Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
Krishnanagar

মোদীর সভা থেকে সোজা তাড়ির ঠেক! কৃষ্ণনগরের গরম থেকে পরিত্রাণ পেতে ‘রসের হাটে’ সমর্থকেরা

রাস্তার দু’পাশে মাটির কলসি নিয়ে বসা বিক্রেতাদের প্রায় ছেঁকে ধরেছেন বিজেপি কর্মীসমর্থকেরা। জুলজুল চোখ মাটির হাঁড়িতে। গেলাস ভর্তি পানীয় দিতেই চোঁ-চোঁ টানে শেষ।

Tari

সভাস্থল থেকে খানিক দূরে তাড়ির দোকানদারদের কাছে। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০২৪ ১৪:৪৬
Share: Save:

ঘড়ির কাঁটায় সকাল তখন ১১টা বেজে ২০ মিনিট। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হেলিকপ্টার যখন হেলিপ্যাডে নামল, নদিয়ার কৃষ্ণনগরের তাপমাত্রা তখন ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে। বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ চল্লিশ শতাংশ। যা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেকটাই বেশি। কৃষ্ণনগর সরকারি কলেজের মাঠে মোটামুটি ৮০ হাজার লোক ধরে। বিজেপির দাবি, মোদীর সভা উপলক্ষে এক লক্ষের বেশি লোকের জমায়েত হয়েছে। সকলেই হাঁসফাঁস করছেন। গলদঘর্ম দশা। গলা শুকিয়ে কাঠ। সভা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কলেজের মাঠ থেকে বেরিয়ে দলে দলে বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা ঢুকে পড়লেন চার্চের গলিতে। রাস্তার দু’পাশে মাটির কলসি নিয়ে বসা বিক্রেতাদের প্রায় ছেঁকে ধরলেন কর্মী এবং সমর্থকদের অনেকে। সবার জুলজুল চোখ মাটির হাঁড়িতে। গেলাস ভর্তি পানীয় বাড়িয়ে দিতেই চোঁ-চোঁ টানে শেষ। পানীয়টি কী? তাড়ি।

নেশা আর পিপাসার টানে বেশ কয়েক গ্লাস এক সঙ্গে পান করার পর সম্বিৎ ফিরল অনেকের। ভিড় থেকে ভেসে এল সাবধানবাণী— ‘‘ট্রেনে-বাসে ভুলভাল কিছু করে দলের মান ডুববে না তো?’’ তবে ‘নীতি’র পাঠ চুকিয়ে তখন ব্যবসায়িক আনন্দে মশগুল তাড়ি দোকানিরা। বস্তুত, কৃষ্ণনগরে মোদীর সভার পর সবচেয়ে বেশি বিক্রি হল তাড়ি।

শনিবার কৃষ্ণনগরে মিনিট ১৫ সরকারি অনুষ্ঠান শেষে দলীয় সভামঞ্চে উঠেছিলেন মোদী। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান বিজেপির জেলা এবং রাজ্য নেতৃত্ব। কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলার পক্ষ থেকে তুলে দেওয়া হয় কাঁসার পুষ্প ফলক, শ্রীচৈতন্য দেবের মূর্তি এবং হাতে আঁকা প্রধানমন্ত্রীর মায়ের একটি ছবি। একে একে বক্তৃতা করেন সুকান্ত এবং শুভেন্দু। রোদ উপেক্ষা করে খোলা আকাশের নীচে ‘মোদী-মোদী’ স্লোগান তুলেছেন অসংখ্য মানুষ। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শুরুর কয়েক মিনিট পার হতেই এক দল লোক বেরিয়ে যেতে শুরু করলেন। গন্তব্য রাস্তার ধারে তাড়ির দোকানে। মার্চের ফুটিফাটা গরমে এক এক জন কয়েক গ্লাস অক্লেশে শেষ করে থামলেন। কেউ কেউ আবার ফিরলেন সভাস্থলে। কেউ তখন মাথার উপর কোনও ছাউনি খুঁজে জিরোলেন।

কেমন হল তাড়ির বিক্রিবাট্টা? চার্চের গলিতে নেই নেই করে সাত জন তাড়ি নিয়ে বসেছিলেন। সবারই তাড়ির কলসি শেষ। তারামোহন দাস নামে এক তাড়ি বিক্রেতার কথায়, ‘‘তাড়ির নেশা যারা করে, তারাই খেয়েছে। হঠাৎ এক দিন খেয়ে ও জিনিস কারও সহ্য হবে না।’’ দোকানির সংযোজন, ‘‘মোদীর সভা থেকে আসা বিজেপির লোকজন লাইন দিয়ে খেয়ে গেল।’’ পাশেই দাঁড়িয়ে সমীর নস্কর নামে এক ক্রেতা। নিজেই জানালেন, তিনি বিজেপির সক্রিয় সমর্থক। সমীরের কথায়, ‘‘সারা দিনের ক্লান্তিতে একটু এনার্জি দরকার। তাই দু’গ্লাস মেরে দিলাম। তবে এ বার ভয় করছে। বাসের মধ্যে উঠে যেন উল্টোপাল্টা না করে ফেলি।’’

সভা শেষে বাস-ট্রেন ভর্তি বিজেপির সমর্থকেরা বাড়ির দিকে রওনা হয়েছেন। তাড়ি পানের পর ‘অন্য রকম’ কোনও আচরণ করেছেন কি না, খবর নেই। চার্চের রাস্তা দিয়ে তাড়ির শূন্য কলসি নিয়ে হাঁটা দিয়েছেন বিক্রেতারা। পকেটে ঝমঝম খুচরো টাকার আওয়াজ। ঘর্মাক্ত মুখে হাসি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE