Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

কার্তিক খুনে ধরা পড়ল দালাল বাবন

পুলিশ জানায়, ধৃতের নাম সাগর নাথ ওরফে বাবন। তার বিরুদ্ধে এর আগেও কৃষ্ণনগর পুরসভায় ডাকাতি থেকে শুরু করে ছিনতাইয়ে যুক্ত থাকার অভিযোগ ছিল।

কৃষ্ণনগর আদালতে সাগর নাথ ওরফে বাবন। নিজস্ব চিত্র

কৃষ্ণনগর আদালতে সাগর নাথ ওরফে বাবন। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৮ ০৫:৪৮
Share: Save:

পাক্কা এক সপ্তাহ পার!

শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের মেডিসিনের চিকিৎসক কুমুদরঞ্জন বিশ্বাসের ছায়াসঙ্গী কার্তিক বিশ্বাসকে খুনের ঘটনায় অবশেষে এক ওষুধের দালালকে গ্রেফতার করল পুলিশ।

পুলিশ জানায়, ধৃতের নাম সাগর নাথ ওরফে বাবন। তার বিরুদ্ধে এর আগেও কৃষ্ণনগর পুরসভায় ডাকাতি থেকে শুরু করে ছিনতাইয়ে যুক্ত থাকার অভিযোগ ছিল। ঘটনার পরেই তাকে জেরা করা হয়েছিল। তদন্তে বেশ কিছু প্রমাণ হাতে আসার পরে মঙ্গলবার রাত ৩টে নাগাদ কৃষ্ণনগর স্টেশন লাগোয়া খেজুরতলা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। বুধবার কৃষ্ণনগর আদালতে তুলে তাকে তদন্তের স্বার্থে ১৪ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে নিতে চেয়েছিল পুলিশ। বিচারক সাত দিনের হেফাজত মঞ্জুর করেছেন।

জেলার পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলেন, “তদন্তে সাগর নাথের বিরুদ্ধে একাধিক প্রমাণ উঠে আসার পরে নিশ্চিত হয়েই আমরা তাকে গ্রেফতার করেছি। তবে এই খুনে আরও কয়েক জনের যুক্ত থাকার বিষয়টিও উঠে আসছে।” পুলিশ তাদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে।

গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাত পৌনে ১২টা নাগাদ কৃষ্ণনগরের চুনুরিপাড়া লেনে কুমুদরঞ্জনের বাড়িতে ঢোকার সময়ে তাঁর সামনেই কার্তিককে গুলি করে মারে আততায়ী। বাড়ির সামনে লাগানো সিসি ক্যামেরায় তাকে দেখাও গিয়েছে। কিন্তু ফুল-হেলমেট পরে থাকায় লোকটিকে চিহ্নিত করা যাচ্ছিল না। তদন্তে নেমে চিকিৎসকের দুই ছেলে ও দুই ওষুধের দালালকে আটক করে জেরা করে পুলিশ। কিন্তু প্রাথমিক ভাবে তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। পুলিশ জানায়, চার জনকে ছেড়ে দেওয়া হলেও গতিবিধির উপরে নজর রাখা হচ্ছিল। তবে তদন্ত যত এগিয়েছে ততই একাধিক সংস্থার দালাল মারফত কমিশনের লাখ-লাখ টাকা লেনদেনের বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে ওঠে।

তদন্তে পুলিশ জেনেছে, ওষুধ সংস্থার চার জন দালাল কুমুদরঞ্জনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলত। এদের মধ্য কার্তিক আর বাবন ছিল সবচেয়ে ঘনিষ্ট। গত বছরখানেক ধরে বাবনকে পিছনে ফেলে কার্তিক বেশি ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। তাকে বিশ্বাস করে নিজের ব্যাঙ্ক ও সম্পত্তি সংক্রান্ত বিষয় দেখভালের দায়িত্ব দিয়েছিলেন অসুস্থ চিকিৎসক। গত কয়েক বছরের মধ্যে কার্তিক নিজেও কিছু সম্পত্তি করেছিল। সেটাই বাবনের মতো কিছু দালালের গাত্রদাহের কারণ হয়েছিল বলে পুলিশের ধারণা। সম্প্রতি বাবন আর কার্তিক বিবাদেও জড়িয়ে পড়ে। পুলিশের ধারণা, সেই কারণেই কর্তিককে সরিয়ে দিয়ে আবার গোটা ব্যবসা নিজে নিয়ন্ত্রণ করার পরিকল্পনা করেছিল বাবন। তবে সে নিজে হাতে খুন করেছে নাকি পেশাদার কাউকে এই কাজে লাগানো হয়েছিল, পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে।

জনবহুল এলাকায় পরপর চারটে গুলি চালিয়ে খুনি বিনা বাধায় চলে গেল কী করে? বিশেষ করে এলাকার অনেকেই যেখানে গুলির আওয়াজ পেয়েছিলেন? পুলিশের জেরায় বাবন জানিয়েছে, টিভিতে তখন ভারত আর আফগানিস্তানের ক্রিকেট ম্যাচ চলছিল। আশপাশের অনেকে টিভির সামনে বসে ছিলেন। সেই সুযোগটাই খুনি কাজে লাগায়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, খুনি সে দিন যে মোটরবাইক ব্যবহার করেছিল সেটির খোঁজ মিলেছে। সেটির সূত্র ধরেই বাইকের মালিকের সন্ধান করছে পুলিশ। বাইক মালিক নিজে কতটা জড়িত, তা নিয়েও নিশ্চিত হতে চাইছে তারা।

পুলিশের দাবি, খুনে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করলেও জেরায় নানান বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছে বাপন। তাই কুমুদরঞ্জনের ঘনিষ্ঠ অন্য কিছু দালালের ভূমিকাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদিও জেরায় কুমুদরঞ্জন দাবি করেছেন, তিনি কখনওই ‘আইএসও সার্টিফিকেট’ ছাড়া কোন সংস্থার ওষুধ লিখতেন না। কার্তিকের সংস্থার সেই সার্টিফিকেট ছিল।

এ দিন ফোনে কুমুদরঞ্জন অবশ্য দাবি করেন, এই খুনের সঙ্গে ওষুধের কমিশন সংক্রান্ত রেষারেষির বিষয়টি কোনও ভাবেই জড়িত নয়। তা হলে কেন এই খুন? কুমুদরঞ্জন বলেন, “কারও সঙ্গে কারও ব্যক্তিগত কোনও বিবাদ থাকলে আমি কী করে জানব!” তাঁর পিছন থেকে কার্তিককে ধাওয়া করে মেরে তাঁকে ধাক্কা দিয়েই চলে গিয়েছিল খুনি। তিনি কি আততায়ীকে চিনতে পেরেছিলেন? কুমুদরঞ্জন বলেন, “চোখের সামনে হঠাৎ এই ঘটনা ঘটে যাওয়ায় আমি প্রচণ্ড ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। খুনিকে চিনতে পারিনি।” পুলিশ সুপার বলেন, “প্রাথমিক ভাবে চিকিৎসকের দুই ছেলের যুক্ত থাকার কোনও প্রমাণ আমরা পাইনি। তবে এখনও সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE