গঙ্গার গ্রাস: মঙ্গলবার ফরাক্কার হোসেনপুরে। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়
চারপাশে শুধু নেই আর নেই!
খাবার নেই, ত্রিপল নেই। ভিটে, মাটি তো বটেই, উনুনটা পর্যন্ত গিলে খেয়েছে গঙ্গা। তাই ‘দিদিকে বলো’ নম্বরে ফোন করে ত্রাণ চাইল বিপন্ন হোসেনপুর। মঙ্গলবার সেই ফোনেই গ্রামের লোকজন ফরাক্কা প্রশাসনের বিরুদ্ধে নালিশ ঠুকে বললেন, ‘‘ছেলেমেয়েরা না খেয়ে আছে। বৃষ্টিতে খোলা আকাশের নীচে ভিজছে। আমরা খুব বিপদে। প্রশাসন কিছুই করছে না। আপনি আমাদের একটু দেখুন।”
মাসখানেক ধরে ভাঙন চলছে হোসেনপুরে। এক সপ্তাহ থেকে তা আরও ভয়াবহ আকার নিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এমন দুঃসময়ে মুখ ফিরিয়েছেন প্রশাসনিক কর্তারা। এখনও পর্যন্ত ত্রাণ জোটেনি।
স্থানীয় বাসিন্দা তথা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য তৃণমূলের প্রভাত সরকারও সরকারি ত্রাণ না আসায় এ দিন নিজেও ‘দিদিকে বলো’ নম্বরে ফোন করেছেন। ফোনের ও প্রান্তের সাড়া পেতেই তিনি বলেন, “দিদিকে বলুন, ফরাক্কার হোসেনপুরে ভাঙন ভয়ঙ্কর আকার নিয়েছে। কোনও সরকারি ও প্রশাসনিক আধিকারিকেরা গ্রামে আসেননি। দিদিকে বলুন অনাহারে আছে হোসেনপুর। খাবার পাঠাতে বলুন। নেতারাও কেউ পাশে নেই আমাদের। আমাদের বাঁচান।”
প্রভাতবাবুর পাশে দাঁড়িয়ে এক বাসিন্দা কান্নায় ভেঙে পড়লেন, ‘‘ফরাক্কা ব্লক অফিসে একটি ত্রিপল চাইতে গিয়েছিলাম। বিডিও-র পাশেই এক বড় অফিসার বসেছিলেন। তিনি বললেন, ‘কে বলেছিল, তোমাদের গঙ্গাপাড়ে বাড়ি করতে? ভাঙবে তো বটেই। কোনও ত্রিপল হবে না, যাও। বিডিও রা’টি কাড়েননি।’ এর পরে ওদের কাছে আর কী আশা করব, বলুন তো?’’
হোসেনপুরের ভৌগোলিক অবস্থানটাও বিচিত্র। ফরাক্কার নয়নসুখ পঞ্চায়েতের মধ্যে পড়লেও যাতায়াত করতে হয় মালদহের বৈষ্ণবনগর দিয়ে। সেই গ্রামের আর এক বাসিন্দা ধরিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘আসলে কী জানেন, এ বছরের লোকসভা নির্বাচনে হোসেনপুরে বেশি ভোট পেয়েছিল বিজেপি। আর সেই কারণেই ত্রাণ নিয়ে সরকার ও প্রশাসনের এই টালবাহানা চলছে। আসলে হাতে না মেরে এ ভাবে ভাতে মারা হচ্ছে। এই বিপদের দিনেও তাই দেখা নেই কারও।’’
ফরাক্কার বিডিও রাজর্ষি চক্রবর্তী অবশ্য বলছেন, “ত্রাণ সোমবার বিকেলে গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্যের হাতে দেওয়া হয়েছে। কেন গ্রামের মানুষ তা পেলেন না তা খোঁজ নেব।”
সেই পঞ্চায়েত সদস্য তৃণমূলের প্রসেনজিৎ মণ্ডল বলছেন, “সরকারি ত্রাণ বলতে ক’টা ত্রিপল ও রান্নার হাঁড়ি। ওই ক’টা ত্রিপল কাকে দেব? খাবার কোথায়? চিঁড়ে, চাল, ডাল, কে দেবে? হাঁড়িকুড়ি কি লোকজন চিবিয়ে খাবেন? তা ছাড়া মঙ্গলবার ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে গ্রামে । ত্রিপল তাই বাড়িতেই রয়েছে। বিলি করা যায়নি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy