Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

লাটাইয়ে স্বপ্ন ওড়াতে শেখাচ্ছেন ঘুড়ি-বুড়ো

রানাঘাটের নাসরার কয়েকটি পরিবার দীর্ঘ দিন ধরে পুরুষানুক্রমে ঘুড়ির ব্যবসা করছেন। তাঁদেরই একজন নিত্যানন্দবাবু। স্কুলে পড়ার সময়ে মাত্র ১৫ বছর বয়সে ঘুড়ি তৈরি করতে শিখেছিলেন।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

সৌমিত্র সিকদার
রানাঘাট শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৬:৫০
Share: Save:

সবুজ ঘাসে ভরা মাঠ। এক পশলা বৃষ্টির পরে চকচক করছে। বছরখানেক আগেও সেই মাঠের দিকে তাকিয়ে থাকতেন বৃদ্ধ নিত্যানন্দ দাস। বিকেল নামলেই মাঠে ভিড় নামত। শীতে ক্রিকেট, বাকি সময় ফুটবল।

কিন্তু বছর কয়েক ধরে সেই ভিড়টা পাতলা হয়ে গিয়েছিল। তবে মাঠের মাঝে জটলা একটা ছিল। তবে বল নয়, তাদের হাতে স্মার্ট ফোন। নানান খেলায় মজে থাকত তারা। সেই ভিড়টাকে ফের মাঠে ফিরিয়ে এনেছেন রানাঘাট নাসরার সত্তরোর্ধ্ব নিত্যানন্দবাবু। না, কোনও মন্ত্রবলে নয়। তাঁদের হাতে ধরিয়ে দিয়েছেন লাটাই। লাটাই থেকে মাঝ আকাশে উড়ে বেড়ায় কচি-কাঁচাদের স্বপ্ন। অভিজ্ঞ হাতে তিনি শেখান পেটকাঠি, চাঁদিয়াল, মোমবাতি নামক স্বপ্নগুলো যাতে গোঁত্তা খেয়ে মুখ থুবড়ে না পড়ে। ঘুড়ির টানে মোবাইলও সরিয়ে রাখছে এলাকার নয়া প্রজন্ম। ঘুড়ি না উড়লে ফের ফুটবল-ক্রিকেটেই মজছে তারা।

রানাঘাটের নাসরার কয়েকটি পরিবার দীর্ঘ দিন ধরে পুরুষানুক্রমে ঘুড়ির ব্যবসা করছেন। তাঁদেরই একজন নিত্যানন্দবাবু। স্কুলে পড়ার সময়ে মাত্র ১৫ বছর বয়সে ঘুড়ি তৈরি করতে শিখেছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘এক দিন মাঠে বসেছিলাম। একটা বিশাল ঘুড়ি আমার সামনে মধ্যে এসে পড়ে। সেই ঘুড়িটি খুলে তৈরির কৌশল শি‌খি। পাঁট টাকার কাঁচামাল কিনে দশ টাকা লাভ হয়। সেই শুরু। ঘুড়ির নেশা আজও ছাড়তে পারিনি।’’ তিনি বলেন, ‘‘পরে অনেকে আমার কাছে কাজ শিখেছে। সব সময় ব্যবসা সমান চলে না। তাই, পাশাপাশি দর্জির কাজও করতে হয়।”

নিত্যানন্দবাবু জানান, এক সময় ঘুড়ির চাহিদা ছিল ব্যাপক। সারা বছর ঘুড়ি বিক্রি হত। ছর পনেরো আগে থেকে তাতে ভাটা পড়ে। ঘুড়ির বাজার পড়ে যায়। তাঁরা সারা বছর ঘুড়ি তৈরি করেন। সেই ঘুড়ি বাইরের রাজ্যেও পাঠানো হয়। এক সময় কাগজের বদলে এল প্লাস্টিকের ঘুড়ি। তখন তারই চাহিদা। মন সায় দেয়নি। ব্যবসার খাতিরে তাও তৈরি করছেন। ‘‘তবে বছর কয়েক ধরে ফের কাগজের ঘুড়ির চাহিদা বাড়ছে,’’ বলতে বলতে চোখ চকচক করে ওঠে বৃদ্ধের।

কলেজ পড়ুয়া শুভাশিস দেবনাথ বলেন, ‘‘দাদু এক দিন আমাদের ডাকলেন। বললেন, ‘তোরা মোবাইলে কী দেখিস’? কয়েকটা গেম দেখালাম। বললেন, ‘ওতে তোদের কৃতিত্ব কী। কেউ তোদের বোকা বানাচ্ছে। নিজেরা গেম তৈরি কর না’। তিনি ঘুড়ি তৈরি করা শেখালেন। আমরা ঘুড়ি তৈরি করি। যখন আকাশে সেই ঘুড়ি ওড়ে, তার আনন্দই আলাদা।’’ পাশে বসে হাসেন নিত্যানন্দ — লাটাই থেকে স্বপ্নেরা দূর আকাশে পাড়ি দিয়েছে যে।

অন্য বিষয়গুলি:

Ranaghat Kite business Kite রানাঘাট
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE