প্রতীকী ছবি।
একটা চাপা অভিমান এখনও ওঁদের মনে গুমগুম করে। কখনও কান্না কখনও বা রাগ হয়ে তা ঝরে পড়লেই মূল ভূখণ্ডের মানুষ বাঁকা চোখে বলতে থাকেন—‘চরের মানুষ তো, দেশটাকে আপন করতে পারল না!’ কাঁপা ঠোঁটে সরুবালা তাই বলেন, ‘‘কিসের স্বাধীন, দ্যাশে থাইকাও দ্যাশের কুনু সুবিদি পেলুম না। কথায় কথায় ভিন দ্যাশির মুতন কইফত দিতে হয় বিএসএফরে!’’
সরুবালা উদয়নগর চরের মানুষ। চরের হাজার কয়েক বাসিন্দার ওই বৃদ্ধার মতোই অভিমান বুকে নিয়ে দিনযাপন। তবে,সম্বৎসরের এই মেঘ-ঢাকা অভিমানে এক-দু’টো দিন যেন মনে হয় ‘দ্যাশ’ বলে একটা কিছু আছে। বৃদ্ধা সরুবালা বলছেন, ‘‘স্বাধীনতার স্বাদ পেলাম না ঠিকই, কিন্তু এই ১৫ অগস্ট দিনটা কেমন যেন স্বাধীন স্বাধীন মনে হয়। নিজেকে ভারতীয় বলে মনে হয়।’’ বাংলাদেশ থেকে আসে মিষ্টি, ও পারের মনসুক, তাহেরদের পাঠানো ফুলের তোড়া। বিএসএফ এসে তাঁদের হাতে তুলে দিয়ে অন্তত এই দিনটায় বলে যায়, ‘‘খুশ রহেনা!’’ ধুধু বালির চরে যেন কিলবিল করে স্বাধীনতার স্বাদ।
বয়স-ভারে জলঙ্গির চোয়াপাড়ার শিশির সাহার স্মৃতি দুর্বল। তবুও মনে আছে, হাইলি নদীতে গিয়ে বাংলাদেশের বন্ধুদের সঙ্গে সাঁতার কাটা। ডুবসাঁতারে একবার বাংলাদেশ আবার ওপারে নিঃশ্বাস নিয়ে সটান ভারতের পাড়ে ভুউশ করে ভেসে ওঠা। তিনি বলছেন, ‘‘সে এক অন্য অনুভূতি। কড়াকড়ি না থাকলেও কেমন যেন মনে হত এক ডুব দিয়ে এক দেশ থেকে অন্য দেশে চলে এলাম। তখন সীমান্ত মানে এ পাড়া থেকে ও পাড়া যাওয়া।’’ জলঙ্গির উল্টো দিকে বাংলাদেশের চর তালপট্টি। দ্বীপের মতো একটা এলাকা ছিল সেখানে। চোরাচালানের স্বর্গ রাজ্য বলে অনেকেই তার নাম দিয়েছিল ‘সিঙ্গাপুর’। সেখানে ভিড় ভেঙে পডত ১৫ অগস্টের সকালে।
সেই চলাচল থমকে গিয়েছে কবেই। এখন সারা বছর পরাধীনতার রাঙা চোখ, শুধু স্বাধীনতার সকালে সরুবালাদের আবছা চোখের সামনে থই থই করে হারানো স্মৃতি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy