Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

নালিশ শুনতে গ্রামেই দরবার

আচমকা ধারা পাল্টে গত শুক্রবার ওই গ্রামেই ‘আম-দরবার’ বসালেন ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকরা। সশরীরে হাজির থেকে সভায় গ্রামের সর্বস্তরের মানুষকে ডেকে তাঁদের সমস্যা, অভাব-অভিযোগের কথা শোনা হল, নথিভুক্তও করা হল।

দরবারে হাজির গ্রামের বাসিন্দারা। নিজস্ব চিত্র

দরবারে হাজির গ্রামের বাসিন্দারা। নিজস্ব চিত্র

কল্লোল প্রামাণিক
তেহট্ট শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:৫২
Share: Save:

আদিবাসী অধ্যুষিত প্রত্যন্ত গ্রাম নফরচন্দ্রপুর। প্রায় দেড় হাজার মানুষের বাস। তেহট্ট ১ ব্লকের বেতাই- এর কাঁটা তারের বেড়া ঘেঁষা এই গ্রাম আর্থ-সামাজিক দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়া। প্রশাসনিক যাবতীয় নথিপত্রের তথ্যে তার উল্লেখও রয়েছে। তবে তা নিয়ে এত দিন বিশেষ কারও হেলদোল ছিল না বলে অভিযোগ। গ্রামের হাল দেখতে প্রশাসনিক কর্তা বা রাজনৈতিক নেতাদের উপস্থিতি তেমন ভাবে কোনও দিনই চোখে পড়েনি স্থানীয় মানুষের। সেটাও গা সওয়া হয়েগিয়েছিল।

আচমকা ধারা পাল্টে গত শুক্রবার ওই গ্রামেই ‘আম-দরবার’ বসালেন ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকরা। সশরীরে হাজির থেকে সভায় গ্রামের সর্বস্তরের মানুষকে ডেকে তাঁদের সমস্যা, অভাব-অভিযোগের কথা শোনা হল, নথিভুক্তও করা হল। আশ্বাস মিলল তার দ্রুত সমাধানের। যা দেখেশুনে গ্রামের এক প্রবীণ হেসে বললেন, ‘‘হল কী বাবুদের! আমাদের দুঃখের কথা শোনার কথা তো এত দিন মনে হয়নি।’’

সত্যি কী এমন হল যাতে প্রশাসনিক কর্তাদের গ্রামে এসে গ্রামবাসীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হচ্ছে? তা হলে কি আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন চিত্রে মারাত্মক রকম নীচে নেমে গিয়েছে নফরচন্দ্রপুর? নাকি রাজনৈতিক কোনও কারণে হঠাৎ গ্রামের গুরুত্ব বেড়েছে, নাকি কোথাও কোনও অভিযোগ হয়েছে গ্রামের অনুন্নয়ন নিয়ে?

তেহট্ট-১ বিডিও অচ্যুতানন্দ পাঠক দাবি করেছেন, ‘‘সে রকম কিছুই নয়। ব্লকের সার্বিক উন্নয়নের কথা ভেবেই পিছিয়ে পড়া গ্রামগুলিতে এই ধরনের সভা করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। নফরচন্দ্রপুর দিয়ে শুরু হয়েছে। আরও বেশ কয়েকটি গ্রাম তালিকায় রয়েছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘যে সব সমস্যার কথা জানা যাবে সেগুলির যাতে দ্রুত সমাধান করা যায় তার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে অফিসারদের।’’ বিরোধীরা অবশ্য দাবি করছেন, আগামী লোকসভা ভোটের কথা মাথায় রেখেই সরকারি নির্দেশে প্রশাসনের এ হেন তৎপরতা।

গ্রামবাসীদের মধ্যে কেউ কর্তাদের কাছে কেউ জানিয়েছেন জাতি-সংশাপত্র পেতে গিয়ে হেনস্থা হওয়ার কথা, কেউ বলেছেন বহু চেষ্টা করেও জমির পাট্টা না-পাওয়ার কথা। উঠে এসেছে খারাপ রাস্তা, পরিশ্রুত পাণীয় জলের অভাবের সমস্যাও।

গ্রামের বাসিন্দা কল্যাণী সর্জার আক্ষেপ করে বলেন, ‘‘ছেলেমেয়ের জাতি-শংসাপত্র পাওয়ার জন্য বহু বার ভিডিও অফিসে গিয়েছি। পাইনি। প্রতি বার বিডিও অফিস থেকে বিভিন্ন সময়ে ফিরিয়ে দিয়েছে।’’ অপর্ণা সর্দার বলেন, ‘‘ছেলে ক্লাস টেনে পড়ছে অথচ এখন পর্যন্ত জাতিগত শংসাপত্র জোগাড় করতে পারিনি। শুধুমাত্র এই শংসাপত্র না-থাকায় বিভিন্ন সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে গ্রামের ছেলেমেয়েরা বঞ্চিত হচ্ছে।’’ বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন শংসাপত্র দফতরের আধিকারিক অম্বর রায়।

অন্য বিষয়গুলি:

Tehatta Villagers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE