Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Crime

Crime: যেন সিনেমার চিত্রনাট্য! বেয়াই সেজে মেয়ের শ্বশুরবাড়ি থেকে দু’লক্ষ টাকা চুরি করে উধাও

মেয়ের কাকা পরিচয়ে আশ্রয়। ১২ দিনের মধ্যে সুযোগ বুঝে টাকা নিয়ে চম্পট।

গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২৩:০৪
Share: Save:

মনে পড়তে পারে সত্যজিৎ রায়ের ‘আগন্তুক’ সিনেমার কথা। মনমোহন মিত্র হঠাৎ উদয় হয়েছিলেন এক আত্মীয়ের বাড়ি। আত্মীয়েরা সম্পর্ক নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মনমোহন প্রমাণ করেছিলেন, আত্মার কাছের লোক তিনি। সিনেমায় সব সম্পত্তি দান করে গিয়েছিলেন ওই আত্মীয়কে। কিন্তু বাস্তবে তেমনই এক আগন্তুক এসে, আত্মীয় পরিচয় দিয়ে বাড়িতে থেকে, খেয়ে শেষে টাকা নিয়ে চম্পট দিল। যাকে বলে একেবারে সিনেমার কায়দায় চুরি! ঘটনাটি ঘটেছে নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জ এলাকায়। ইতিমধ্যে ওই ব্যক্তির নামে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তদন্ত করছে পুলিশ।
কৃষ্ণগঞ্জের দুর্গাপু্র এলাকার পুকুরপাড়ার বাসিন্দা অমর বিশ্বাস পেশায় কৃষক। অমর তাঁর বড় ছেলের বিয়ে দেন হাঁসখালির গাজনা কমলপুরের বাসিন্দা অসীম শিকদারের মেয়ে অদিতির সঙ্গে। অসীমের পরিবারের বক্তব্য, তাঁদের গাজনার বাড়িতে কয়েক দিন আগে এক ব্যক্তি এসে উপস্থিত হন। তিনি নিজেকে অসীমের ‘ভাই’ বাবলু শিকদার বলে পরিচয় দেন। দাবি করেন তিনি দূর সম্পর্কে অসীমের ভাই হন। অসীম সত্যতা যাচাই করতে আত্মীয় পরিজনের বিষয়ে সবিস্তার জানতে চান বাবলুর কাছে। এমন করে বাবলু সব বলে যান, যেন অনেক দিনের চেনা। অসীমের পরিবার ক্রমে বিশ্বাস করতে শুরু করে, হয়তো সময়ের ব্যবধানে দেখা হচ্ছে বলে আত্মীয়কে চিনতে পারছেন না তাঁরা। বাবলু ধীরে ধীরে অনেক অতীতের কথা বলেন। অনেক ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে আদায় করে নেন বিশ্বাস। এ ভাবেই অসীমের বাড়িতে আশ্রয় পান বাবলু।

অসীমের বাড়িতে থেকে বাজার করা, জিনিসপত্র কেনা— সবই করে পরিবারের সকলের মন জয় করে নেন বাবলু। দু’দিনের মধ্যে পরিবারের সকলের নয়নের মণি হয়ে ওঠেন। এ কথা অসীম তাঁর মেয়েকে ফোনে জানান। কথা শুনে মেয়ে বাবাকে বলেন, ‘‘তুমি কাকাকে বাড়ি নিয়ে এস।’’ কাছাকাছি বাপেরবাড়ি হওয়ায় অসীম মেয়ের কথা ফেলতে পারেননি। মেয়ের ইচ্ছা পূরণ করতে সটান কাকাকে নিয়ে মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে হাজির হন।

মেয়ে অদিতির শ্বশুরবাড়ির পরিবারের সঙ্গেও মিশে যান বাবলু। অসীম মেয়ের বাড়ি থেকে চলে গেলেও থেকে যান তিনি। বাড়িতে পাকা ছাদ দেওয়ার পরিকল্পনা থেকে নতুন সিমকার্ড তুলে দেওয়ায়, অদিতির শ্বশুর অমর সব বিষয়েই বাবলুর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করেন। ক্রমে নির্ভরতা বাড়তে থাকে। বাবুলর কথাতেই পাট বিক্রি করে মোট ১ লক্ষ ৬০ হাজার পান অমর। তিনি ভাবেন, এই টাকার সঙ্গে জমানো কিছু অর্থ মিলিয়ে বাড়িতে ছাদ দেবেন। পাশে দাঁড়াতে চান বাবলুও। এ ভাবে মোট ১২ দিন অমরের বাড়িতে ছিলেন বাবলু। তার পর হঠাৎই এক দিন বাবলু বলেন, ‘‘আমাকে জরুরি কাজে বনগাঁ যেতে হবে।’’ ভাল মনে বেয়াইকে স্টেশনে ছেড়ে দিয়ে আসেন অমর।

তার পর হঠাৎই খোঁজ পড়ে জমানো টাকার। দেখা যায়, সব টাকা উধাও। মোট দু’লক্ষ ৩০ হাজার টাকা নেই। বাবলুকে ফোন করলে দেখা যায়, তা বন্ধ। মাথায় হাত পড়ে পরিবারের। বুঝতে অসুবিধা হয় না, আত্মীয় পরিচয়ে ঠকিয়ে, টাকা চুরি করে পালিয়েছেন ‘বেয়াই’। বাড়ির বৌমা অদিতি জানিয়েছেন, ‘‘শ্বশুরমশাই টাকা খোয়া যাওয়ার শোকে খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন প্রায়। আত্মহত্যাও করার চেষ্টা করেছেন। ওঁর দুই ছেলে। তাঁরাও বাইরে কাজে গিয়েছেন। এখন কী করব ভেবে উঠতে পারছি না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Theft
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy