Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪
পাট, তিল, পান-ও ধ্বংস
Coronavirus Lockdown

ফলের গাছ নষ্ট, ফুলের সর্বনাশ

তেহট্ট মহকুমার প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ জমিতে পাট, ত্রিশ শতাংশতে কলা ও বাকি জমিতে বিভিন্ন আনাজ ও পান চাষ হয়।

জলে ভেসে গিয়েছে ধানের খেত। —নিজস্ব চিত্র

জলে ভেসে গিয়েছে ধানের খেত। —নিজস্ব চিত্র

কল্লোল প্রামাণিক
শেষ আপডেট: ২২ মে ২০২০ ০৩:১১
Share: Save:

কলাবাগান মুখ থুবড়ে পড়েছে। পাট গাছের মাথা ভেঙে নুয়ে গিয়েছে। পানের বরজ, শসা-উচ্ছে-ঝিঙের মাচা স্রেফ গুঁড়িয়ে মাটিতে কার্যত মিশে গিয়েছে।

বুধবার রাতের আমপানের দাপটে নদিয়া জেলায় ঘর বাড়ি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগগ্রস্ত না হলেও ফসলের চরম ক্ষতি হয়েছে। বিশেষত এখন মরসুমের পাট, কলা, পেঁপে, পান ও অনাজ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। গত দুই মাসের লকডাউনে চাষিরা এমনিতেই আর্থিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন। তাঁদের আরও সর্বনাশ করেছে এই আমপান।

তেহট্ট মহকুমার প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ জমিতে পাট, ত্রিশ শতাংশতে কলা ও বাকি জমিতে বিভিন্ন আনাজ ও পান চাষ হয়। গোয়াস গ্রামের এক কলা চাষি বাসুদেব বিশ্বাস জানান, তাঁর ১২ কাঠা জমিতে ২০০র বেশি কলা গাছ ছিল। মাসখানেক আগে কালবৈশাখী ঝড়ে ৫০টি গাছ নষ্ট হয়েছিল। তার পর আমপানে এমন ক্ষতি হবে তিনি কল্পনা করতে পারেননি। আসলে অনেক চাষিই বুঝতে পারেননি যে, এই জেলাতেও আমপানে এতটা ক্ষতি হবে। এলাকার কয়েক হাজার কলা চাষির এখন মাথায় হাত।

নাজিরপুরের কলা চাষি রফিকুল মন্ডলের সাড়ে তিন বিঘা জমিতে প্রায় তেরোশো কলা গাছের প্রতিটি ভেঙে পড়েছে। কিছুই অবশিষ্ট নেই। সেই কলার বাজারদর ছিল, এক লক্ষ সত্তর হাজার টাকা। শান্তিপুরের ফুলিয়া টাউনশিপ গ্রাম পঞ্চায়েতের কৃষিপল্লি এলাকার বাসিন্দারা প্রত্যেকেই মোটামুটিভাবে ধান, ফুল চাষের পাশাপাশি নিজের জমিতে কলা চাষ করেন। রাতে ঝড়ের তাণ্ডবের পর সকালে মাঠে এসে দেখেন, সব শেষ। স্থানীয় বাসিন্দা সমীর ব্যাপারি ৫ বিঘা জমিতে কলা চাষ করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘আমার প্রায় ৫০০-র মতো গাছ নষ্ট হয়ে গেল। প্রচুর টাকার কলা ছিল। এখন এই ক্ষতি পূরণ হবে কী করে জানি না। "

কিছু চাষি ঝড়ের আগে বোরো ধান ঘরে তুলতে পারলেও অনেকেরই পাকা ধান জমিতে ছিল। সপ্তাহ খানেক বাদে তা কাটার কথা। তার আগেই ঝড় সব ধান গাছ থেকে ফেলে দিয়েছে। জমিতে জল থই থই করছে। কয়েক দিন জল জমে থাকলে ধানে পচন ধরবে।

পাট চাষও অসম্ভব ধাক্কা খেয়েছে। বৃষ্টিতে পাটের জমিতে জল জমে মাটি নরম হয়ে গিয়েছে। তার পর প্রবল ঝড়ে মাঠের পাট জমিতে শুয়ে পড়েছে। পাট গাছের মাথার দিকের কাণ্ড বেঁকে গিয়েছে। জমিতে জল জমে থাকলে পাট গাছের গোড়া থেকে দু’চার দিনেই শিকড় বের হবে। এতে ফলন অনেক কমে যাবে।

পান বরজে কোথাও বেড়া ভেঙেছে আবার কোথাও গোটা বরজের প্রায় সব পানের লতা ছিঁড়ে গিয়েছে। ভুবন মজুমদার নামে এক পানচাষির কথায়, ‘‘দুই চব্বিশ পরগনা ও মেদিনীপুরে আমপান ঝড়ের প্রভাব পড়বে বলে জেনেছিলাম। কিন্তু আমাদের এলাকায় যে এত ঝড় হবে এবং এ ভাবে চাষের ক্ষতি হতে পারে তা কেউ আগে থেকে জানাননি।’’

নাকাশিপাড়ার দহখোলা এলাকায় অনেকেই পলিহাউসে ফুল চাষ করছিলেন। ঝড়ে পলি হাউসের পলিথিন উড়ে গিয়েছে, স্টিলের পাইপ বেঁকে গেছে। সরসরি পলিহাউসের ভিতরে জল ঢুকে গাছেরও ক্ষতি করেছে। কালীগঞ্জ-সহ জেলার বিভিন্ন জায়গায় তিল, কলা, পেয়ারা চাষের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। সর্বনাশ হয়েছে ফুলচাষিদেরও। ফুলের প্রধান জায়গা হল রানাঘাট। সেখানে অনেক বাগানে রজনীগন্ধার ডাঁটি মাটিতে নুইয়ে ভেঙে গিয়েছে। গাঁদা, গোলাপ পচতে শুরু করেছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Lockdown Cyclone Amphan Cyclone
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy