Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

একঘরে করার অভিযোগ

সপ্তাহ দুয়েকেরও বেশি সময় ধরে গ্রামের এক পরিবারকে একঘরে করে রাখার অভিযোগ উঠল গ্রামবাসীদের একাংশের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি বড়ঞার কুস্তেরিয়া গ্রামের। অভিযোগ, চাষের কাজে বা মাঠে ফসল দেখতে গেলেও ওই পরিবারের সদস্যদের মারধরের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। শিকেয় উঠেছে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনাও।

কৌশিক সাহা
বড়ঞা শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:০১
Share: Save:

সপ্তাহ দুয়েকেরও বেশি সময় ধরে গ্রামের এক পরিবারকে একঘরে করে রাখার অভিযোগ উঠল গ্রামবাসীদের একাংশের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি বড়ঞার কুস্তেরিয়া গ্রামের। অভিযোগ, চাষের কাজে বা মাঠে ফসল দেখতে গেলেও ওই পরিবারের সদস্যদের মারধরের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। শিকেয় উঠেছে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনাও। যদিও অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে অভিযুক্ত ওই গ্রামবাসীদের পাল্টা দাবি, একঘরে করে রাখার অভিযোগ একেবারেই মিথ্যা। ওই পরিবার সমাজে কেমন ভাবে মিশতে হয় সেটাই জানে না। একা থাকতে ভালবাসেন বলে ওই পরিবারের সদস্যরা নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সমস্যার শুরু ২৭ অগস্ট। সেদিন রাতে স্থানীয় একটি মাঠে চড়ুইভাতির আয়োজন করেছিলেন গ্রামের জনাকয়েক যুবক। অভিযোগ, তাঁদের মধ্যে জনা তিনেক যুবক ওই পরিবারের বাগানে আদা চুরি করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েন। পুলিশের কাছে এই মর্মে একটি অভিযোগও দায়ের করা হয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে গ্রামে পুলিশও আসে। তাতেই গ্রামবাসীদের একাংশ চটে যান বলে দাবি ওই পরিবারের। সেই দিনই তাঁদের একঘরে করে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে অভিযোগ।

গৃহকর্তা মুক্তিপদ মণ্ডল জানান, দুধের ব্যবসায়ীকে বাড়িতে যেতে বারণ করায় প্রতিদিন লিটার লিটার দুধ নষ্ট হচ্ছে। বাড়িতে ট্রাক্টর থাকলেও কাজ করানোর লোক পাওয়া যাচ্ছে না। গ্রামের অন্যান্য বাসিন্দারা পাড়ার নিকাশি নালা ব্যবহার করলেও তাঁদের তা ব্যবহার করতে দেওয়া হচ্ছে না। মুক্তিবাবুর ছেলে রাঘববাবু বলেন, “চাষ বা খেতে ফসল দেখতে গেলে মারধর করবে বলেও হুমকি দিয়েছে। আমরা এই অবস্থায় কী করব কিছুই বুঝে উঠতে পারছিনা।” রাঘববাবুর ছেলে পাশের গ্রামে প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। কিন্ত এই অবস্থায় তাকে স্কুলে পাঠাতেও সাহস পাচ্ছে না ওই পরিবার। মুক্তিবাবু বলেন, “কিছুদিন ধরে আমাদের বাড়িতে ব্রাহ্মণকেও পুজো করতে বাড়ি ঢুকতে দিচ্ছে না। গ্রামের পুজোতে আমরা চাঁদা দিলেও তা ফিরিয়ে দেওয়া হয়। আমাদের দেওয়া ফল, মিষ্টিও ফেরত আসে। কেন যে এমনটা হচ্ছে তা বুঝতে পারছি না।”

তবে ওই পরিবারের তরফে আনা অভিযোগ মানতে পারছেন না গ্রামবাসীদের একাংশ। তাঁদের দাবি, আদা চুরির মিথ্যে অভিযোগ আনা হয়েছে ওই যুবকদের বিরুদ্ধে। গ্রামের বাসিন্দা কাজল মণ্ডল, চিরঞ্জিত মণ্ডলরা বলেন, “আমরা কোনও দিনই একঘরে করিনি ওই পরিবারকে। মারধর করব এমন কথাও বলিনি।” কাজলবাবু বলেন, “মুক্তিবাবু আমার নিজের কাকা। সত্যি কথা বলতে সমাজের সাথে কীভাবে মিশতে হয় সেটা ওঁরা জানেন না। শুধু টাকার জোরে সবকিছু জয় করতে চান।”

বড়ঞার বিডিও বাদশা ঘোষাল বলেন, “কোনও পরিবারকে সামাজিক ভাবে বিচ্ছিন্ন করে রাখার ঘটনা মানা যায় না। পুলিশকে বিষয়টি দেখে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। আমি নিজেও গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে বৈঠক করব।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE