দেড়শো প্রাথমিক স্কুলকে পঞ্চম শ্রেণিতে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত। —প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
কোথাও এক জনও পড়ুয়া নেই। কোথাও আট জন, আবার কোথাও ছয়।
হাওড়া জেলায় যে ৭০০ প্রাথমিক স্কুলে বছর তিনেক আগে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পঠনপাঠন শুরু হয়েছে, তার কয়েকটির পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়াদের এই হল পরিস্থিতি। এই অবস্থায় আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে ফের দেড়শো প্রাথমিক স্কুলকে পঞ্চম শ্রেণিতে উন্নীত করার সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে শিক্ষক মহলে প্রশ্ন, পড়ুয়া আসবে তো? কারণ, বহু হাই স্কুলে এখনও পঞ্চম শ্রেণি রয়ে গিয়েছে।
জেলায় বিভিন্ন প্রাথমিক স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পঠনপাঠন শুরু হয় ২০২০ সাল থেকে। তার মধ্যে রয়েছে বাগনান ২ ব্লকের চন্দ্রভাগ প্রাথমিক স্কুলও। এই স্কুলে চলতি শিক্ষাবর্ষে পঞ্চম শ্রেণিতে কোনও পড়ুয়া নেই। আগের দু’টি শিক্ষাবর্ষেও সেই সংখ্যা ছিল নগণ্য। ২০২৩-এ ১২ জন। ২০২২-এ ১৪ জন।
কেন এই অবস্থা?
প্রধান শিক্ষিকা অরুণিমা দে বলেন, ‘‘আমরা অভিভাবকদের বোঝালেও তাঁরা এখানে সন্তানদের পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি করাতে চাইছেন না। কারণ, এখানে ভর্তি করালেও ফের পরের বছর তাদের হাই স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করাতে হবে। অভিভাবকেরা প্রশ্ন তুলছেন, এখানে এক বছরের জন্য ছেলেমেয়েদের ভর্তি করিয়ে কী হবে?’’
আমতা ১ ব্লকের উদং হাই অ্যাটাচড প্রাথমিক স্কুলেও পঞ্চম শ্রেণিতে পঠনপাঠন চালু হয় ২০২০ সালে। বর্তমানে ওই শ্রেণিতে পড়ুয়ার সংখ্যা আট জন। আগের দুই বছরে পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১২ ও ১৪ জন। প্রধান শিক্ষক পিন্টু পাড়ুই বলেন, "শিক্ষকের অভাবেই আমাদের স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়ার সংখ্যা কমছে। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াতে হলে ছ’জন শিক্ষক দরকার। স্কুলে তা নেই।’’
এই ব্লকেরই উদং উত্তরপাড়া প্রাথমিক স্কুলে চলতি বছরে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়ার সংখ্যা মাত্র ৬। আগের দু’টি বছরে পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১৪ ও ২০। প্রধান শিক্ষিকা নিতু সাহা বলেন, ‘‘স্কুলে পরিকাঠামোর অভাব রয়েছে। মাত্র দু’টি শ্রেণিকক্ষ। পঞ্চমে পড়ুয়া বাড়বে কী করে?’’
শিক্ষকের অভাব এবং পরিকাঠামোগত সমস্যার কারণেও যে বিভিন্ন প্রাথমিকে পঞ্চম শ্রেণিতে পর্যাপ্ত পডুয়া ভর্তি হচ্ছে না, তা মেনে নিচ্ছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। জেলা প্রাথমিক স্কুল শিক্ষা সংসদও মানছে, বিভিন্ন প্রাথমিকে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়ার অভাবের কথা।
তবে ব্যতিক্রমও আছে। আমতা ১ ব্লকের জ্যোৎকল্যাণ পুষ্পরানি প্রাথমিক স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়ার সংখ্যা ৩৬। গত তিন বছর ধরে এই হারেই পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়ার সংখ্যা ঘোরাফেরা করেছে বলে জানান প্রধান শিক্ষক অরূপ মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘স্কুলের প্রয়োজনীয় শিক্ষক আছেন। শিক্ষার পরিবেশও ভাল রাখার চেষ্টা করি।’’
শিক্ষকদের একটা বড় অংশের বক্তব্য, পরিকাঠামোর উন্নতি এবং শিক্ষকের অভাব যেমন মেটানো দরকার, তেমনই হাই স্কুলগুলিতে পঞ্চম শ্রেণির পঠনপাঠন বন্ধ করা দরকার। উদং হাই অ্যাটাচড প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক পিন্টু পাড়ুই বলেন, ‘‘হাই স্কুলগুলিতে পঞ্চম শ্রেণির পঠনপাঠন বন্ধ করা না হলে ফের যে দেড়শো প্রাথমিকে ওই ক্লাসে পঠনপাঠন চালু হচ্ছে, তার হাল আগের ৭০০ স্কুলের মতোই হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy