পয়লা বৈশাখের হালখাতায় ঘটতে দেখা যাচ্ছে আমূল পরিবর্তন। কারও পৌষ মাস, তো সর্বনাশ মিষ্টি ব্যাপারিদের। মিষ্টির চাহিদা একেবারে নিম্নে। বরাত কম দোকানগুলিতে। তবে আশ্চর্যজনক ভাবে বেড়েছে শুকনো খাবারের চাহিদা ও সাথে ঠান্ডা পানীয়ের।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিবছর বাংলা বছরের প্রথম দিনে পুজো দিয়ে উদযাপন করা হয়। সাজানো হয় দোকান। বিশেষ আকর্ষণের জন্য রঙের আলোর ব্যবস্থা করা হয়। শুধু তাই নয়, দুপুর থেকেই শুরু হয় হালখাতা। আসলে বাকি হিসাব তথা ধার বাকি মিটিয়ে দোকানে নতুন খাতায় লেখা শুরু হয়। যে কারণে এই দিনটির প্রায় সপ্তাহ খানেক আগে সংশ্লিষ্ট দোকানের ক্রেতাদের কার্ড দিয়ে আমন্ত্রণ করে আসার রেওয়াজও বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়। নির্দিষ্ট দিনে ক্রেতারা বাকি মেটানোর পরে তাদের জন্য ক্যালেন্ডার ও মিষ্টির প্যাকেট দেওয়ার রীতিও লক্ষ্য করা গিয়েছে।
কিন্তু এখন পয়লা বৈশাখ বা হালখাতার প্রতি আবেগ অনেকটাই কমেছে, পাশাপাশি কমেছে রীতিও। মিষ্টির দোকান ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গিয়েছে, এই সব দিনে নানা ধরনের মিষ্টির বরাত মেলে অধিকাংশ দোকান থেকেই। আর তা প্রস্তুত করতে কালঘাম ছুটত দোকানের কর্মীদের। রসগোল্লা, পান্তুয়া, চমচম, সন্দেশ কি থাকত না প্যাকেটে! কিন্তু আগের বছর থেকে এই রীতির প্রচলন কমেছে। বহু ক্ষেত্রে সেই জায়গা দখল করেছে ফাস্ট ফুড।
শ্যামনগরের বিজন ঘোষ, তরণীপুরের কেশব মোদক বলেন, “এক একটি বড় দোকানে হাজার হাজার মিষ্টির বরাত হত। এ রকম কুড়ি পঁচিশটি দোকানের বরাত পাওয়া যেত। গত বছরেও সংখ্যাটা দশ ছিল। তবে বছর ঘুরতেই সেই বরাতের সংখ্যা অর্ধেক হয়ে গিয়েছে।” বেতাইয়ের মিহির বসাক বলেন, “এ বার সেই আবেগ চোখে পড়ছে না। মিষ্টির বরাতও নেই। এ এক দুশ্চিন্তার বিষয়।”
তবে চাহিদা হুড়মুড়িয়ে বেড়েছে শুকনো খাবার থেকে ঠান্ডা পানীয়ের। মিষ্টির পরিবর্তে যে ওই সব খাবারের বরাত বাড়ছে তা অনায়াসে স্বীকার করেছেন ফাস্ট ফুড বিক্রেতারা। তেহট্টের শুভঙ্কর আচার্য, বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “একাধিক দোকানের বরাত মিলেছে প্রায় তিন সপ্তাহ আগে। আজকেই দোকানগুলিতে পৌঁছাতে হবে। লাড্ডু, সোনপাপড়ির সরাসরি প্যাকেটের বরাত ও মিলেছে প্রচুর। আবার অনেক দোকান শুকনো খাবার মিলে মিশিয়ে প্যাকেটের বরাতও দিয়েছে।” অতিথি আপ্যায়নের ক্ষেত্রেও রেওয়াজ পাল্টেছে। ‘ওয়েলকাম ড্রিংক্স’ হিসেবে সরবত বা ঠান্ডা পানীয় দেওয়ার রেওয়াজ শুরু হয়েছে অনেক আগেই। তবে এবারেও তার চাহিদা তুঙ্গে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)