চেম্বারে রোগীর ভিড়ে পা ফেলা দায়। সেই ভিড়ে কাঠের বেঞ্চে বসে আছেন শীর্ণকায় এক প্রৌঢ়। গলায় টিউমার। তিনি ফিরে এসেছেন কলকাতার একটি সরকারি হাসপাতাল থেকে। চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচারের ঝুঁকি নেননি। হতাশ হয়ে তিনি এসেছেন শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের চিকিৎসক অনির্বাণ জানার চেম্বারে।
প্রৌঢ়ের শেষ সম্বল বলতে নিজের পুরনো রিকশাটা। প্রয়োজনে সেটাও তিনি বেচে দেবেন। কিন্তু সে পথে অবশ্য হাঁটতে হয়নি। প্রৌঢ়ের আর্থিক পরিস্থিতির কথা শুনে তাঁর কাঁধে হাত রেখে অনির্বাণবাবু বলেছিলেন, “চিন্তা নেই, আমি তো আছি। হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যান। অস্ত্রোপচার করব।” সুস্থ হয়ে উঠলেন প্রৌঢ়। হাসপাতাল থেকে ফেরার পথে তিনি বলেছিলেন, ‘‘কে বলে, ভগবান নেই? তা হলে আমার অস্ত্রোপচার করল কে?”
কয়েক বছর আগের ঘটনা। নিউ জেনারেল হাসপাতালের শল্য চিকিৎসক নির্মল সাহার অধীনে ভর্তি হলেন এক রোগী। তাঁরও অস্ত্রোপচার হবে। মহিলা বিভাগে শয্যা ফাঁকা থাকলেও পুরুষ বিভাগে শয্যা নেই। সে কথা জানতে পেরে ওই চিকিৎসক মহিলা বিভাগের একটি শয্যা নিজে হাতে পুরুষ বিভাগে টেনে আনলেন। অস্ত্রোপচারও হল। ওই চিকিৎসকের ব্যবহার ভুলতে পারেননি কান্দির অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শামসুল আজাদ। তিনি বলছেন, ‘‘ওই হাসিমুখ, পরম মমতায় মাথায় হাত রেখে কথা—ওতেই তো অর্ধেক অসুখ সেরে যেত মশাই। ওঁকে কোনওদিন ভুলব না!’’
কী, হোঁচট খেলেন তো?
কৃষ্ণনগরের এক প্রৌঢ় বলছেন, ‘‘ভুয়ো ডাক্তার, হাসপাতালে ডাক্তার ঘেরাও, রোগীর আত্মীয়ের হাতে প্রহৃত চিকিৎসক, জুনিয়র ডাক্তাররা চড়াও রোগীর বাড়ির লোকের উপর —চারপাশে এমন অভিযোগ তুলে প্রায়ই তো হইচই হচ্ছে। সেখানে এমন চিকিৎসকদের কথা তো আজকাল প্রায় শোনাই যায় না।’’
জেলার স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, এখনও এমন বহু চিকিৎসক আছেন যাঁদের রোগীরা ভগবান বলেই মনে করেন। আসল কারণটা হল মানসিকতার পার্থক্য। কেউ আসেন মানুষের সেবা করতে। আর কেউ আসেন টাকা রোজগার করতে। গোলটা বাধে সেখানেই।’’
দীর্ঘ দিন গ্রামীণ হাসপাতালে থাকা এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘সরকারি হাসপাতালে আসা রোগীরা কিন্তু বিরাট কিছু চান না। ভাল ব্যবহার, রোগীর সঙ্গে একটু সময় নিয়ে কথা বলে চিকিৎসা করলেই রোগী ও তাঁর পরিবার খুশি। এটুকু তো আমরা করতেই পারি।” যা শুনে জেলা হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলছেন, ‘‘কথাটা বলা সহজ। কিন্তু কাজে করে দেখানোটা কঠিন। চিকিৎসক নেই, পরিকাঠামোর সমস্যা, মাত্রাতিরিক্ত রোগীর চাপ, তাঁদের বিপুল প্রত্যাশা— এ সব সামলে হাসিমুখে, সময় নিয়ে, রোগী দেখা যায় বলুন তো?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy