বাড়িতে স্বামীর সঙ্গে চন্দনা। নিজস্ব চিত্র
ভিড়ট চাক বেঁধে আছে। শনিবার, ছুটির সকালে, প্রতিবেশী থেকে পড়শি গ্রাম— সকলেই এক বার ঢুঁ মেরে যাচ্ছেন করিমপুরের বাথানপাড়ায়। ভাদুড়ি বাড়ির সামনে সেই জটলায় মাথা গলালে কানে আসছে, ‘চেহারাটা একরকম আছে দেখেছিস!’
শুক্রবার রাতে, আট বছর পরে ঘরে ফিরেছেন পরিতোষ ভাদুড়ির হারানো স্ত্রী। ২০১০ সালের ১লা বৈশাখ সকালে আচমকা উধাও হয়ে গিয়েছিলেন চন্দনা। পড়শিরা বলছেন, ‘‘মাথাটা ঠিক ছিল না, তা বলে ঘর ছেড়ে যাবে ভাবিনি কখনও। সেই হারানো মধ্যবয়সীকে খুঁজে পেয়ে আট বছর পরে ঘরে ফিরিয়েছেন পরিতোষ। বলছেন, ‘‘জীবনের একটা অধ্যায় পেরিয়ে এলাম মনে হচ্ছে।’’
নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পরে কম খোঁজ খবর করেননি পরিতোষ। মাইলের পর মাইল খোলা রাস্তা থেকে জনপদে ঢুঁ মেরে তাঁর মানসিক ভারসাম্যহীন স্ত্রীয়ের খোঁজ করেছেন তিনি। এক সময়ে ধরেই নিয়েছিলেন ‘বেঁচে নেই বোধহয়।’ বলছেন, ‘‘গত শুক্রবার, হঠাৎ করিমপুর ব্লক অফিস থেকে খবর আসে যে, খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। কেরলের থিরুঅনন্তপুরমে একটি বৃদ্ধাবাসে রয়েছেন। প্রমাণপত্র নিয়ে রবিবারই বেরিয়ে পড়েছিলাম। বুধবার হোমে পৌঁছতেই দেখি চন্দনা আমাকে দেখেই চিনতে পেরেছে। জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করল, আমিও আর চোখের জল...।’’
বাড়ি ফিরে চেনা উঠোনে বসে চন্দনাও বলছেন, “আট বছর আগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাসে চেপে কলকাতায় চলে গিয়েছিলাম। তার পরে ট্রেনে কোথায় যে গিয়েছিলাম তা আর মনে নেই। ওখানকার পুলিশ আমাকে উদ্ধার করে ওই হোমে পাঠিয়েছিল।’’
এ দিন বাড়ি ফিরে ছেলে-বৌমা নাতনিকে কাছে পেয়ে তিনি যে খুশি, চোখ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। করিমপুর ১ বিডিও সুরজিৎ ঘোষ বলছেন, ‘‘আট বছর আগে হারিয়ে যাওয়া ওই মহিলার দেওয়া ঠিকানা ইন্টারনেট খুঁজে কেরালার থিরুবারন্তপুরমের ‘করুণালয়াম ওল্ড এজ হোমে’ আছেন বলে জানতে পেরেছিলাম। তার পরে ছবি-ঠিকানা মিলিয়ে আমরা তো থ!’’
পরিতোষ বলছেন, ‘‘বিশ্বাস ছিল, খুঁজে এক দিন পাবই। কী যে ভাল লাগছে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy