পথ দুর্ঘটনায় মৃত যুবক। প্রতীকী চিত্র।
বছরের প্রথম দিনে কলকাতায় নিউটাউনে পথ দুর্ঘটনায় বেঘোরে প্রাণ গিয়েছে মুর্শিদাবাদের দৌলতাবাদের ধনাইপুরের মেধাবী ছাত্র শাকিল আহমেদ ওরফে রনির (২১)। রবিবার সন্ধ্যায় কলকাতা থেকে পুলিশ মারফত সেই খবর পৌঁছতে গ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
হঠাৎ বছরের শুরুতে বেপরোয়া গাড়ির ধাক্কায় মেধাবী পড়ুয়ার অকালে প্রয়াণে ক্ষুব্ধও গ্রামবাসীরা। তাঁরা অভিযুক্ত গাড়ি চালকের বিরুদ্ধে কড়া শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। মৃতের পরিবার সূত্রের খবর, সোমবার কলকাতার একটি হাসপাতালের মর্গে তাঁর মৃতদেহের ময়না তদন্ত হয়েছে। শাকিলের দেহ সোমবার রাত ৮টা নাগাদ ধনাইপুর পৌঁছয়।
ঘটনার খবর পেয়ে এ দিন স্থানীয় মদনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সাহানাজ বেগম, স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য মহম্মদ মোবাইল হোসেন ধনাইপুরে মৃতের বাড়িতে যান। মৃতের পরিবারের লোকজনকে সমবেদনা জানান।
মৃতের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, তিনি দৌলতাবাদের মদনপুর উচ্চবিদ্যালয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াশোনা করতেন। সেখানে পড়াশোনা শেষ করে বছর চারেক আগে কলকাতায় আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূগোল বিষয় নিয়ে স্নাতকে ভর্তি হন। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বারে তাঁর স্নাতকোত্তরে শেষ বছর চলছিল। পড়াশোনা শেষ করে এ বারে তাঁর গ্রামে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু তার আগে তিনি না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেনমদনপুর গ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশিস কুমার সরকার বলেন, ‘‘শাকিল খুবই মেধাবী ছিল। ওর মৃত্যুতে বড় ক্ষতি হয়ে গেল।’’
মৃতের এক আত্মীয় জানান, গত অগস্টে শেষবারের মতো দৌলতাবাদের ধনাইপুরে গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন শাকিল। রবিবার বিকেলে চিকিৎসক দেখানোর জন্য হোস্টেল থেকে বেরিয়েছিলেন। ওই সময় একটি বেপরোয়া গাড়ি ধাক্কা মেরে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলে তাঁর মৃত্যু হয়। রবিবার ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা ঘাতক গাড়িটিকে আটক করার পাশাপাশি চালককে গ্রেফতারের দাবিতে পথ অবরোধ করেছিলেন।
শাকিলের বাবা আব্দুস সামাদ শেখ কৃষক। গ্রামে তাঁর ছোট কাপড়ের দোকান আছে। তাঁর এক মেয়ে ও এক ছেলে। মেয়ের আগেই বিয়ে হয়েছে। ফলে বাড়িতে বাবা মা ও শাকিল থাকতেন। দুর্ঘটনার জেরে শাকিলের মৃত্যু হওয়ায় একা হয়ে গেলেন তাঁর বাবা মা।
সোমবার মৃতের বাবা আব্দুস সামাদ শেখ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘‘ও কলকাতায় হস্টেলে থাকত। সেখান থেকে বাইরে কোথাও যাওয়ার জন্য রাস্তায় বেরিয়েছিল। খবর পেয়েছি গাড়ির ধাক্কায় ছেলের মৃত্যু হয়েছে।’’
মৃতের মা শাকিলা বেগম সংবাদ মাধ্যমকে জানান, রবিবার সন্ধ্যায় ঘটনার খবর শুনি। পুলিশ ফোন করে জানায় দুর্ঘটনায় আমার ছেলের পা ভেঙেছে। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি তার মৃত্যু হয়েছে।’’
মৃতের পিস তুতো দিদি আক্তার বানু বলেন, ‘‘গত ২৭ ডিসেম্বর ওর পরীক্ষা শেষ হয়েছে। ২৮ ডিসেম্বর গ্রামে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু পড়াশোনার কারণে ২ জানুয়ারি তার বোলপুরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তাই বোলপুর থেকে ফিরে ৫ জানুয়ারি গ্রামে ফিরবে বলেছিল। শেষ বার শনিবার বিকেলে ও ফোন করে মামিকে সে কথা বলেছিল। কিন্তু বেপরোয়া গাড়ির ধাক্কায় তার আর বাড়ি ফেরা হল না।" তাঁর দাবি, ‘‘ভাই স্নাতকোত্তর শেষে গবেষণা করবে এমনই ইচ্ছা ছিল। কিন্তু সেই ইচ্ছা আর পূরণ হল না।"
সোমবার সন্ধ্যায় বহরমপুরের মদনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সাহানাজ বেগম বলেন, ‘‘শাকিল মেধাবী ছাত্র। ওর মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। তাঁর পরিবারকে সমবেদনা জানাচ্ছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy