Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

সাধারণ পাঁচ, স্মার্ট হলে দশ

বুকপকেট থেকে মোবাইলটা বের করতেই তাঁর মাথায় হাত! চার্জ ফুরিয়ে গিয়ে মোবাইলটাই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তা হলে উপায়? ভাবতে ভাবতে মুর্শিদাবাদে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বাইরে তাঁর চোখে পড়ে একটি দর্জির দোকান।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সামসুদ্দিন বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:২৫
Share: Save:

অসুস্থ বাবাকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন ডোমকলের মন্টু মণ্ডল। জরুরি বিভাগ, ওষুধের দোকান দৌড়ঝাঁপ করে ভর্তি করিয়েছেন আইসিইউতে। এ দিকে বাড়ির লোকজন মন্টুকে নাগাড়ে ফোন করে পাচ্ছেন না। তাঁদেরও দুশ্চিন্তার পারদ চড়ছে। মন্টুরও মনে হয়, ‘আরে, বাড়িতে তো খবর দেওয়া হল না!’

বুকপকেট থেকে মোবাইলটা বের করতেই তাঁর মাথায় হাত! চার্জ ফুরিয়ে গিয়ে মোবাইলটাই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তা হলে উপায়? ভাবতে ভাবতে মুর্শিদাবাদে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বাইরে তাঁর চোখে পড়ে একটি দর্জির দোকান। দোকানের সামনে বড় হরফে লেখা—‘এখানে মোবাইল চার্জ দেওয়া হয়’। মন্টু যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। মোবাইল চার্জ দিয়ে বাড়িতে ফোন করে মন্টু বাবার খবর জানালেন।

মুরুটিয়ার অভয় বিশ্বাস দিন কুড়ি আগে তাঁর দাদুকে নিয়ে কল্যাণী জহরলাল নেহরু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়েছিলেন। তড়িঘড়ি বাড়ি থেকে বেরনোর সময় মোবাইলের চার্জার নিয়ে যাননি। এ দিকে, ক্ষয়ে ক্ষয়ে ফোনের ব্যাটারিতে তলানিতে। যে কোনও সময় বন্ধ হয়ে যাবে। তা হলে বাড়িতে ফোন করবেন কী করে? মুশকিল আসান করে দেয় মেডিক্যালের মূল ফটকের উল্টো দিকের একটি জল খাবারের দোকান। সেখানে মোবাইলটা চার্জ দিতে বসিয়ে হাসছেন অভয়, ‘‘ ভাল ব্যবস্থা। মোবাইলের চার্জ নিয়ে ভয় নেই।’’

মন্টু বা অভয়দের মতো অনেককে ‘বিপদ’ থেকে বাঁচিয়ে দিচ্ছেন কল্যাণী ও বহরমপুরের হাসপাতালের সামনের ব্যবসায়ীরা। তবে মোবাইলে চার্জ দিয়ে তাঁরা টাকাও নিচ্ছেন। সাধারণ মোবাইল হলে চার্জের খরচ পাঁচ টাকা। আর স্মার্ট ফোনের জন্য লাগে দশ টাকা। মন্টু ও অভয় জানাচ্ছেন, টাকাটা খুব বেশি কিছু নয়। কিন্তু যে উপকারটা হচ্ছে তার দাম দেওয়া যায় নাকি! আজকাল বাড়ি থেকে বেরনোর সময় তিনটে জিনিস কাছে রাখতেই হয়—টাকা, ঘরের চাবি আর মোবাইল। কিন্তু মোবাইলে সবসময় চার্জ দিয়ে রাখা সম্ভব হয়ে ওঠে না। ফলে হাসপাতালের মতো জরুরি জায়গায় এসে মোবাইলের চার্জ শেষ হয়ে যাওয়া মানে মুশকিল। এমন ব্যবস্থা হওয়ায় উপকার হচ্ছে।

মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কিংবা কল্যাণীর জেএনএম হাসপাতালের বাইরের নানা দোকান থেকে শুরু করে স্টেশনারি, দর্জির দোকানে মোবাইল চার্জ দেওয়া হয়। বহরমপুরে মেডিক্যালেরে সামনে দর্জির দোকান যাদব দাসের। তাঁর দোকানে সাধারণ ফোন থেকে শুরু করে স্মার্টফোন-সহ ৫০টি চার্জার আছে। মোবাইল চার্জ দিতে এলে একটি কার্ড মোবাইলের নীচে রাখা হয়। অন্য কার্ড দেওয়া হয় মোবাইলের মালিকের হাতে। একজনের মোবাইল যাতে অন্যজনের হাতে না যায়, সেই জন্য এমন ব্যবস্থা।

যাদব দাস বলছেন, “আগে অনেকেই মোবাইল চার্জে বসিয়ে দিয়ে যেতেন। কিন্তু বাড়তি ঝামেলা নিতে চাইতাম না। কিন্তু মোবাইল চার্জ দেওয়ার চাহিদা থাকায় শেষ পর্যন্ত এই ব্যবস্থাই চালু করে দিই।” যাদব জানাচ্ছেন, এই এলাকায় তাঁর মতো অনেকেই এখন এই চার্জ-কারবার শুরু করেছেন। তাঁর দোকানে গড়ে প্রতিদিন ৩০ জন চার্জ দিতে আসেন। আর এক ব্যবসায়ী ষষ্ঠী হালদার বলছেন, ‘‘দোকানের সামনে বিষয়টি লিখে ঝুলিয়ে দিয়েছি। সহজেই সেটা সকলের চোখে পড়ে। এতে লোকজনের উপকার হচ্ছে। আমরাও দু’পয়সা বাড়তি আয় করছি।’’

তথ্য সহায়তা: মনিরুল শেখ

অন্য বিষয়গুলি:

Mobile Charge Hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy