প্রতীকী চিত্র
ফোনটা এল বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে। আর, রিনরিন করে মোবাইলে সেই চেনা ডাক যেন এক দুপুরেই মধুপুর গ্রামের নিঝুম হয়ে থাকা বাড়িতে ফিরিয়ে দিল স্বস্তির বৃষ্টি। উনুনে আঁচ পড়ল বাড়িতে।
আইটিবিপি’র কর্মী, লাদাখ সীমান্তে কর্রত রূপচাঁদ শেখ জানালেন, ভাল আছেন তিনি। তবে পাহাড়ের উপরে সীমান্তের গায়ে যেন থমকে আছে যুদ্ধ। যে কোনও সময়ে আবার লড়াইয়ের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়বে।
দিন সাতেক আগে রূপচাঁদের সঙ্গে শেষবার কথা হয়েছিল পরিবারের। সাধারনত, দিন পনেরোয় একবার ফোন করার সুযোগ পান তিনি। তবে, সীমান্তের তপ্ত হাওয়া যে তাঁর সুদূর গ্রাম নওদার মধুপুরেও ছড়িয়ে পড়বে, তাঁর ভরা সংসার দুশ্চিন্তায় ডুবে যাবে, তা আঁচ করেই এ দিন ফের ফোনে জানান তিনি— ভাল আছে।
তাঁর বাবা খোশ মহম্মদ বলছেন, ‘‘সত্যি ওই এগডা কথায় যেন কলিজায় প্রাণ এল!’’
তবে পরিবারের কাছে তিনি রেখে দিয়েছেন সেই অমোঘ সত্যি কথাটাটিও, পরিস্থিতি বুঝে তাঁকেও হয়ত পাহাড়ের উপরে সীমান্তে যেতে হবে অচিরেই।
দিন ছয়েক আগে যখন শেষবার ফোন করেছিলেন তিনি, তখনই জানা গিয়েছিল পরিস্থিতি বড় তেতে রয়েছে। তার পরেই যুদ্ধ-হনননের খবর। সেই থেকে মধুপুরের বাড়িতে সবার থুৎনি যেন ঠেকে গিয়েছিল বুকে। মাথা নত করে তাঁরা দুঃসংবাদ হাতড়ে যাচ্ছিলেন। তবে এ দিন তাঁর স্ত্রী সোনিয়া বলেন, ‘‘যাই হোক ও যে আছে, এখবপেই মনে হল আবার সুদিন ফিরবে।’’
বৃহস্পতিবার সকালে ক্যাম্প থেকে ফোন করে রূপচাঁদ প্রায় মিনিট সাতেক কথা বলেন। কথা হয়, বাবা-মা-স্ত্রী এমনকি কাকার সঙ্গেও।খোস মহম্মদ বলছেন, ‘‘ছেলে সাত বছর আগে আধাসেনায় চাকরি পেয়েছে। দুবছর ধরে লাদাখেই আছে। আসামে তার পোস্টিং হয়েছে সদ্য। কিন্তু লকডাউনের কারনে সে লাদাখ থেকে নামতেই পারেনি। তার মাঝেই এই কাণ্ড। আল্লার রহমতে ছেলে যেন ভালো ভাবে ফিরে আসে।’’ তাঁর চোখের কোণ চিকচিক করে ওঠে। মা হারমিনা বিবি বলছেন, ‘‘যুদ্ধের কথা শুনে দু’দিন নাওয়াখাওয়া পর্যন্ত ভুলে গেছিলাম। ছেলের সাথে কথা বলার পর শান্তি পেলাম। মনে হচ্ছে আল্লাহ মুখ তুলে চাইলেন।’’ তবে রূপচাঁদের স্ত্রী সোনিয়া বিবি এ দিনও বলেন, ‘‘ভয় তো করছেই। কী হয় কে জানে। তবে একটা চাপা গুমর রয়েছে। বুক পেতে দাঁড়িয়ে আছে তো!’’
কোথায় যে লাদাখ, তা জানেনই না এলাকার অনেকে। অনেকে নাম পর্যন্ত শোনেননি। কিন্তু এই দু’দিনে সারা অঞ্চলটাই জেনে গিয়েছে লাদাখের কথা। লাদাখের ছবি দেখা হয়ে গিয়েছে অনেকের। আনলক পর্বে বাজারে হাটে বেরোচ্ছেন অনেকে। তাঁরা খোঁজ নিচ্ছেন, কোথাও কোনও গ্রামের ছেলে লাদাখে রয়েছেন কি না। যুদ্ধে কার কোল খালি হবে, সেই আতঙ্ক যেন চেপে বসেছে। এর মধ্যেই একটি ফোনে জীবন ফিরে পেল একটি পরিবার। সারা পাড়াই আবার দৈনন্দিনে ফিরছে আস্তে আস্তে। কিন্তু আতঙ্ক যায় না, অনেকেই যে রয়েছেন বহু দূরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy