Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
লকডাউনের হাসপাতাল
lock down

করোনাভাইরাসের ভয়ে রোজ ডাক্তার আসছেন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে

করোনাভাইরাস ও লকডাউনের জেরে দু’সপ্তাহ ধরে ছ’দিনই চিকিৎসক আসছেন পেয়েছে গঙ্গাধারী প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে।

প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

মফিদুল ইসলাম
নওদা শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২০ ০০:৫১
Share: Save:

প্রায় দু’দশক আগেও প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে মিলত সব ধরনের পরিষেবা। আউটডোর পরিষেবার পাশাপাশি ছিল জরুরি এবং ইন্ডোর পরিষেবা। সর্বক্ষণের জন্য থাকতেন চিকিৎসক, নার্স থেকে অন্য স্বাস্থ্যকর্মীরা। সন্তান প্রসব হওয়া বা ছোটখাটো অস্ত্রোপচার, সবই হত নওদার গঙ্গাধারী প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। নওদার গঙ্গাধারী ছাড়াও হরিহরপাড়া এবং ডোমকলের বিভিন্ন গ্রামের মানুষ নির্ভর করতেন এই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপর। কিন্তু অজানা কারণেই কমতে থাকে হাসপাতালের চিকিৎসক থেকে অন্য স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা। বন্ধ হতে থাকে একেরপর এক পরিষেবা। এক জন চিকিৎসক ও এক জন অস্থায়ী কর্মী দিয়ে কোনও রকমে আউটডোর পরিষেবাটুকু চালু থাকলেও চিকিৎসক অন্যত্র বদলি হওয়ায় বন্ধ হয়ে পড়ে আউটডোর পরিষেবাটুকুও। প্রায় দুই বছর তালা বন্ধ হয়ে পড়ে থাকে এই হাসপাতাল। মাস ছয়েক আগে থেকে সপ্তাহে দুই বা তিন দিন করে চিকিৎসক আসতেন। করোনাভাইরাস ও লকডাউনের জেরে দু’সপ্তাহ ধরে ছ’দিনই চিকিৎসক আসছেন পেয়েছে গঙ্গাধারী প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, হাসপাতালে আউটডোর পরিষেবাটুকু চললেও, মিলছে না জরুরি পরিষেবা। হাসপাতালে চিকিৎসক বা অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের থাকার ঘরের বেহাল দশা। আবাসনে গা বেয়ে উঠেছে নানা ধরনের আগাছা। সেখানে বাসা বেধেছে সাপখোপ। ফলে চিকিৎসক বজলুর রহমান প্রতিদিন আসছেন বহরমপুরের বাড়ি থেকে। ফার্মাসিস্ট বরুণ বিশ্বাস আসছেন আমতলার ভাড়া বাড়ি থেকে।

তবে কমেছে রোগীর সংখ্যা। সপ্তাহ দু’য়েক আগেও প্রতিদিন গড়ে ১২০-১৫০ জন রোগী চিকিৎসা পরিষেবা নিতে আসতেন। এখন প্রতিদিন চিকিৎসক আসলেও রোগী আসছেন প্রতিদিন গড়ে ১৫-২০ জন।

বর্তমানে হাসপাতালে নেই চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীদের থাকার জায়গা। ফলে স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশিকা থাকলেও যাতায়াত করেই আউটডোর পরিষেবাটুকু দিচ্ছেন ডাক্তার ও ফার্মাসিস্ট। তবে এতেই সন্তুষ্ট গ্রামের বাসিন্দারা। গ্রামের বাসিন্দা ইন্তাজ সেখ বলছেন, ‘‘মাঝে কোনও ডাক্তারই ছিলেন না। ফার্মাসিস্টের উপরেই আমাদের নির্ভর করতে হত। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব হতেই সপ্তাহে অন্তত ছ'দিন ডাক্তার আসছে।’’ চিকিৎসক বজলুর রহমান বলছেন, ‘‘আমার পোস্টিং ইসলামপুরে। আমি ডেপুটেশনে এই হাসপাতালে আসি। এখানে থাকার কোনও পরিকাঠামো নেই তাই যাতায়াত করেই আউটডোর পরিষেবা দিতে আসতে হয়।’’

ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক মুকেশ কুমার সিংহ বলেন, ‘‘পরিকাঠামো না থাকায় চিকিৎসক ও ফার্মাসিস্ট সব সময়ের জন্য থাকতে পারছেন না। তবে এলাকার মানুষের জন্য প্রতিদিন আউটডোর পরিষেবা চালু রাখা হয়েছে।’’

এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপরে নির্ভর করেন গঙ্গাধারী, গরিবপুর, ডাঙাপাড়া, সাহাজাদপুর সহ বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ। এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক না পেলে ন্যূনতম চিকিৎসা পরিষেবার জন্য সাধারণ মানুষকে ছুটতে হত ২০ কিলোমিটার দূরে আমতলা গ্রামীণ হাসপাতাল অথবা ১৫ কিলোমিটার দূরে হরিহরপাড়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। তার থেকে এখন মুক্তি পেয়েছেন এই এলাকার মানুষ। এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘‘গরমকাল আসছে। এখন তো সাপের কামড়ের ভয়ও রয়েছে। অন্তত সেই চিকিৎসাটুকু তো এখানে এখন পাওয়া যাবে।’’ গ্রামের আর এক জন বলেন, প্রতিদিনই অন্য রাজ্য থেকে অনেক শ্রমিক ঘরে ফিরছেন। এলাকার জনসংখ্যা দ্রুত অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। তাই রোগভোগের আশঙ্কাও এক লাফে অনেকটা বেড়ে গিয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Corona Virus Lock Down Murshidabad
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy