ফরাক্কা থেকে উদ্ধার করা বিরল প্রজাতির সেই সাপ। —নিজস্ব চিত্র।
১৭৯৬-পর ২০২৪। দীর্ঘ ২২৮ বছর পর মুর্শিদাবাদে দেখা মিলল বিরল প্রজাতির এক সাপ!
ইংরেজি নাম, ইন্ডিয়ান স্যান্ড স্নেক। ল্যাটিন ভাষায় স্যামোফিস কন্ডেনারুস (বিজ্ঞান সম্মত নাম)। বুধবার দুপুরে ফরাক্কার ২ নম্বর নিশিন্দা কলোনিতে সাপটিকে প্রথম দেখা যায়। বাড়ির উঠোনে মাটির গর্তে সাপটি লুকিয়ে ছিল। গ্রামের সকলেই অচেনা সাপটিকে দেখে অবাক হয়ে যান। খবর দেওয়া হয় সর্পবিশারদ প্রলয় চট্টোপাধ্যায়কে। তিনি খবর পেয়ে গ্রামে গিয়ে উদ্ধার করেন সেটিকে। এর পর অন্য সর্প বিশারদদের সাহায্য নিয়ে, ‘স্কেল কাউন্ট’ করে ‘প্রকৃত পরিচয়’ জানা যায়।
প্রলয় জানান, সাপটির পেটের তলার হলুদ-সাদা ও গায়ের উপরে বাদামি রঙের দাগ রয়েছে। প্রাথমিক ভাবে সেটিকে নির্বিষ ‘বেত আছড়া’ সাপ বলে মনে হচ্ছিল। কিন্তু খুঁটিয়ে দেখতেই ফারাক চোখে পড়ে। এর পর সাপটির বেশ কিছু ছবি তুলে সরীসৃপ বিশারদদের কাছে পাঠানো হয়। এর পর সেটিকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়। প্রলয় বলেন, ‘‘সাপটি মৃদু বিষধর। তবে মানুষের পক্ষে ক্ষতিকারক নয়। প্রধানত গিরগিটি, টিকটিকি, ছোট ব্যাঙ খেয়ে বেঁচে থাকে। এটি অবিভক্ত বাংলায় এর আগে ১৭৯৬ সালে পাওয়া গিয়েছিল বলে আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র সংক্রান্ত একটি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছিল।’’
সর্পবিশারদ অনির্বাণ চৌধুরী জানান, ব্রিটিশ সর্প বিশারদ রাসেল ১৭৯৬ সালে অবিভক্ত বাংলা থেকে পাওয়া এই প্রজাতির সাপের একটি নমুনা থেকে ইন্ডিয়ান স্যান্ড স্নেকের ছবি এঁকেছিলেন। এর পর ১৮২০ সালে মেরেম বৈজ্ঞানিক বর্ণনা দেন সাপটির। এক ব্রিটিশ সর্প বিশারদ উনবিংশ শতকে ওড়িশার গঞ্জামে এই প্রজাতির সাপের সন্ধান পেয়েছিলেন। ১৯৮৩-তে সর্পবিদ জেসি ড্যানিয়েল এবং ১৯৮৬-তে টিএসএন মূর্তি তাঁদের বইয়ে স্যান্ড স্নেকের সম্ভাব্য প্রাপ্তিস্থান হিসাবে দাক্ষিণাত্য, ওড়িশার পাশাপাশি বাংলার নামও উল্লেখ করেন। প্রলয়ের দাবি, পশ্চিমবঙ্গে এর আগে এই প্রজাতির সাপ কখনও উদ্ধার হয়নি।
তবে ভারতবর্ষের হিমালয় পাদদেশ, মধ্যভারতের বিভিন্ন অংশ, দক্ষিণের পূর্বঘাট পর্বতের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে সাপটির দেখা মিলেছে। ২০১৭-য় বাংলাদেশেও প্রথম বার পাওয়া গিয়েছিল। উদ্ধার করা সাপটিকে যেখানে উদ্ধার করা হয়েছিল সেই স্থানের কাছেই ছেড়ে দেওয়া হয় বলে প্রলয় জানান। তিনি বলেন, ‘‘বিরল প্রজাতির সাপটিকে বংশবৃদ্ধির সুযোগ দেওয়ার জন্য স্থানান্তরিত না করে তার প্রাকৃতিক পরিবেশে ছেড়ে দেওয়া উচিত ছিল। বাড়ির লোকজন প্রাথমিক ভাবে রাজি না হলেও সাপটি নির্বিষ শোনার পর এবং বিরল সেটি জেনে ওঁরাই বাড়ির পাশে ছাড়ার অনুরোধ করেন। সাপটিকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতিও দেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy