শুক্রবার গ্যাংটকে ছিলাম। সেদিন আকাশটা মেঘলা ছিল। আমাদের ছ’জনের দল। আগের দিনই নাথুলার পাস পেয়ে যাওয়ায় সকাল সকাল সবাই বেরিয়ে পড়েছিলাম। নাথুলায় তাড়াতাড়ি পৌঁছে গিয়ে বেশ ঘুরে বেড়াচ্ছি। তাপমাত্রা তো শূন্যের কাছাকাছি মনে হচ্ছিল। শীতে আমাদের হাত-পা প্রায় যেন জমে গিয়েছে। চারদিকে সাদা বরফ। দারুণ লাগছিল।
দুপুর গড়াতে তুষারপাত শুরু হল। তখন মনে মনে ভাবছি, এতো উপরি পাওনা। উপভোগও করছি, বরফ নিয়ে খেলছি। তখনই আমাদের ড্রাইভার বললেন, তাড়াতাড়ি শহরের দিকে রওনা দিতে হবে। না হলে রাস্তায় আটকে পড়তে হবে। পরে সেটা যে ফলে যাবে, তা সত্যিই সেই সময় ভাবতে পারিনি।
ড্রাইভার বলার সঙ্গে সঙ্গেই রওনা হয়েছিলাম। তবুও ছাঙ্গুতে গিয়ে থমকে যেতে হল আমাদের। একটা গাড়ি খারাপ হয়ে ছিল। সেটা সরানোর পরে রওনা হয়ে আবার আটকে পড়ি। ততক্ষণে জোরে তুষারপাত হচ্ছে, হাওয়া দিচ্ছে। গাড়িতে বসেও কাঁপছি আমরা। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঝুপ করে চারদিক অন্ধকার হয়ে গেল। ততক্ষণে গাড়ির ছাদ, বনেট সব সাদা। কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। শ’দুয়েক গাড়ির লাইন দেখলাম পিছনে। অনেকে চেঁচামেচি করছেন। শ্বাসকষ্টও হচ্ছিল।
সে সময়ই দেখলাম সেনা জওয়ানরা এক একটি গাড়ির কাছে এসে পর্যটকদের আশ্বস্ত করছেন। অসুস্থদের নিয়ে যাচ্ছেন তাঁবুতে, ব্যারাকে। কোনও কোনও জওয়ান শিশুদের কোলে নিয়ে তাঁবুতে নিয়ে গরম জল, দুধের ব্যবস্থা করেছেন। পরে জওয়ানেরা কয়েকটি যন্ত্র দিয়ে বরফ সরিয়ে রাস্তা পরিষ্কার শুরু করলেন। আমাদের চালকও তাঁদের পিছনে রওনা হলেন। ধীরে ধীরে গ্যাংটকের কাছাকাছি পৌঁছই।
পিছনে আটকে পর্যটকদের জন্য প্রথমে মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, পথে দেখলাম সেনা জওয়ানদের আরও কয়েকটি দল উদ্ধারের কাজে যাচ্ছে। এই ঘটনায় ভয় পেলেও এখন ঘোরা বন্ধ করছি না। শনিবার আমরা ছ’জন লাচেনের দিকে রওনা হয়েছি।
(সিকিমে আটকে পড়া পর্যটক, বহরমপুরের বাসিন্দা)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy