— প্রতীকী চিত্র।
চিকিৎসকের কাছে গিয়ে বলেছিলেন, পেটে প্রচণ্ড ব্যথা। ভর্তি করানো হয়েছিল হাসপাতালে। মেয়ের দেখভালের জন্য ২৪ ঘণ্টা হাসপাতালেই ছিলেন পরিযায়ী শ্রমিক বাবা। হাসপাতাল থেকে মেয়ে ছাড়া পাওয়ার পর তাঁকে নিয়ে বাড়ি ফেরেন বাবা। কিন্তু, বাড়িতে ঢুকেই চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করেন দু’জন। প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। সবাই প্রায় হতভম্ব। লন্ডভন্ড ঘর, মেঝেতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল গৃহকর্ত্রীর দেহ। প্রাথমিক ভাবে উঠে আসে ডাকাতির তত্ত্ব। মেয়ে দাবি করেন, ডাকাতি করতে এসে তাঁর মাকে খুন করা হয়েছে। কিন্তু, তদন্ত নেমেই খটকা লাগে পুলিশের। বাবা-মেয়ে, দু’জনের কথাবার্তাই অসংলগ্ন ঠেকে তাদের কাছে। দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই চাঞ্চল্যকর তথ্য পেল পুলিশ। গৃহকর্ত্রীকে খুনের অভিযোগে তাঁর স্বামী এবং মেয়েকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে খবর, গত বুধবার নদিয়ার পলাশিপাড়ার ঈশ্বরচন্দ্রপুর মাঠপাড়া এলাকায় বাড়ি থেকে এক মহিলার রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয়। মৃতার নাম চামেলি বিশ্বাস। ২৩ বছর আগে তাঁর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল শ্যামল বিশ্বাসের। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই দু’জনের দাম্পত্যকলহ চলছিল। পারিবারিক অশান্তি এড়াতেই নাকি দীর্ঘ দিন ধরে ভিন্রাজ্যে কাজ করতেন শ্যামল। চামেলির কাছে থাকতেন তাঁদের একমাত্র সন্তান শাঁওলি। এর মধ্যে চামেলি নাকি একাধিক বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের আরও অবনতি হয়।
পুলিশি তদন্তে উঠে আসে গত ৩ অগস্ট তাঁর ‘পরকীয়া সম্পর্ক’ নিয়ে প্রতিবাদ করায় মেয়েকে মারধর করেন চামেলি। সঙ্গে সঙ্গে ফোন করে সে কথা বাবাকে জানান শাঁওলি। শ্যামল ওই কথা শোনার পরে গত সোমবার বাড়ি ফেরেন। মঙ্গলবার সকালে এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রী মধ্যে আবার ঝগড়া হয়। চামেলি স্বামী এবং মেয়ে, দু’জনকেই মারধর করেন বলে অভিযোগ। তখনই বাবা-মেয়ে চামেলির মাথায় ভারী বস্তু দিয়ে আঘাত করেন বলে অভিযোগ। রক্তাক্ত অবস্থায় চামেলিকে ঘরের মেঝেতে দীর্ঘ ক্ষণ পড়ে থাকেন। সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর। তার পরেই নিজেদের অপরাধ ঢাকতে ডাকাতির গল্প সাজান বাবা-মেয়ে। ঘরের আলমারি খুলে জিনিসপত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দেন। টাকাপয়সা, গয়না ইত্যাদি মূল্যবান জিনিস যা কিছু ছিল, তা অন্যত্র সরিয়ে দেন তাঁরা। তার পর মেয়েকে নিয়ে তেহট্ট মহকুমা হাসপাতালে যান শ্যামল। অসুখের বাহানা দিয়ে এক দিন তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করান। বুধবার সকালে দু’জনে বাড়ি ফিরে আর্তনাদ শুরু করেন। বেশ কিছু তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে শাঁওলি এবং তাঁর বাবাকে শনিবার গ্রেফতার করে পুলিশ। জানা গিয়েছে, মাকে পরিকল্পনা করে খুনের কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করে নিয়েছেন মেয়ে। এই ঘটনা প্রসঙ্গে তেহট্ট মহকুমা পুলিশ আধিকারিক শুভতোষ সরকার বলেন, ‘‘খুনের ঘটনায় মহিলার স্বামী ও মেয়েকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের জেরা করে খুনে ব্যবহৃত জিনিস কোথায় লুকিয়ে রাখা আছে, তার খোঁজ করা হচ্ছে।’’ এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে ওই এলাকায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy