Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

কীর্তন গেয়ে ভোটের প্রার্থী সিদ্ধার্থশেখর

সিদ্ধার্থের বাড়ি নবদ্বীপ পুরসভার ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কোলের ডাঙা রোডে কেশবজি গৌড়ীয় মঠ লাগোয়া। ‘অল ইন্ডিয়া কীর্তন বাউল অ্যান্ড ডিভোশনাল সিঙ্গার্স ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট’ বা শিল্পী সংসদের প্রতিষ্ঠাতা তথা সর্বভারতীয় সম্পাদক তিনি।

নবদ্বীপে সিদ্ধার্থশেখর। নিজস্ব চিত্র

নবদ্বীপে সিদ্ধার্থশেখর। নিজস্ব চিত্র

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৯ ০২:৩৭
Share: Save:

দোলের সন্ধ্যায় ক্যানিংয়ের প্রত্যন্ত গ্রামে কীর্তন শোনাচ্ছিলেন তিনি। যখন দোলমঞ্চে ‘বসন্ত রাস’ গাইছেন, কয়েকশো মাইল দূরে দিল্লিতে প্রথম দফার প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করছে বিজেপি। পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক কেন্দ্রে তাঁকে প্রার্থী করার খবর যখন সুন্দরবন ঘেঁষা গ্রামে পৌঁছল, তখনও শেষ হয়নি গান। মঞ্চ থেকে নামেননি কীর্তনিয়া সিদ্ধার্থ শেখর দাস।

সিদ্ধার্থের বাড়ি নবদ্বীপ পুরসভার ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কোলের ডাঙা রোডে কেশবজি গৌড়ীয় মঠ লাগোয়া। ‘অল ইন্ডিয়া কীর্তন বাউল অ্যান্ড ডিভোশনাল সিঙ্গার্স ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট’ বা শিল্পী সংসদের প্রতিষ্ঠাতা তথা সর্বভারতীয় সম্পাদক তিনি। বেশ কয়েক বছর ধরে শিল্পীদের বঞ্চনা ও নানা দাবি-দাওয়া নিয়ে ধারাবাহিক আন্দোলন করছেন। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সেই আন্দোলনের সুবাদেই বিজেপির ঘনিষ্ঠ হয়েছেন।

ক্যানিংয়ের অখ্যাত গ্রাম তালতলা উত্তর রেদোখালির বিত্তশালী বৈষ্ণব পরিবারে জন্ম সিদ্ধার্থশেখরের। সালটা ১৯৭২। ঠাকুর্দা হাবুলচন্দ্র নস্কর ছিলেন এলাকার প্রখ্যাত কীর্তনিয়া। তাঁর কাছেই কীর্তনে হাতেখড়ি। পরে বৈষ্ণব পরিমণ্ডলে থেকে আরও ভাল ভাবে কীর্তন শেখার জন্য কৈশোরে নবদ্বীপে চলে আসা। কীর্তনিয়া সুবল দাস এবং গোষ্ঠগোপালের কাছে তালিম নেওয়া। পেশাদার কীর্তনিয়া হিসাবে যখন প্রথম আসরে নামেন তখনও আঠারো বছর বয়স হয়নি।

আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

সিদ্ধার্থশেখরের কথায়, “গোড়ায় দীর্ঘদিন নবদ্বীপ রানির ঘাট অঞ্চলে থাকতাম। চরম দারিদ্র সহ্য করেছি। গান নেই তাই খাওয়া জোটেনি, এমন রাত বহু কেটেছি। নিজের পরিবারে দেখেছি, বয়সকালে যখন গলা থেকে সুর চলে যায়, কীর্তনিয়াদের ভিখারির অধম দশা হয়। তাই গোড়া থেকেই একটা সংগঠন তৈরির কথা মনে ছিল, যেখানে জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের একটাই পরিচয়— শিল্পী। তাঁদের জন্য কিছু করতে হবে।”

সেই ভাবনা থেকেই ২০০৪ সালে শিল্পী সংসদের পত্তন। তৃণমূলের ডাকে সাড়া দিয়ে সামিল হন বাম বিরোধী আন্দোলনে। সিদ্ধার্থশেখরের আক্ষেপ, “২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতা পেল তৃণমূল, কিন্তু প্রতিশ্রুতি ছাড়া কিছুই মেলেনি। মুখ্যমন্ত্রী আমাদের সঙ্গে কথা বলার সময় পাননি। বাধ্য হয়ে ২০১৪ সাল থেকে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামি। পাশাপাশি কেন্দ্রের কাছেও আবেদন করি।’’ গত জানুয়ারিতে শহিদ মিনারে শিল্পী সংসদের সমাবেশে এবং ৫ মার্চ নবদ্বীপে অনুষ্ঠানে এসেছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা তথা রাজ্যের পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়। কেন্দ্রীয় বাজেটে ষাটোর্ধ্ব দুঃস্থ শিল্পীদের জন্য মাসে তিন হাজার টাকা করে পেনশন বরাদ্দ হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

তবে নবদ্বীপের তৃণমূল প্রভাবিত ‘মা মাটি মানুষ লোকশিল্পী সমন্বয় সমিতি’র অন্যতম যুগ্ম সম্পাদক সঞ্জয় দাস পাল্টা বলেন, “উনি কীর্তনিয়াদের নিয়ে রাজনীতি করছেন। তৃণমূলের সঙ্গে থেকে আখের গোছাতে না পেরে বিজেপিতে গিয়েছেন। এতে শিল্পীদের কোনও লাভ হবে না।”

তমলুকে তাঁর বিরুদ্ধে তৃণমূলের প্রার্থী দিব্যেন্দু অধিকারী, নিজের খাসতালুকে যাঁকে হারানোর কথা ভাবাও কঠিন। তার উপর স্থানীয় বিজেপি কর্মীরাও সিদ্ধার্থশেখরকে চাইছেন না। প্রার্থী পাল্টানোর আর্জি নিয়ে তাঁরা ইতিমধ্যে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে চিঠিও দিয়েছেন। তাঁর হাল তবে কী হবে? নবদ্বীপের দক্ষিণ প্রান্তে নিজের বাড়িতে বসে সিদ্ধার্থশেখর বলেন, “যতটুকু জানি, এই প্রথম কোনও কীর্তনিয়া লোকসভা নির্বাচনে দাঁড়াচ্ছেন। তমলুকের মানুষ খুব খুশি। ওখানকার বিজেপি কর্মীরাও। যারা ক্ষোভ দেখাচ্ছে, তারা সব আসলে তৃণমূলের লোক!”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE