মাথা মোড়ানো। সারা গায়ে মারধরের দাগ। ঘুপচি ঘরে ভয়ে সিঁটিয়ে ছিল মেয়েটা। কেঁদে যাচ্ছিল টানা। এই অবস্থায় নাবালিকাকে উদ্ধার করেছিলেন প্রতিবেশীরা। কী হয়েছে জিজ্ঞাসা করায় সে বলে, ‘’৩০ হাজার টাকায় মা আমায় বিক্রি করে দিয়েছিল!’’ এ কথা শোনার পর পড়শিরাই মেয়েটিকে থানায় নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে সব কথা খুলে বলে মেয়েটি। জানায়, বিয়ের পরেও শুধু পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চাওয়ায় তাকে এ ভাবে মারধর করা হয়েছে। নিজের মা আর স্বামী মিলে তার মাথার চুল কেটে নিয়েছেন। যাতে পাড়ায় সে মুখ দেখাতে না পারে। স্কুলে যেতে না পারে!
নদিয়ার কৃষ্ণনগরের কোতোয়ালি থানা এলাকার ওই ঘটনায় প্রতিবেশীদের অভিযোগের ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই অভিযুক্ত স্বামীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপার কে অমরনাথও বলেন, ‘‘অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মেয়েটির মায়ের ভূমিকাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্তে কোনও রকম গাফিলতি রাখা হবে না।’’
আরও পড়ুন:
প্রতিবেশীদের অভিযোগ, ৩৪ বছরের এক যুবকের সঙ্গে ১৪ বছরের মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন মা। এর জন্য জামাইয়ের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকাও পেয়েছিলেন। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই মেয়েটির উপর নানা ভাবে শারীরিক অত্যাচার চলেছে। পড়াশোনা করতে চাওয়ায় অত্যাচার দিনে দিনে বেড়েছে। এক বার আত্মহত্যা করারও চেষ্টা করেছিল সে। তবে পুলিশের তৎপরতায় সে বার রক্ষা পেয়েছিল নাবালিকা। এর পরেই মেয়েকে মায়ের কাছে পাঠিয়ে দেয় পুলিশ। তার পর থেকেই ৩০ হাজার টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য শাশুড়ির উপর চাপ দিতে থাকেন জামাই। বাধ্য হয়ে মা-ও মেয়েকে শ্বশুরবাড়িতে পাঠানোর চাপ দেন। এ নিয়ে টানাপড়েনের মধ্যেই নাবালিকার বাড়িতে এসে ওই যুবক তাকে বেধ়ড়ক মারধর করেছেন বলে অভিযোগ প্রতিবেশীদের।
প্রতিবেশী পাপ্পু দাস বলেন, ‘‘মেয়েকে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছিল মা। একটা ১৪ বছরের মেয়ে একটা মাঝবয়সি লোকের সঙ্গে কী করে সংসার করবে? মেয়ে পালিয়ে আসায় টাকার জন্য চাপ দেয় ছেলেটা। মেয়ের উপর অত্যাচার শুরু করে ওর মা। আমরা এ সব দেখেই পুলিশে খবর দিই।’’
পড়শিদের অভিযোগ কিছুটা স্বীকার করলেও মায়ের দাবি, ‘‘ইচ্ছে করে কি কেউ এ কাজ করে? ভেবেছিলাম মেয়েটা দু’বেলা দু’মুঠো ভাত পাবে।’’
নদিয়ার জেলাশাসক অরুণ প্রসাদ বলেন, ‘‘বাল্যবিবাহ রোধে জেলা জুড়ে প্রচার অভিযান চলে। বাল্যবিবাহের সংখ্যা আগের থেকে অনেক কমে এসেছে। আমাদের সমস্ত প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে শূন্যে নামিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।’’