরাট সংখ্যক মানুষকে রেলগেটে আটকা পড়ে হয়রান হতে হয়।’’ এ নিয়ে দলের মন্ত্রীর বিরুদ্ধেও বিষেদাগার উগরে দিতে ছাড়েননি। তিনি বলেন, ‘‘ফ্লাইওভার তৈরির জন্য লালুপ্রসাদ যাদব বা মুকুল রায় রেলমন্ত্রী থাকার সময় একাধিকবার তাঁদের কাছে দরবার করেছি। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি।’’ একই ভাবে স্থানীয় বিধায়ক তৃণমূলের অবনীমোহন জোয়ারদারেরও দাবি, তিনিও একাধিকবার রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন ফ্লাইওভারের জন্য। শাসকদলের নেতাদের দাবি, বারবার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু রেলমন্ত্রকের সদিচ্ছা না থাকায় তা হয়নি।
যদিও সম্প্রতি শিয়ালদহের ডিআরএম জয়া বর্মা সিংহ কৃষ্ণনগরে এসে দাবি করেছিলেন বেলেডাঙায় ফ্লাইওভার তৈরির কোনও প্রস্তাব রাজ্য সরকারের কাছে থেকে তাঁদের কাছে পাঠানো হয়নি।! তিনি জানান, ফ্লাইওভার তৈরির প্রস্তাব রাজ্য সরকারের কাছ থেকেই আসতে হয়। শুধু তাই নয়, রাজ্য সরকারকে ফ্লাইওভার তৈরির খরচের একটা অংশ বহন করতে হয়। তাই রাজ্য সরকার উদ্যোগ না নেওয়ায় তাঁরাও এগোতে পারছেন না।
কৃষ্ণনগরের সাংসদ তাপস পাল বলেন, ‘‘বেলেডাঙায় ফ্লাইওভার তৈরির কথা সংসদে তুলেছি। আবারও তুলব। সব রকম চেষ্টা করা হচ্ছে। কোনও ত্রুটি রাখছি না।’’
যা শুনে বিজেপির জেলা কমিটির মুখপাত্র সৈকত সরকার বলেন, ‘‘রাজ্য তো আগে প্রস্তাব দিক। সেটাই তো এখনও হয়ে উঠল না। এটা পুরোপুরি রাজ্য সরকারের ব্যর্থতা।’’
হয়তো এ ভাবেই চলবে রাজনৈতিক চাপান-উতোর। মাস পেরিয়ে বছর। কিন্তু কৃষ্ণনাগরিকেরা আদৌ এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবেন কিনা তার উত্তর জানা নেই কারও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy