Advertisement
০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
Coronavirus

জনধনের লাইনেও ঘেঁষাঘেঁষি 

সোমবার জেলা জুড়েই হাজার-হাজার মানুষ ছুটেছেন ব্যাঙ্কে। কেউ কেউ গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রে।

 টাকা তোলার লাইনে নেই পারস্পরিক দূরত্ব। কৃষ্ণনগরে। নিজস্ব চিত্র

টাকা তোলার লাইনে নেই পারস্পরিক দূরত্ব। কৃষ্ণনগরে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২০ ০৩:০৯
Share: Save:

বেলা ১০টা, সোমবার।

হন্তদন্ত হয়ে শিমুরালি বাজারের রাস্তা ধরে ব্যাঙ্কের দিকে ছুটছে বছর পনেরোর নিকিতা সিংহ। সে খবর পেয়েছে, তার অ্যাকাউন্টে জনধন প্রকল্পের টাকা জমা পড়েছে। এই দুর্মূল্যের বাজারে সেই টাকা এখনই হাতে পেতে চায় সে। হোক না পাঁচশো টাকা। সে-ও এখন অনেক। যাওয়ার পথে চেনামুখ দেখে সে লাজুক হেসে বলে, “দেখি, টাকাটা আজ পাওয়া যায় কিনা। সরকারের কাছ থেকে যা মেলে এখন, সেটাই লাভ।”

সোমবার জেলা জুড়েই হাজার-হাজার মানুষ ছুটেছেন ব্যাঙ্কে। কেউ কেউ গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রে। ব্যাঙ্কের ভিতরে এক সঙ্গে তিন-চার জনের বেশি ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু বাইরে লম্বা লাইন। এক জনের পিঠ ঘেঁষেই আর এক জন দাঁড়়িয়ে। বিশেয করে যে সব ব্যাঙ্কের সামনে তেমন ফাঁকা জায়গা নেই, সেখানকার অবস্থা আরও খারাপ। পারস্পরিক দূরত্বের বালাই নেই। কোথাও-কোথাও গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রের সামনে দাঁড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট দূরত্বে গোল-গোল দাগ কেটে দেওয়া হয়েছে। কল্যাণী সীমান্ত এলাকায় লাল কোয়ার্টারের কাছে এক গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রের সামনে যেমন। কিন্তু বেশির ভাগ ব্যাঙ্কের সামনেই দৃশ্যটা সিনেমার টিকিট কাটার লাইনের মতো।

গত ৩ এপ্রিল থেকেই জনধন প্রকল্পে টাকা দিতে শুরু করেছে কেন্দ্র। প্রত্যেকের অ্যাকাউন্টে ৫০০ টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। তিন মাস ধরে তা দেওয়া হবে। সেই টাকা তুলতেই ব্যাঙ্ক, গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রের সামনে লম্বা লাইন শুরু হয়েছে। নদিয়া জেলায় বিভিন্ন ব্যাঙ্কে ২২ লক্ষ ৫৪ হাজার ৪১৪ জনের জনধন অ্যাকাউন্ট আছে। এর মধ্যে ‘রুপি ডেবিট কার্ড’ আছে ১৬ লক্ষ ৫৩ হাজার ৯৬২ জনের। সেই অ্যাকাউন্টে ‘প্রধানমন্ত্রী গরীব কল্যাণ যোজনা’ থেকে ৫০০ টাকা করে দেওয়া হচ্ছে।

লকডাউনের সময়ে পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখতে ব্যাঙ্কগুলি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সঙ্গে তিন থেকে চার জনের বেশি ঢুকতে দেওয়া হবে না। যে সব শাখায় পর্যাপ্ত কর্মী আছে, সেখানে কাউন্টারের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। সেই সঙ্গে সমস্ত ব্যাঙ্কই তাদের গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রগুলিকে আরও সক্রিয় ভাবে এই জনধন অ্যাকাউন্টের টাকা গ্রাহকদের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। গ্রামাঞ্চলে গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রগুলি থেকে টাকা দেওয়া শুরু হতেই লম্বা লাইন পড়েছে। লাইনে যাঁরা দাঁড়াচ্ছেন, তাঁদের একটা অংশ লকডাউনের ফলে কাজ হারিয়েছেন।

ব্যাঙ্ক থেকে অনুরোধ করা হচ্ছে, যাঁদের এখনই ৫০০ টাকার প্রয়োজন নেই তাঁরা যেন দু’দিন পরে টাকা তুলতে আসেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা! সকলেই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব টাকাটা তুলে নিতে চান। চাপড়ার দিনমজুর সহিদুল গাজি বলছেন, “সেই কবে থেকে কাজ নেই। বাড়িতে বসে আছি। বৌয়ের অ্যাকাউন্টে টাকা এসেছে। তাই সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আজই টাকা তুলে নিলাম।” পুরো টাকাটা দিয়ে চাল কিনে বাড়ি ফিরেছেন সহিদুল।

জনধনের টাকা তোলার জন্য সবাই এত তাড়াহুড়ো করছেন কেন?

ধুবুলিয়ার সিংহাটির ফতেমা বিবির কথায়, “করোনার কারণে কখন কী হয়ে যায়, কে বলতে পারে! পরে হয়তো টাকা তোলার সুযোগই পাওয়া যাবে না। তার চেয়ে এখনই টাকা তুলে চাল-ডাল কিনে রাখা ভাল।”

বিষয়টি মাথায় রেখে আগেভাগেই নদিয়া জেলা প্রশাসনের তরফে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। প্রয়োজনে সাহায্য চাওয়া হবে বলাও জানানো হয়েছে। সেই মতো জেলার কোথাও কোথাও ব্যাঙ্কের সামনে লাইন ঠিক রাখতে সিভিক ভল্যান্টিয়ার রাখা হয়েছে। জেলার লিড ব্যাঙ্ক ম্যানেজার বিমলকুমার ভট্টাচার্য বলেন, “আমরা এক-এক দিন এক-একটা কোড নম্বরের গ্রাহকদের টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাতে ভিড় কমবে। সবাইকেই অনুরোধ করছি, এখনই টাকার প্রয়োজন না হলে ভিড় না বাড়িয়ে পরে এসে তুলে নিয়ে যান। যাঁদের ডেবিট কার্ড আছে, তাঁরা এটিএম থেকে তুলে নিন।”

কিন্তু এটিএম তো বেশির ভাগ শহরে বা গঞ্জে। গাঁয়ের গ্রাহকদের বক্তব্য, লকডাউনের বাজারে গ্রাম ছেড়ে এটিএমে পৌঁছনোই কঠিন। তার চেয়ে ব্যাঙ্ক বা গ্রাহক পরিষবা কেন্দ্রে লাইন দিয়ে টাকা তোলা সহজ। তাই প্রথম দিন থেকে লাইন পড়ছে। যত দিন যাবে, পড়বেও। পারস্পরিত দূরত্ব বজায় রেখে ভালয়-ভালয় মানুষের হাতে সরকারি টাকা পৌঁছে দেওয়া যাবে কি না, সেটাই আসল প্রশ্ন।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেনআপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy