Advertisement
২৪ ডিসেম্বর ২০২৪
Lifetime Sentence

সালিশি সভায় না আসায় তুলে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে খুন! ৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিল বর্ধমান কোর্ট

অভিযোগ, মারধর করে ভূতনাথের বুকে সাইকেল চাপিয়ে দেওয়া হয়। কষ্টের চোটে জল খেতে চেয়েছিলেন যুবক। তাতে কর্ণপাত করেননি অভিযুক্তেরা। মৃত্যু হয় যুবকের। পুলিশ দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়।

lifetime sentence

— প্রতীকী চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ২১:৩৮
Share: Save:

সালিশি সভায় আসার জন্য বলা হয়েছিল। কিন্তু হাজির হননি এক ব্যক্তি। শাস্তি হিসাবে তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে মেরা ফেলা হয়। ১৩ বছরের পুরনো ওই মামলায় ন’জনকে দোষী সাব্যস্ত করল বর্ধমান আদালত। সোমবার ওই ন’জনকেই যাবজ্জীবন কারদণ্ডের নির্দেশ দেন বিচারক। সেই সঙ্গে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অনাদায়ে অতিরিক্ত ছ’মাসের সশ্রম কারাদণ্ড হয়েছে।

আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনাটি ২০১১ সালের ১০ সেপ্টেম্বরের। সে দিন বিকেল ৫টা নাগাদ পূর্ব বর্ধমানের করন্দা গ্রামের ভূতনাথ মালিক ওরফে ভনা (৩৬) মাঠ থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। তার কিছু দিন আগে নবান্ন উৎসব ছিল। সে দিন ভূতনাথের সঙ্গে কোনও বিষয় নিয়ে স্থানীয়দের গন্ডগোল হয়। সে দিন তাঁকে স্থানীয় একটি ক্লাবে সালিশিতে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ দেন এলাকার মাতব্বরেরা। কিন্তু ভূতনাথ সালিশি সভায় হাজির হননি। বিকেলে ভূতনাথকে রাস্তায় দেখতে পেয়েই কয়েক জন তাঁকে মারতে মারতে ক্লাবঘরে নিয়ে যান। ক্লাবে নিয়ে গিয়েও বেধড়ক পেটানো হয়। পরিবারের দাবি, খবর পেয়ে তাঁরা ক্লাবে ছুটে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁদের হুমকি দিয়ে এক প্রকার তাড়িয়ে দেওয়া হয়। খবর যায় পুলিশে। পরে পুলিশ গিয়ে ক্লাবের কাছে একটি কদমগাছের তলা থেকে ভূতনাথকে উদ্ধার করে। অভিযোগ, মারধর করে ভূতনাথের বুকে সাইকেল চাপিয়ে দেওয়া হয়। কষ্টের চোটে জল খেতে চেয়েছিলেন যুবক। তাতেও কর্ণপাত করেননি অভিযুক্তেরা। ওই ভাবে পড়ে পড়ে মৃত্যু হয় যুবকের।

পুলিশ দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছিল। মৃত ভূতনাথের আত্মীয় গণেশ মালিকের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে খুন, প্রমাণ লোপাট ইত্যাদি ধারায় মামলা রুজু করে পুলিশ। পাকড়াও হন অভিযুক্তদের কয়েক জন। বাকিরা পরে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। মামলা চলতে চলতে ন’জন ছাড়া বাকি অভিযুক্তেরা জামিনে মুক্তি পান। তদন্ত সম্পূর্ণ করে ২০১২ সালের ১৯ মার্চ তৎকালীন সাব-ইনস্পেক্টর মহম্মদ সফিউদ্দিন মোট ২৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করেন। তাতে এক জনকে পলাতক বলে দেখানো হয়। ২০১৪ সালের ২২ মে সংশ্লিষ্ট মামলার চার্জ গঠন হয়।

মামলা চলতে চলতেই দুই বিচারাধীন বন্দি মারা গিয়েছেন। তাঁদের নাম মামলা থেকে খারিজ হয়ে যায়। বাকি অভিযুক্তদের মধ্যে দু’জন নাবালক ছিল। তাদের বর্ধমান জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডে বিচার শুরু। প্রমাণের অভাবে ১৩ জনকে খালাস ঘোষণা করে আদালত। সোমবার বর্ধমানের পঞ্চম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক দেবশ্রী হালদার বাকি ন’জনকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় ঘোষণা করেছেন।

আদালত সূত্রের খবর, সাজাপ্রাপ্তদের নাম মোহন পণ্ডিত, অজয় পণ্ডিত, রাজু পণ্ডিত, মিলন বাগ, কবিতা পণ্ডিত, ছবি বাগ, শান্তি ঘোড়ুই, অলকা বাগ এবং লক্ষ্মী বাগ। তাঁদের প্রত্যেকের বাড়ি মেমারি থানার করন্দা গ্রামে। সরকারি আইনজীবী অজয় দে বলেন, ‘‘এই মামলায় ১১জন সাক্ষ্যপ্রদান করেছেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানের ভিত্তিতে ন’জনকে দোষী সাব্যস্ত করেন বিচারক। তাঁদের যাবজ্জীবন কারাবাসের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাকিদের বেকসুর খালাস ঘোষণা করেছেন বিচারক।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Lifetime Sentence Bardhaman court Crime News
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy