ফি বছর দিনটি ঘটা করে পালন করা হলেও দিন বদলায় না এঁদের। করিমপুরে। ছবি: কল্লোল প্রামাণিক
বছর পঁচিশের রুবি খাতুন। জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী। হাঁটাচলা করতে ভরসা ক্র্যাচ বা ট্রাই সাইকেল। কিন্তু স্কুলের দোতলায় তাঁকে ক্লাস করতে যেতে হয় সিঁড়ি ভেঙে। কারণ, উপায় নেই। বহরমপুর শহরের মাঝেরপাড়া কুমারেশ চন্দ্র হাইস্কুলের নবম শ্রেণির পড়ুয়া রুবি বলছেন, ‘‘আমাদের ক্লাস দোতলায়। সিঁড়ি ভাঙতে খুবই কষ্ট হয়।” করিমপুর কলেজপাড়ার অনুপ সরকারও প্রতিবন্ধী। তাঁরও ভরসা ট্রাইসাইকেল। অনুপ বলছেন, ‘‘শৌচাগার নিয়ে এত হইচই! অথচ আমাদের উপযুক্ত শৌচাগার নেই।’’
বহরমপুরের চালতিয়ার অভিজিৎ বিশ্বাস ৭০ শতাংশ প্রতিবন্ধী। তিনি মুক্ত বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন। তাঁর অভিযোগ, বাস ও ট্রেনে প্রতিবন্ধীদের বসার জন্য আসন থাকে। কিন্তু অনেক সময় সেই আসন অন্যেরা দখল করে বসে থাকেন। প্রতিবন্ধীরা বসার সুযোগ পান না। কিছু বলতে গেলে শুনতে হয়, ‘সত্যিই প্রতিবন্ধী তো? নাকি সিট পাওয়ার জন্য নাটক করছেন?’
নদিয়া-মুর্শিদাবাদে এ ছবি নিত্য দিনের। নিয়ম হচ্ছে, স্কুলে প্রতিবন্ধী থাকলে তাঁদের জন্য সব রকম ব্যবস্থা থাকার কথা। কিন্তু বহু স্কুল-কলেজে তা কেবল কথার কথা। নদিয়া বছর তিনেক আগেই উন্মুক্ত শৌচবিহীন জেলা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। রাস্তার পাশে বহু শৌচালয়ও তৈরি করা হয়েছে। মুর্শিদাবাদও উন্মুক্ত শৌচহীন জেলার দোরগোড়ায়। অথচ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রতিবন্ধীদের কথা কেউ বিশেষ মনে রাখেনি।
ট্রেনে বাসে প্রতিবন্ধীর জন্য আসন বরাদ্দ থাকার কথা। কিন্তু পিঠোপিঠি দুই জেলায় বাস-ট্রেনে অনেক সময় প্রতিবন্ধীরা দাঁড়িয়ে যান। সেই আসনে বসে থাকেন সাধারণ যাত্রীরা। রানাঘাট ২ ব্লকে রঘুনাথপুরের দৃষ্টিহীন মনোজিৎ মণ্ডল এম ফিল করেছেন। এ বারে তিনি গবেষণার জন্য প্রস্তুত। মনোজিৎ বলছেন, ‘‘নদিয়া-মুর্শিদাবাদে দৃষ্টিহীন জন্য যে স্কুল রয়েছে, সেখানে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়া যায়। তার পরে কলকাতা বা সাধারণ স্কুলে ভর্তি হতে হয়। দৃষ্টিহীনদের জন্য জেলায় উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত স্কুল হলে ভাল হয়। তা ছাড়া অনেক প্রতিবন্ধী নানা কারণে সরকারি সুযোগ সুবিধাগুলি পান না। সে ব্যাপারে প্রশাসন একটু নজর দিলে ভাল হয়।’’ নদিয়া জেলা বাস মালিক সমিতির সম্পাদক অশোক ঘোষ বলছেন, “ফিটনেস সার্টিফিকেট ও রেজিস্ট্রেশন নেওয়ার সময় বাসে প্রতিবন্ধীদের জন্য আসন বরাদ্দ করা আছে কি না তা পরিবহণ দফতরের কর্তারা দেখেন। সেই মতো আসনও বরাদ্দ করা হয়।” কিন্তু সেই বরাদ্দ আসনে কি প্রতিবন্ধীরা বসতে পারেন? অশোকবাবুর কথায়, ‘‘আমরা সবসময় বলি, প্রতিবন্ধীদের আসন দখল করে বসা অন্যায়। ফের বিষয়টি প্রচারের পাশাপাশি নোটিস দিয়েও জানানো হবে। প্রতিবন্ধীদের আসনে যাতে অন্য কেউ না বসেন সে ব্যাপারে বাসের কর্মীদেরও কড়া নজর রাখতে বলেছি।’’
নদিয়ার জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত বলছেন, “স্কুল-কলেজ, অফিসে ঢালু পথ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সব জায়গায় তা থাকারও কথা। আমরা জেলায় ফের সমীক্ষা চালিয়ে দেখে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেব। ’’ মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক পি উলগানাথন বলছেন, “যেখানে তা নেই সেগুলো চিহ্নিত করে তৈরি করে দেওয়া হবে। বাসে প্রতিবন্ধীদের আসন ও ভাড়া ছাড়ের বিষয়টি আলোচনা করে দেখা হবে।’’
যা শুনে নদিয়ার এক দৃষ্টিহীন বলছেন, ‘‘প্রতি বছর এই দিনটাতে নানা প্রতিশ্রুতির কথা শুনি। অপেক্ষা করতে করতে ফের এসে পড়ে আরও একটা বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy