অডিয়ো ক্লিপ নিয়ে জগন্নাথের মন্তব্যে জল্পনা
নদিয়ার ধানতলায় নাবালিকা ধর্ষণ ও খুন-কাণ্ডে এফআইআর বদল এবং মৃতার দেহ আনার সময় পরিবর্তন করে কি রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে বিজেপি? ওই ঘটনায় একটি অডিয়ো ক্লিপ প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই এমন জল্পনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। ওই জল্পনা আরও জোরালো হল ওই অডিয়ো ক্লিপে দুই বিজেপি কর্মীর মধ্যে কথোপকথনের বিষয়টি রানাঘাটের বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকার স্বীকার করে নেওয়ার পর।
বৃহস্পতিবার রাতে নাবালিকার অপমৃত্যুর ঘটনায় পরিবারের তরফে প্রথমে শুধু আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ দায়ের করা হলেও পরে তা বদল করে ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ দায়ের করেন মৃতার বাবা। ওই অভিযোগের ভিত্তিতেই তদন্তে নেমে মৃতার পিসি, জামাইবাবুকে গ্রেফতার করে ধানতলা থানার পুলিশ। হঠাৎ মৃতার পরিবারের এই বয়ান এবং অভিযোগ বদল নিয়ে তরজার মধ্যে প্রকাশ্যে আসে ওই অডিয়ো ক্লিপ। সেই ক্লিপে দুই ব্যক্তিকে ধানতলার ঘটনায় এফআইআর পরিবর্তন নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে শোনা গিয়েছে। স্থানীয় থানার ওসিকেও ‘চাপে’ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, এক ব্যক্তিকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘কাল বডি আসতে আসতে সন্ধেবেলা হয়ে যাবে। কাজ হবে না। তা হলে ডেটটা পরশু দিন কর। সে দিন যদি আসে, তা হলে এখানে পলিটিক্যাল মাইলেজ নিতে হবে আমাদের...।’ ওই অডিয়ো ক্লিপে ‘বাবুদা’ বলে এক জনের নামও উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও অডিয়ো ক্লিপটি আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করে দেখেনি।
সম্প্রতি হাঁসখালির নাবালিকা গণধর্ষণ-কাণ্ডে স্থানীয় তৃণমূল নেতার ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ এবং ওই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে শাসক শিবিরকে লাগাতার আক্রমণ করছে বিজেপি। সেই আবহেই ধানতলায় নাবালিকার অপমৃত্যুর ঘটনায় বিজেপির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলে তৃণমূলের দাবি, ফোনে যে দুই ব্যক্তির মধ্যে কথোপকথন শোনা গিয়েছে, তাঁরা দু’জনেই বিজেপি নেতা। তাঁদের মধ্যে এক জন ব্লক সভাপতি, অন্য জন মণ্ডল সভাপতি।
রানাঘাট সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল সভাপতি রত্না ঘোষ কর বলেন, ওই অডিয়ো ক্লিপে রানাঘাট দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারী এবং এবং নদিয়ায় দলের জেলা কমিটির সদস্য বাবু চট্টোপাধ্যায়ের নাম নেওয়া হয়েছে। বলেন, ‘‘যে কোনও মৃত্যুই দুঃখজনক। কিন্তু মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বিজেপি যে নোংরা রাজনীতি শুরু করেছে, তা ওই অডিয়োটি থেকে পরিষ্কার। বিজেপির মুকুটমণি অধিকারী ও বাবু চট্টোপাধ্যায়ের মতো শীর্ষনেতাদের নাম উঠে এসেছে। ওরা বাংলাকে উত্তরপ্রদেশ বানাতে চাইছে। ওদের এই চক্রান্ত কখনওই সফল হবে না।’’
তবে ভাইরাল হওয়া অডিয়ো ক্লিপের সঙ্গে বিজেপির কোনও যোগ নেই বলেই প্রথমে দাবি করেছিলেন দলের নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু পরে ওই অডিয়ো ক্লিপে দুই বিজেপি কর্মীর মধ্যে কথোপকথনের বিষয়টি স্বীকার করে নিলেন জগন্নাথ। তিনি বলেন, ‘‘ওই অডিয়ো টেপে যাঁরা কথা বলছেন, তাঁরা আমাদের বিজেপি কর্মী। কিন্তু তাঁরা কোনও আপত্তিকর আলোচনা করেনি। হাঁসখালির ঘটনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যা বিবৃতি দিয়েছেন, তার পর তৃণমূল নেতাদের আর মুখ দেখানোই উচিত নয়।’’
রত্নার মন্তব্য নিয়ে বিধায়ক মুকুটমণির সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে আনন্দবাজার অনলাইনের পক্ষ থেকে। অডিয়ো ক্লিপে ‘পলিটিক্যাল মাইলেজ’ প্রসঙ্গে তাঁর মতামত জানতে চাওয়া হয়েছিল। ওই বিষয়টি সম্পূর্ণ এড়িয়ে গিয়ে মুকুটমণি শুধু বলেন, ‘‘ধর্ষণ নিয়ে তৃণমূলের কোনও নেতার বিবৃতির উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে বাংলার মানুষ মনে করে না।’’
প্রকাশ্যে আসা অডিয়ো ক্লিপে স্থানীয় থানার ওসিকে ‘চাপে’ রাখা বলা হলেও এ নিয়ে আলাদা করে পুলিশের তরফে কিছু জানানো হয়নি। ধানতলা থানার এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘পরিবারের পক্ষ থেকে নতুন করে খুন ও ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। আমরা তার ভিত্তিতেই তদন্ত করছি। অডিয়ো ক্লিপ নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু হয়নি। কেউ অভিযোগ করলে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy