‘হয়ে যাক বাজি! কী, রাজি?’
ডোমকলের এক চায়ের দোকানের মালিক বেশ বিরক্ত হয়েই বলছেন, ‘‘এই শুরু হল! এক কাপ চা নিয়ে বাবুরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকবেন। আর এখানে বসেই কেন্দ্রের সরকার গড়বেন! যত্ত সব!’’
বৃদ্ধ চায়ের দোকানের মালিকের কথায় কেউ তেমন রাগ করলেন না। বরং মজা করেই ওঁরা বলছেন, ‘‘শোনো বুড়ো, বাজি জিতলে তোমার দোকানের চা তামাম ডোমকলকে খাইয়ে দেব!’’
ওঁরা আসলে ‘বাজিধর’ (ডোমকলে এখন ওঁদের এই নামেই ডাকা হয়)! মানে, শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা, বাজিই ওদের ভরসা। আইপিএল থেকে বিএসএনএল, ইলিশের ‘রেট’ থেকে পাড়ার ক্রিকেট— বাজিই বাজি!
সেই তালিকায় এ বার ঢুকে পড়েছে দিল্লির ভোটও!
প্রথম যুবক: ‘আমি ধরলাম আবু হেনা। দু’হাজার টাকা।’
দ্বিতীয় যুবক: ‘আমার বদরুদ্দোজা খান। দেড় হাজার।’
তৃতীয় যুবক: ‘আবু তাহের ফাইনাল। এক হাজার।’
চতুর্থ যুবক: ‘অধীর জিতবে। হারলে এক লাখ দেব।’
বাইরের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির আশপাশে। সুনসান পিচ-রাস্তায় মরীচিকা। কিন্তু গুমোট চায়ের দোকানে তখন ভোটের হার-জিতের চুলচেরা বিশ্লেষণ আর লক্ষ লক্ষ টাকার বাজি।
মুর্শিদাবাদের বহু এলাকাতেই বাজির রমরমা আছে। গত বিধানসভা নির্বাচনেও বাজি ধরেছিলেন অনেকেই। তবে সে সব বাজি মাচার লাউ, খেতের পটল কিংবা দিশি মুরগিতেই সীমাবদ্ধ ছিল। এ বারে দিল্লির ভোট। বাজির দামও চড়া।
আইপিএলের বাজারে বাজি-কারবার সকলেরই জানা। নাইট রাইডার্স বিদায় নিয়েছে। বেমক্কা বাজি হেরেছেন অনেকেই। এখনও চেন্নাই সুপার কিংস কিংবা দিল্লি ডেয়ার ডেভিলসের জন্যও অনেকেই টাকা ঢালছেন। তবে বাজিধরদের অনেকেই এখন ব্যাট ছেড়ে ভিভিপ্যাট নিয়ে মেতেছেন।
বাজির ঘোড়া কখনও ঘুরছে মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী আবু হেনার দিকে, কখনও ঝুঁকছে ওই কেন্দ্রেরই সিপিএম প্রার্থী বদরুদ্দোজা খানের দিকে। মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী আবু তাহেরের ক্ষেত্রে অনেকেই ঝুঁকি নিচ্ছেন না। ফলে দরও ঘোরাফেরা করছে হাজার খানেকের মধ্যেই।
ডোমকলের বাজিধররা অবশ্য জঙ্গিপুর কেন্দ্র নিয়ে তেমন উৎসাহী নন। তবে বাজির দাম সবথেকে চড়া বহরমপুর কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী অধীর চৌধুরীর ব্যাপারে। তাঁর জয় নিয়ে বাজিধরদের কোনও সংশয় নেই। তাই তাঁরা বাজি ধরছেন অধীরের জয়ের মার্জিন নিয়ে।
ডোমকলের এক বুকি বলছেন, ‘‘অধীরের জেতা নিয়ে আমাদের কোনও সংশয় নেই। তাই তাঁর দর কমের দিকে। মানে ধরুন, অধীর জিতলে দশ হাজার। হেরে গেলে পাক্কা এক লক্ষ টাকা।’’
মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশের এক কর্তা বলছেন, ‘‘আইপিএল নিয়ে বাজি কিংবা জুয়ার কথা অনেক শুনেছি। লালগোলায় সেটা খুব সংগঠিত ভাবে চলে। এর আগে বেশ কয়েক জন ধরাও পড়েছে। কিন্তু ভোটের হার-জিত নিয়ে এমন বাজির কথা আগে শুনিনি। বিষয়টি একেবারে বেআইনি। আমরা নজরও রাখছি। খোঁজ পেলেই গ্রেফতার করব।’’
ডোমকলের আর এক বুকি আবার রাজনীতির পোড়খাওয়া কর্মী। তিনি বলছেন, ‘‘আগেও ভোটের হার-জিত নিয়ে অনেকে বাজি ধরত। তবে গোটাটাই চলত মুখে মুখে। ভোটের ফল বেরোনোর পরে আর কারও পাত্তা পাওয়া যেত না। এখন কিন্তু সে সব দিন আর নেই। গোটাটাই অত্যন্ত গোপনে ও পেশাদারদের মতোই চালানো হচ্ছে।’’
ভোট ফুরোলেও যেমন প্রার্থীরা স্বস্তিতে নেই, তেমনি ঘুম উড়ছে বাজিধরদেরও। সকলেই তাকিয়ে আছেন আগামী ২৩ মে-র দিকে।
দিল্লির কুর্সিতে তা হলে কে বসছেন, মোদী না রাহুল? গুমোট চায়ের দোকান থেকে উড়ে এল— হয়ে যাক বাজি!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy