মাধ্যমিকের ফল পেয়ে উল্লাস পড়ুয়াদের। শুক্রবার কৃষ্ণনগরে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য
এ বারের মাধ্যমিকের মেধা তালিকার প্রথম দশটি স্থানে আছে বিভিন্ন জেলার মোট ১১৮ জন। তার মধ্যে নদিয়া থেকে কেবল মাত্র একটিই নাম। কৃষ্ণনগর হোলি ফ্যামিলি গার্লস হাইস্কুলের তোষালি ঘোষ। ৬৮৩ নম্বর পেয়ে দশম স্থানাধিকারী হয়েছে সে। এ ছাড়া, উল্লেখযোগ্য ফল নদিয়ায় এ বারেও হল না মাধ্যমিকে।
গত কয়েক বছর ধরেই মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিকের মেধাতালিকায় নদিয়া তেমন চমকপ্রদ কোনও সাফল্য পায়নি। অথচ, বঙ্গের বিদ্যাচর্চায় নদিয়ার ধারাবাহিকতা অতি প্রাচীন। একদা প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে খ্যাত নবদ্বীপ ছাড়াও রয়েছে কৃষ্ণনগর, শান্তিপুর, কল্যাণী, চাকদহ, রানাঘাটের মতো আধুনিক শহর। অন্য দিকে তেহট্ট, করিমপুর, বাদকুল্লা, বীরনগরের মতো বর্ধিষ্ণু জনপদ। তার পরেও স্কুল পর্যায়ের সর্বোচ্চ পরীক্ষার কেন নেই ধারাবাহিকতা? দুই মেদিনীপুর, বাঁকুড়া কিংবা ঘরের পাশে পূর্ব বর্ধমানের পড়ুয়ারা যে ধারাবাহিকতা দেখাতে পারছে, তা নদিয়া কেন পারছে না? কেন পড়ুয়ার ধারাবাহিক ভাবে মেধাতালিকায় জায়গা করে নিতে ব্যর্থ হচ্ছে নদিয়া?
এই সব প্রশ্নে বিদ্যালয় প্রধানদের বিশ্লেষণে নানা কারণ উঠে এসেছে। অতিমারির কারণে দীর্ঘ সময় স্কুল বন্ধ থাকা, অতিরিক্ত মোবাইল নির্ভর হয়ে পড়া, স্কুলকে গুরুত্ব না দেওয়া, অভিভাবকদের ইংরাজি মাধ্যমের দিকে ঝুঁকে পড়াকে যেমন দায়ী করেছেন শিক্ষকেরা, তেমনই কেউ কেউ সরাসরি জেলার শিক্ষা প্রশাসনের ঢিলেঢালা মনোভাবের দিকে আঙুল তুলেছেন। কেউ জানাচ্ছেন, শিক্ষণে পেশাদার মনোভাবের অভাবের কথা।
নবদ্বীপ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষিকা শ্রুতি লাহিড়ী এবং কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক মনোরঞ্জন বিশ্বাস মনে করেন, নম্বরের ক্ষেত্রে খাতা দেখার একটা বড় ভূমিকা আছে। পরীক্ষক বা যিনি মূল্যায়ন করছেন, তাঁর দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রে মূলত। বাংলা বা ইতিহাসের একই রচনাধর্মী প্রশ্নের উত্তরে ভিন্ন ভিন্ন পরীক্ষক আলাদা মূল্যায়ন করেন। ফলে, নম্বর বদলে যায়। পড়ুয়া পিছিয়ে যায় মেধাতালিকায়। শ্রুতি লাহিড়ীর কথায়, “যে ছেলে বা মেয়েটি সব বিষয়ে ১০০ নম্বর পাচ্ছে, সে হঠাৎ একটা বিষয়ে ৮০ নম্বর পেতে পারে না। তালিকা থেকে ছিটকে যাচ্ছে।”
আবার, কল্যাণীর এক স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা বিশ্বাস ছন্দা বিশ্বাস বলেন, “অভিভাবকদের একটা বড় দায় রয়েছে। সব ওদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। নদিয়ার যে অংশ কলকাতা-ঘেঁষা, সেখানে চাইছে না বাংলা মাধ্যমে পড়ুক ছেলেমেয়েরা। মেধাবীদের অনেকেই বাংলা মাধ্যমে আসছে না। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অনেকেই তাঁদের ছেলেমেয়েদের নিজেদের স্কুলে পড়ান না। শুধু আঙুল তুললে হবে না। নিজেদের ভূমিকা নিতে হবে।”
শান্তিপুর মিউনিসিপ্যাল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক কিংশুক চক্রবর্তী মনে করেন, “তিন-চার বছরে করোনা অনেকটাই প্রভাব ফেলেছে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার মানে। যে মেধাবী ছাত্রছাত্রী গরিব ঘর থেকে উঠে আসত, তারা অর্থনৈতিক কারণে পড়াশোনা প্রায় ছেড়েই দিয়েছে। অভিভাবকরাও জীবন যুদ্ধে জর্জরিত।”
শিক্ষকমহল মনে করাচ্ছেন নদিয়ার সমস্যা। জেলার সীমান্তবর্তী অংশ হতদরিদ্র। শিল্প কল-কারখানা সে ভাবে নেই কল্যাণী-ব্যতীত। কৃষিনির্ভর জেলা। ফলে, গ্রাম গ্রামান্তর থেকে শিক্ষক-শিক্ষিকারও বদলি নিয়ে শহরে চলে গিয়েছেন। সেখানেও ঘাটতি রয়েছে। শিক্ষকের অপ্রতুলতাও রয়েছে এই জেলায়।
যদিও করিমপুর গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মঞ্জু সরকার মনে করেন, সবকিছুর সঙ্গে পড়ুয়াদের একটি বড় অংশের পড়ায় নিরুৎসাহ হওয়া এর অন্যতম কারণ। তিনি বলেন, “ছাত্রজীবনে লেখাপড়াই ধ্যানজ্ঞান, এমন দিন আর নেই। সকলেই সব কিছু করবে। কিন্তু তেমন মেধা তো সকলের নেই। এটা ছাত্র-অভিভাবক, কেউই বুঝতে চান না। মূল লক্ষ্য থেকে সরে যাচ্ছে। সেটা ফিরিয়ে আনা আগে দরকার।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy