সারা আলি সকালে হলুদ মেশানো জল খান, এমন পানীয়ে চুমুক দিলেই কি অভিনেত্রীর মতো সুন্দর চেহারা মিলবে? ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
খুঁজলেও শরীরে এক ছটাক বাড়তি মেদ মিলবে না। তন্বী কোমর, টানটান চেহারা। মুখে লাবণ্য। তাঁর রূপে মুগ্ধ অনুরাগীরা। তিনি বলিউডের জনপ্রিয় মুখ সারা আলি খান। কে বলবে, এক সময় তাঁর ওজন ছিল ৯২ কেজি!
৯২ থেকে ৫২ কেজিতে পৌঁছেছেন অনেক দিন হল। এখন চর্চায় অভিনেত্রীর ফিটনেস। কী করেন, কী খান, কী ভাবে ওজন বশে রাখেন, তা নিয়ে জানতে আগ্রহী অনুরাগীরা। সেই সারা সম্প্রতি একটি সংবাদমাধ্যমের সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, প্রতিদিন সকালে হলুদ-জল খান তিনি।
তা থেকেই প্রশ্ন, তবে কি শরীরচর্চার পাশাপাশি ওজন, সৌন্দর্য ধরে রাখতে হলুদ-জল জরুরি? ইদানীং মেদ ঝরাতে ‘ডিটক্স’ পানীয় খাওয়ার চল হয়েছে। সমাজমাধ্যমে চোখ রাখলেই দেখা যাচ্ছে, রকমারি ডিটক্স পানীয় তৈরি পদ্ধতি এবং তার গুণাগুণ জানানো হচ্ছে। এই হলুদ-জল কি তেমনই?
ডিটক্স পানীয় শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বা টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে। পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘রাতে খাওয়াদাওয়ার পর যখন আমরা ঘুমোই সে সময় অভ্যন্তরীণ বিপাক ক্রিয়া চলতে থাকে। তাতে কিছু টক্সিন বা দূষিত পদার্থ তৈরি হয়। সকালে উঠে সেই দূষিত পদার্থ শরীর থেকে বার করে দেওয়া দরকার। এ ক্ষেত্রে জলই সেই কাজ করে। শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বার করে দেওয়ার জন্য জলই যথেষ্ট।’’
জলই যদি যথেষ্ট, তবে বিভিন্ন উপাদান সহযোগে ডিটক্স পানীয় কেন খাওয়া হয়? সারা আলি খান নিয়মিত হলুদ-জল খান। কেন?
ত্বকের যত্ন থেকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে হলুদের কার্যকারিতা অনস্বীকার্য। হার্টের রোগ থেকে সংক্রমণ, নানাবিধ রোগের অন্যতম দাওয়াই হল হলুদ। অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট, পলিফেনল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদানে সমৃদ্ধ হলুদ। এর মধ্যে রয়েছে কারকিউমিন। অত্যন্ত কার্যকরী এই অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। অসুখবিসুখ দূরে রাখতে সাহায্য করে। শম্পা বলছেন, ‘‘জল নিজেই ডিটক্সিফিকেশনের কাজ করলেও এর সঙ্গে হলুদ, লেবু, মেথি বা যে কোনও উপাদান মেশালে, সেটির পুষ্টিগুণও জুড়ে যায়। জল শরীরের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। ফলে শরীর একাধারে যেমন ঘুম থেকে ওঠার পর শারীরবৃত্তীয় কার্য সম্পাদনের জন্য জল পায়, তেমনই জরুরি ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টও মেলে।’’
কেউ বলছেন, জলে লেবু-মধু মেশাতে, কেউ বলছেন মেথি দানা, কেউ আবার নিদান দিচ্ছেন রকমারি ফল কেটে জলে মিশিয়ে সেই জল ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করে খেতে। কিন্তু, কোনটি খাবেন। সবই কি উপকারী? এই বিষয়ে অবশ্য চেন্নাইয়ের মেডিসিনের চিকিৎসক অনন্ত কৃষ্ণনের মত খানিক ভিন্ন। তিনি বলছেন, ‘‘ডিটক্স পানীয়ের উপকারিতা নিয়ে যতটা দাবি করা হয়, বিষয়টি ঠিক তা নয়। নিয়ম করে এই পানীয় খেলে শরীরে জলের ঘাটতি দূর হবে। শরীর পর্যাপ্ত জল পাবে, এই যা। ডিটক্স পানীয়কে বরং বলা চলে ‘ফ্লেভার্ড ড্রিংক’।’’
পুষ্টিবিদ বৈশালী বর্মার কথায়, হলুদ-জল খেলেই যে কেউ রোগা হবেন, এমনটা বলা যায় না। তবে, এই পানীয়ে হলুদের গুণ থাকে, যা শরীরের পক্ষে উপকারী।
রকমারি ডিটক্স পানীয়ের মধ্যে কোনটি কার জন্য উপকারী? হলুদ-জল, লেবু জল, দারচিনি জল, জিরের জল, মেথির জল— ডিটক্স পানীয়ের তালিকা দীর্ঘ। পুষ্টিবিদ শম্পা বলছেন, হলুদ জল যে কেউ খেতে পারেন। ঠান্ডা অথবা ঈষদুষ্ণ জলে। তবে তাঁর পরামর্শ, গুঁড়ো হলুদ খেলে তা যেন জৈব পদ্ধতিতে চাষ করা হয়। এতে প্রক্রিয়াজাত রাসায়নিক বা ক্ষতিকর কিছু থাকলে তা শরীরের পক্ষে উপকারী হবে না। তবে কাঁচা হলুদ থেঁতো করে জলে মিশিয়েও খাওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া, অম্বলের ধাত থাকলে সকালে উঠে লেবু জল না খাওয়াই ভাল। পাতিলেবুর রসে ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট থাকে। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে, ত্বক ভাল রাখতে সাহায্য করে। অম্বলের সমস্যা না হলে যে কেউ এই জল খেতে পারেন। দারচিনি, মেথি ইত্যাদি রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্যে করে। তাই হার্টের রোগীরা এই ধরনের ডিটক্স পানীয়ে চুমুক দিতে পারেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy