অনেকে বলেন—‘ইয়ে!
আর হাসপাতালের কর্মীরা বলছেন, ‘উফ্!’
কেন, উফ্ কি এখন ইয়ে-র থেকেও বেশি ‘স্মার্ট’?
জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বেজার মুখে বলছেন, ‘‘আর বলবেন না মশাই! কাকভোরে লোকজনের পিছনে ছুটে, পোস্টার-ফেস্টুন ঝুলিয়ে, নাগাড়ে প্রচার করে, জরিমানার ভয় দেখিয়ে বহু কষ্টে মাঠেঘাটে যাওয়া বন্ধ করা হয়েছে। এখন যদি শারীরশিক্ষার ক্লাস নেওয়ার মতো ইয়ে করাটাও শেখাতে হয়, তাহলে তো খুব মুশকিল!’’ যা শুনে সাগরদিঘি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে আসা এক রোগী গর্জে উঠছেন, ‘‘ওঁরা কোথায়, মুশকিলে তো পড়েছি আমরা!’’
কথাটা ভুল নয়। নদিয়া মুর্শিদাবাদের বেশ কিছু হাসপাতালে নতুন ভবন তৈরি হয়েছে। কিছু হাসপাতালকে সুপার স্পেশ্যালিটি করা হয়েছে। বহু জায়গায় পুরনো শৌচাগার সরিয়ে বসানো হয়েছে কমোড। আর হাসপাতালে আসা রোগী ও তাঁদের আত্মীয়দের অনেকেরই সমস্যার মূলে সেটাই। কারণটা আর কিছু নয়, অনভ্যাস।
তাঁরা জানাচ্ছেন, কী বিপদ বলুন তো? জোর বেগ পেয়েছে। কোনও মতে ছুটেছেন শৌচাগারে। কিন্তু বুঝতেই পারছেন না, ইয়েটা তাঁরা করবেন কোথায়? কী দরকার ছিল এমন করার। সাধারণ লোকজনের কথা মাথায় রেখে শৌচাগারটা সাধারণ রাখলেই তো সুবিধা হত। বিপাকে হাসপাতালের কর্মীরাও। ঝকঝকে শৌচাগারে ঢুকেই ছিটকে বেরিয়ে এসে ফিসফিস করে কেউ জানতে চাইছেন, ‘‘ইয়েটা করব কোথায়?’’ ভাল ভাবে বুঝিয়ে দেওয়ার পরেও শৌচাগারের যা চেহারা হচ্ছে সেখানে আর কেউ ঢুকতে পারছেন না। কোথাও নোংরা হয়ে থাকছে শৌচাগারের মেঝে। কোথাও আবার কমোডের মধ্যে পড়ে থাকছে মাংসের হাড়, মাছের কাঁটা, উচ্ছিষ্ট। যা দেখে ডোমকল হাসপাতালের এক সাফাইকর্মী বলছেন, ‘‘শৌচাগারের যা হাল হয়ে থাকছে, ঢোকার উপায় থাকছে না!’’
শেষতক উদ্যোগী হয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। কী ভাবে কমোড ব্যবহার করতে হয়, সে বিষয়ে ভিডিও তৈরি করেছে তারা। ইতিমধ্যে সাগরদিঘি হাসপাতালে সেই ভিডিও দেখানোও হচ্ছে। ডোমকল হাসপাতালের নার্স থেকে শুরু করে হাসপাতালের কর্মীরা রোগী ও তাঁদের আত্মীয়দের কমোড কী ভাবে ব্যবহার করতে হয় তা বুঝিয়ে দিচ্ছেন। মুর্শিদাবাদের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিরুপম বিশ্বাস বলছেন, ‘‘কমোড ব্যবহার করতে অনেকের অসুবিধা হওয়ার কারণেই ভিডিও তৈরি করে তা দেখানো হচ্ছে।’’
সাগরদিঘি হাসপাতালের এক রোগী বলছেন, ‘‘পায়ে অসহ্য যন্ত্রণা। বসতে পারছি না। এর মধ্যে একদিন শৌচাগারে ঢুকে বুঝতেই পারিনি, কোথায় ত্যাগ করতে হবে। পরে ভিডিও দেখে বুঝলাম কমোডে ঢাকনা দেওয়া ছিল। এখন অবশ্য সড়গড় হয়ে গিয়েছি। এটাও বুঝেছি, হাসপাতালে অসুস্থ লোকজনের জন্য কমোডটাই বেশি ভাল। শুধু এক বার শিখে নিতে হবে।’’ যা শুনে পাশের শয্যার এক বৃদ্ধ হাসতে হাসতে বলছেন, ‘‘শেখার কী আর শেষ আছে রে ভাই! এই বয়সে ইয়ে করাও শিখতে হচ্ছে!’’
অঙ্কন: সুমন চৌধুরী
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy