টাকার ঘা বড় ঘা।
সে কথা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে সীমান্তের পাচারকারীরা। কিন্তু কারবার তো আর শিকেয় তুলে দেওয়া যায় না। তাহলে উপায়?
সে রাস্তাও খুঁজে নিয়েছে তারা। টাকার বদলে সোনাই সই! আজ্ঞে হ্যাঁ, নগদের আকালে এখন পাচারে বড় ভরসা সোনা। রানিনগরের কামরুল শেখ (নাম পরিবর্তিত) বলছে, ‘‘এ ছাড়া আর কোনও পথ খোলা ছিল না। নগদের আকালে ও পার বাংলার কারবারিদের স্পষ্ট বলে দিয়েছি, তোমরা আমাদের সোনা দাও, আমরা তোমাদের গরু দেব।’’
আর সেই সোনার ভরসাতেই পদ্মা পেরোচ্ছে গরু। রানিনগর, জলঙ্গি, লালগোলা, জঙ্গিপুর, সুতি, কৃষ্ণগঞ্জ, করিমপুরের মতো সীমান্তেও ছবিটা কমবেশি একই রকম। এতদিন কারবার চলত নগদ টাকা কিংবা টিটি-র মাধ্যমে। টাকা ট্রান্সফারকে পাচারকারীরা সংক্ষেপে টিটি বলে। সীমান্তের বেশ কিছু লোকজন এই টিটির কারবার চালায়।
পাচারকারীরা জানাচ্ছে, এ পার থেকে ও পার বাংলায় গরু পাঠিয়ে দেওয়ার পরে হাতে পাওয়া যায় একটা চিরকুট। সেখানে কখনও টাকার অঙ্ক লেখা থাকে, কখনও লেখা থাকে গোপন সঙ্কেত। যার অর্থ একমাত্র পাচারকারী ও টিটি কারবারিরাই বুঝতে পারে। সেই চিরুকুট টিটি কারবারিদের হাতে পৌঁছে দিলেই মেলে নগদ টাকা।
এতদিন এ ভাবেই চলছিল। কিন্তু গোল বাধল ৮ নভেম্বরের পর থেকে। নগদে টান পড়ায় বেশ কিছু দিন পাচার প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তারপরেই টাকার বিকল্প হিসেবে পাচারকারীরা সোনাকে বেছে নেয়। শান বাঁধানো বটতলায় বসে কামরুল বলছে, ‘‘এ লাইনে বিশ বছর হয়ে গেল। বহু বর্ডারের জল খেয়েছি। নোট বাতিলে প্রথম কিছুদিন একটু অসুবিধা হচ্ছিল। এখন সেটা অনেকটাই সামলে নিয়েছি।’’ লালগোলার বরকত খান (নাম পরিবর্তিত) বলছেন, ‘‘ও পারের লোকজনকে স্পষ্ট বলে দিয়েছি, এই অবস্থায় সোনা ছাড়া কারবার চালানো সম্ভব নয়। ওরাও পরিস্থিতি বুঝতে পেরে রাজি হয়েছে। এখন গরু ও পারে পৌঁছে দেওয়ার পরে যারা চিরকুট নিয়ে আসত সেই তারাই চিরকুটের বদলে সোনা নিয়ে আসছে। সেই সোনা বাজারে বিক্রি করে ফের গরু কিনছি।’’ সুতি ও জঙ্গিপুরের সীমান্তেও নোট বাতিলের পরের কিছু দিন পাচারে লাগাম পড়েছিল। সপ্তাহ দু’য়েক থেকে ফের পদ্মার চরে গরুর পায়ের ছাপ পড়তে শুরু করেছে। আর নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জ, গেদে সীমান্তের পাচারকারীদের একাংশ কবুল করছে, ‘‘আমাদের কারবারে ব্যাঙ্ককে খুব বেশি ভরসা করি না। যা হয় হাতে হাতে। নোট বাতিলের পরে আমাদের সিন্ডিকেটের বহু সদস্যদের অ্যাকাউন্টে টাকা ভাগ ভাগ করে রাখা হয়েছিল। এখন সেগুলো ফের তুলে নেওয়া হচ্ছে। তবে পরিস্থিতি একেবারে স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে আমরাও সোনাতেই কারবার চালাব।’’
নগদ কিংবা সোনা ছাড়াও আর এক ভাবেও কারবার চলছে। ধারে। আছে ধারের খাতাও!(চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy