Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

ভোটে হিংসা কেন, প্রশ্ন ওঁদের

হুলোরঘাট লাগোয়া রূপানুগ ভজন আশ্রমের মঠাধ্যক্ষ স্বামী তৎপর মহারাজ বলেন, ‘‘এই ক’বছরে মায়াপুরের বদল রূপকথার মতো।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৮ ০২:২১
Share: Save:

বছরভর ওঁরা ব্যস্ত থাকেন সাধনভজন, নাম-কীর্তন, বিগ্রহসেবা কিংবা মহোৎসব নিয়ে। পরনে গেরুয়া, সাদা কিংবা গাঢ় হলুদের সাধুবেশ। পথে বের হলে ডান হাতে অবিরাম ঘুরে চলে জপের মালা। সাধারণের থেকে একেবারেই ভিন্ন জীবন যাপন করেন ওঁরা।

তাই বলে গণতন্ত্রের উৎসব থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকেন না ওঁরা। ভোট দেন পছন্দের প্রার্থীকে। মায়াপুর ১ ও ২ নম্বর পঞ্চায়েতে কোনও কোনও বুথে তাঁদের ভোটেই নির্ধারিত হয় জয়-পরাজয়। সমর্থন এবং সমালোচনা কোনওটাতেই তাঁদের বিশেষ রাখঢাক নেই। পরমার্থিক সাধনার পাশাপাশি গত পাঁচ বছরে স্থানীয় পঞ্চায়েত কী কাজ করেছে আর কোনটা করেনি সবই তাঁদের নখদর্পণে। মতামতেও অকপট ওঁরা।

হুলোরঘাট লাগোয়া রূপানুগ ভজন আশ্রমের মঠাধ্যক্ষ স্বামী তৎপর মহারাজ বলেন, ‘‘এই ক’বছরে মায়াপুরের বদল রূপকথার মতো। কিন্তু পরিকল্পনা মাফিক এলাকার উন্নয়ন পঞ্চায়েতের প্রধান কাজ। তা হল কই?” মায়াপুর ১ পঞ্চায়েতের অন্যতম প্রাচীন যোগপীঠের মঠাধ্যক্ষ ভক্তিকুমুদ পুরী মহারাজ বলেন, “সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ মায়াপুর রোড। বছরভর লাখো মানুষের ভিড়। এহেন রাস্তায় কেউ বালি পাথর রেখে, কেউ অন্য কোনও ভাবে সরু রাস্তাটি আরও সঙ্কীর্ণ করে তুলেছে। বহু বার বলেও কোনও লাভ হয়নি।”

নিকাশি নিয়ে ক্ষোভ মায়াপুরের কমবেশি সব মন্দির কর্তৃপক্ষের। গোপীনাথ গৌড়ীয় মঠের প্রধান প্রদ্যুন্মদাস ব্রহ্মচারী বলেন, ‘‘মায়াপুর এখন মন্দিরনগরী। কিন্তু এখানে মন্দিরে ঢুকতে হবে নোংরা জল মাড়িয়ে। পঞ্চায়েতকে বলেও কিছু হয়নি।” মায়াপুরকে পরিচ্ছন্ন করতে একটি সংগঠন গড়ে তুলেছেন মঠবাসী গৌরহরি দাস বাবাজি। তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক তীর্থস্থান হিসাবে পরিষেবার ন্যূনতম পরিকাঠামোটুকু নেই। উল্টে এখানে নদীও জবর দখল হয়ে যাচ্ছে। বাড়ি হোটেল তৈরি হচ্ছে বেআইনি ভাবে। প্রশাসনের কাছে দিস্তা দিস্তা আবেদন করেও কোনও ফল মেলেনি।” এক মঠবাসী অচ্যুতানন্দ দাস সরব মায়াপুরের পরিবেশ নিয়ে। তাঁর কথায় “সব রকমের দূষণ বাড়ছে। নেশার বস্তু হাত বাড়ালেই মেলে। দরকার একটা আলাদা থানা। কিন্তু সে সব নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে কে?”

পাশের জেলা মুর্শিদাবাদের বাবাজি-মহারাজদের ভোট-ভাবনা বিপরীত। নওদার ঝাউবোনা অঞ্চলে আছে বেশ কিছু বৈষ্ণব আখড়া। সেই সব আখড়ার গৌরদাস বাবাজি কিংবা রাঘব গোস্বামীরা কিন্তু ভোট নিয়ে একেবারেই আগ্রহী নন। রাঘব গোস্বামী, গৌরদাস বাবাজি বলছেন, “আমাদের আখড়া চলে মানুষের ভিক্ষায়। বিশেষ কাউকে ভোট দেওয়া মানে বাকিরা আমার অপছন্দের মানুষ। তাই আখড়াবাসী হওয়ার পরে ভোট দিই না। কাকে রেখে কাকে ভোট দেব?” হরিহরপাড়ার এক আখড়ার শ্রীদাম রবিদাসকে ভোটের কথা বলতেই বিষণ্ণ গলায় জানালেন তাঁর এ বারের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা। মনোনয়ন পর্বের সময়ে ভিক্ষায় বেরিয়েছিলেন তিনি। দেখেন, এক দল মানুষ উন্মত্তের মতো শাসাচ্ছে, চোখ রাঙাচ্ছে আর এক দলের উপর। ভিক্ষা বন্ধ করে মনখারাপ করে আখড়ায় ফিরে এসেছেন তিনি। প্রবীণ ওই বৈষ্ণবের প্রশ্ন, ‘‘সামান্য ভোট নিয়ে এত হিংসা কেন বলুন তো?’’

অন্য বিষয়গুলি:

monks nabadwip election
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE