Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
গুন্ডা বাইক

ধরা পড়লে ভরসা ফোন

কর্তব্যরত পুলিশ অফিসারও নাছোড়। আচমকা পকেট থেকে লম্বা ফোন বের করে সে ধরিয়ে দিতে চায় অফিসারের হাতে। নেতার নাম শুনে তিনি কথা বলতে বাধ্য হন। জরিমানা ছাড়াই ছেড়ে দিতে হয় বাইক। 

ধাক্কা থেকে বচসা। শুক্রবার কৃষ্ণনগরে। নিজস্ব চিত্র

ধাক্কা থেকে বচসা। শুক্রবার কৃষ্ণনগরে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:৩৯
Share: Save:

জাতীয় সড়কে নাকা চেকিং চলছে। জরিমানা আদায়ও। দূর থেকে তা দেখেই মোটরবাইক ঘুরিয়ে পিঠটান দেওয়ার চেষ্টা করেন বছর বাইশের এক যুবক। দৌড়ে গিয়ে ধরেন এক সিভিক ভল্যান্টিয়ার। কিন্তু যুবকটি জরিমানা দিতে নারাজ। কেনই বা দেবে? নেতার আত্মীয় যে!

কর্তব্যরত পুলিশ অফিসারও নাছোড়। আচমকা পকেট থেকে লম্বা ফোন বের করে সে ধরিয়ে দিতে চায় অফিসারের হাতে। নেতার নাম শুনে তিনি কথা বলতে বাধ্য হন। জরিমানা ছাড়াই ছেড়ে দিতে হয় বাইক।

৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক হোক বা রাজ্য সড়ক, গ্রাম হোক বা শহর, সর্বত্রই একই অবস্থা। গত কয়েক মাস ধরেই জেলার নানা প্রান্তে নাকা চেকিং করছে পুলিশ। কিন্তু বেপরোয়া বাইক রোখা যাচ্ছে না। মোটরবাইক দুর্ঘটনাও ঘটেই চলেছে। পুলিশেরই একাংশ বলছেন, রাজনৈতিক নেতা থেকে প্রশাসনের পদস্থেরা হস্তক্ষেপ বন্ধ না করলে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।

অন্য দিকও আছে। বেপরোয়া বাইক আরোহীরাও জানে, কোথায় কোথায় পুলিশ পাহারা থাকে। তার কাছাকাছি এসে তারা সাবধান হয়ে যাচ্ছে। আর ফাঁকা জায়গায় ডানা মেলে উড়ছে। পুলিশের পক্ষে সব জায়গায় টহল দেওয়া সম্ভব নয়। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের বিস্তীর্ণ এলাকায় টহল থাকে না। থাকে না চেকিংও। সেখানে তো বেপরোয়া বাইকের পোয়াবারো। এক বাইক আরোহীর কথায়, “মাঝে-মধ্যে ধরপাকড়, চেকিং হয়। এ নিয়ে ভাবার কিছু নেই। দু-চার দিন পরে আবার সব বন্ধ। আপাতত একটু সামলে থাকতে হবে, এই যা!”

জেলার পুলিশের কর্তাদের একটা অংশের দাবি, দীর্ঘদিনের এই বদভ্যাস ক’দিনের মধ্যে একা পুলিশের পক্ষে পালটে দেওয়া সম্ভব নয়। তার জন্য সার্বিক সচেতনতা চাই। জেলার পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলছেন, “বেপরোয়া বাইক চালানো রুখতে আমরা আইনি পদক্ষেপ করছি। জরিমানা করা হচ্ছে। প্রচারও চলছে। সব রকম ভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে।”

তৃণমূলের নদিয়া জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী নিজেই ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ স্লোগান দিয়ে মানুষকে সচেতন করতে চাইছেন। কে কী বলছেন, জানি না। আমাদের দলে এক জনই নেতা, তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বিষয়ে বাকি কারও কথা বলার এক্তিয়ারই নেই।’’ তা হলে নেতারা যে পুলিশকে ধমকে অপরাধী ছাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছেন? গৌরীর দাবি, ‘‘কোনও নেতার কথায় পুলিশের কর্ণপাত করার প্রয়োজন নেই। পুলিশের যা কাজ, করুক।”

শুনতে ভাল। কথায় আর কাজে ফারাক না থাকলেই মঙ্গল!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE