প্রতীকী ছবি।
অন্য ঘরে নয়, মঙ্গলবার রাতে নিজের ঘরেই ছিল সামাউল শেখ। পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, হস্টেল সুপার আবুল বাশার রুহুল আমিন মোল্লাকে জেরা করেই তা জানা গিয়েছে।
বুধবার রাতেই ডোমকল মডেল স্কুলের ওই হস্টেল সুপারকে খুনের মামলায় গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। বৃহস্পতিবার বহরমপুর আদালতে তোলা হলে তাঁকে ১০ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। তাঁর সঙ্গে আরও কেউ ঘটনায় জড়িত ছিল কি না, থাকলে তারা কারা, সেই তথ্যই বের করার চেষ্টা চলছে। কিছু ছাত্র সামাউলদের ঘরে ঢুকে মদ খেত বলে অভিযোগ থাকলেও, রাত পর্যন্ত আর কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।
হস্টেলের একতলায় সামাউলের সঙ্গে থাকত জলঙ্গির সাগরপাড়ার রৌনক সরকার আর ডোমকলেরই ইউসুফ আলি মোল্লা। রৌনক ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র, বাকিরা পঞ্চম শ্রেণির। রৌনক আর ইউসুফ ছুটিতে ছিল। কেউ ঘরে একা থাকলে তাকে রাতে অন্য ঘরে রাখা ওই হস্টেলের নিয়ম। সেটাই করা হয়েছিল বলে গোড়ায় দাবি করেছিলেন হস্টেল সুপার। কিন্তু জেরায় তিনি বয়ান বদলান।
হস্টেল সুপার দাবি করেছিলেন, বুধবার সকালে ডাইনিং হলে চা খেয়ে নিজের ঘরে গিয়েছিল সামাউল। পরে সে স্কুলে কোচিংয়ে না যাওয়ায় তিনি ঘরের দরজা ঠেলে দেখেন, ছিটকিনির আংটা থেকে দড়ির ফাঁসে তার দেহ ঝুলছে। সে আত্মহত্যা করেছে বুঝে তিনি দেহটি নামান। পুলিশ গিয়ে দেখে, দেহটি বিছানায় শোওয়ানো। নানা জায়গায় কালশিটে আর কলম দিয়ে খোঁচানোর দাগ। তাকে যে নির্যাতন করা হয়েছিল, তা তখনই স্পষ্ট হয়ে যায়। পরে হস্টেল সুপারের কথাতেও নানা অসঙ্গতি ধরা পড়ে।
উঁচু ক্লাসের ছেলেরা যে তাদের ঘরে ঢুকে মদ খায়, সে কথা বাড়িতে জানিয়েছিল সামাউলেরা তিন জনেই। ইউসুফের মা বেলুয়ারা বিবি বলেন, ‘‘আমার ছেলে প্রথমে না বললেও অন্য দু’জনের কাছে সব শুনে ওকে জিগ্যেস করি। ও একই কথা বলে।’’ তিন জনের অভিভাবকই সুপারকে সব জানিয়ে ঘর পাল্টে দিতে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু তা করা হয়নি।
পুলিশের অনুমান, বাড়িতে বলায় সামাউলদের উপর খেপে ছিল কেউ-কেউ। মঙ্গলবার রাতে তাকে একা পেয়ে নির্যাতন চালানো হয়। ছেলেটি আর্তনাদ করলে কিছু দিয়ে তার মুখ চেপে ধরা হয়। শ্বাসরুদ্ধ হয়ে সে মারা গেলে দেহ টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সামাউলের বাবা মহম্মদ আলির দাবি, ‘‘বাড়িতে জানানোয় ওরা আমার ছেলেকে খুনের হুমকি দিচ্ছিল। ছাত্রদের জেরা করলেই সব জানা যাবে।’’
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার মাধ্যমিক শেষ হলেও চার-পাঁচ জন পরীক্ষার্থী হস্টেলেই থেকে গিয়েছিল। তাদের পুলিশ জেরা করেনি। রৌনক বা ইউসুফের বয়ানও নেওয়া হয়নি। মামলার তদন্তকারী অফিসার জয়দীপ চক্রবর্তী অবশ্য এ নিয়ে একটি কথাও বলতে চাননি। পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার শুধু বলেন, ‘‘ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে এলেই খুনের কারণ
পরিষ্কার হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy