সাধারণ বা বিলাসবহুল ভেসেলে ভ্রমণের তুলনায় ক্রুজ়ে ভ্রমণ অনেক বেশি খরচসাপেক্ষ। —প্রতীকী চিত্র।
শান্ত সমুদ্রপথে ক্রুজ়-ভ্রমণ ইউরোপ এবং লাতিন আমেরিকার বহু দেশে জনপ্রিয়। ক্যারিবিয়ান, বাহামা, মায়ামি কিংবা মেক্সিকোর সমুদ্রে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ পর্যটক ক্রুজ়ে সফর করেন। ভারতে গোয়া এবং কেরলে ক্রুজ়ে পর্যটকদের ভ্রমণের চল থাকলেও নদীপথে বিলাসবহুল ক্রুজ়ের ব্যবহার সে অর্থে হয়নি। গঙ্গা তথা হুগলি নদীকে কেন্দ্র করে এখন সেই সম্ভাবনাই তৈরি হয়েছে।
গঙ্গার দু’ধারের বিভিন্ন প্রাচীন জনপদ, তাদের ইতিহাস ছাড়াও নদীর বিস্তৃত গতিপথের নানা বৈচিত্র দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে। পর্তুগিজ, ওলন্দাজ, ফরাসি ঔপনিবেশিক সময়ের বিভিন্ন দ্রষ্টব্য ছাড়াও গঙ্গার বিভিন্ন ঘাট, শান্তিপুরের তাঁত থেকে মুর্শিদাবাদের ইতিহাস— সবই উঠে আসছে জলপথে এই ভ্রমণে। তবে সাধারণ বা বিলাসবহুল ভেসেলে ভ্রমণের তুলনায় ক্রুজ়ে ভ্রমণ অনেক বেশি খরচসাপেক্ষ। পাঁচতারা হোটেলের যাবতীয় স্বাচ্ছন্দ্য ছাড়াও কন্টিনেন্টাল খাবারের সুবিধা-সহ ক্রুজ়ের কেবিনভাড়া দিনে ন্যূনতম ২৫ হাজার টাকা বলে সূত্রের খবর। ‘ইনল্যান্ড ওয়াটারওয়েজ় অথরিটি অব ইন্ডিয়া’-র সহযোগিতায় গত বছর জানুয়ারি মাসে ভারতের প্রথম নদীকেন্দ্রিক ক্রুজ় ‘গঙ্গাবিলাস’-এর যাত্রার সূচনা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বারাণসী থেকে বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশ হয়ে অসমের ডিব্রুগড় পর্যন্ত প্রায় ৪০০০ কিলোমিটার নদীপথ জুড়ে ব্যাপ্ত ওই সফর। টানা ৫১ দিনের সফরে দু’টি দেশ ছাড়াও পাঁচটি রাজ্য এবং ২৭টি নদীপথ ছুঁয়ে ওই সফরের পরিকল্পনা করা হয়।
ওই ব্যবস্থায় একটি বেসরকারি সংস্থা ‘গঙ্গাবিলাস’ ছাড়াও আরও তিনটি ক্রুজ় কলকাতা এবং বারাণসীতে চালাচ্ছে। প্রায় ৬২ মিটার লম্বা এবং ১২ মিটার প্রশস্ত ক্রুজ় যাতে সর্বত্রই অন্তত ১.৯ মিটার গভীর জল পায়, তা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করেছে ভারতের অন্তর্দেশীয় নদী পরিবহণ পর্ষদ। শীতের মরসুমে ওই সংস্থা সুন্দরবনেও পাঁচ-ছ’দিনের ক্রুজ় সফরের প্যাকেজ তৈরি করেছে। সংস্থা সূত্রের খবর, বিলাসবহুল ক্রুজ় সফরে বিভিন্ন দ্রষ্টব্য খুব কাছ থেকে ঘুরিয়ে দেখানোর জন্য স্থানীয় পরিকাঠামো এবং গাইডদের উপরে নির্ভর করছেন তাঁরা। ক্রুজ় থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী পর্যটকদের লোকালয়ে নিয়ে গিয়ে স্থানীয় রীতিনীতি, শিল্প, সংস্কৃতি এবং বাজারের সঙ্গে পরিচয় করানো হচ্ছে। ওই সব পর্যটকদের সফরের ফলে পর্যটনকেন্দ্রিক জীবিকারও প্রসার ঘটছে বলে জানাচ্ছেন ওই ক্রুজ় সংস্থার অধিকর্তা অন্তরা গরিমেলা। তিনি জানান, গঙ্গার দু’প্রান্তের বিভিন্ন জনপদের ইতিহাস ভারতের সভ্যতা-সংস্কৃতির আলাদা আলাদা অধ্যায়কে তুলে ধরে। নদীর মনোরম আবহাওয়ায় পর্যটকদের কাছে ওই সব বৈশিষ্ট্যই তথ্য সহকারে তুলে ধরা হয়। সুযোগ থাকলে আহারেও তুলে ধরা হয় বিশেষত্ব।
তবে, বিদেশি পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে ক্রুজ়ের রেস্তরাঁয় খাবার এবং পানীয় তৈরি, পরিবেশনে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে হয়। দীর্ঘ নদীপথের পুরোটা সফর না করে বহু যাত্রী কলকাতা থেকে মুর্শিদাবাদ বা সুন্দরবন, কিছু ক্ষেত্রে কলকাতা থেকে বারাণসী সফর করেন। অনেকে আবার শুধুই বারাণসীতে ক্রুজ়ে দুই বা তিন রাত কাটান। পর্যটকদের চাহিদা অনুযায়ী ওই সব প্যাকেজ পরিবর্তিত হয়। নদীপথে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ছাড়াও বৈচিত্রময় নদীপথ হিসেবে গঙ্গা এবং ব্রহ্মপুত্রকে একত্রে তুলে ধরার উদ্দেশ্যেই ওই পর্যটনের প্রসার ঘটানো হচ্ছে বলে খবর।
তবে, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ক্রুজ় পর্যটন জলপথে দূষণ বাড়াচ্ছে বলেও অভিযোগ। স্পেন এবং ইটালির মতো দেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে ক্রুজ় সফরে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। গঙ্গায় ব্যবহৃত ক্রুজ়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দিকে বিশেষ ভাবে লক্ষ রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংস্থা কর্তৃপক্ষ। বর্জ্য কোনও ভাবেই জলে না ফেলে তা সংগ্রহ করে বাইরে ফেলার ব্যবস্থা রয়েছে তাঁদের। পাশাপাশি, সৌর বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়িয়ে ডিজ়েলের ব্যবহার কমানোর চেষ্টা করছে ক্রুজ়গুলি।
অন্তর্দেশীয় নদী পরিবহণ পর্ষদের তৎপরতায় এখন একাধিক সংস্থা মাঝারি খরচের ক্রুজ় এবং ভেসেল পরিষেবা শুরু করেছে। গঙ্গার বটানিক্যাল গার্ডেন সংলগ্ন জেটি ছাড়াও অন্য কয়েকটি জেটি থেকে ওই সব ভেসেলের পরিষেবা চলছে। সেখান থেকে চন্দননগর, মুর্শিদাবাদ, বারাণসী, গঙ্গাসাগর-সহ নানা গন্তব্যে বিভিন্ন সময়ে পর্যটকদের নিয়ে
যাওয়া হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy