শান্তিপুরে ভুয়ো বিধবা ভাতা কাণ্ড ঘিরে ফের যুযুধান সরকার-বিরোধী। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ চেয়ে অজান্তেই ‘বিধবা ভাতা’ পেয়েছেন বলে অভিযোগ ছিল নদিয়ার শান্তিপুরের শেফালি দে’র। ‘অজান্তে’ ভুল বলে মানতে রাজি হয়নি স্থানীয় প্রশাসন। শেফালির বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে দিয়েছিলেন শান্তিপুরের বিডিও সন্দীপ ঘোষ। আনন্দবাজার অনলাইনে সে খবর প্রকাশিত হওয়ার পরে তা নিয়ে রাজ্য স্তরে রাজনীতির পারদ চড়তে শুরু করেছে। রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপির দুই সর্বোচ্চ নেতা এই ঘটনা নিয়ে বিঁধেছেন রাজ্য প্রশাসন এবং শাসকদলকে। অন্য দিকে প্রশাসন জানিয়ে দিল, জেনেবুঝেই সরকারকে ‘ভুল তথ্য’ দিয়ে বিধবা ভাতা নিচ্ছিলেন শেফালি।
মঙ্গলবার আনন্দবাজার অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছিল সধবা শেফালির ‘বিধবা ভাতা’ পাওয়ার খবর। শান্তিপুর পুরসভার ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা শেফালির স্বামী পরেশ দে জীবিত। কিন্তু ২০২২ সাল থেকে শেফালি বিধবা হিসেবে ভাতা পাচ্ছিলেন। দে পরিবারের দাবি, তাঁরা উত্তম দেবনাথ নামে এক স্থানীয় তৃণমূল কর্মীর হাতে নিজেদের নথি জমা দিয়েছিলেন। ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ পাওয়ার জন্য আর্জি জানিয়েছিলেন। ওই তৃণমূল কর্মী যে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ না দিয়ে ‘বিধবা ভাতা’র ব্যবস্থা করেছিলেন, সে কথা তাঁরা জানতেন না বলে দে পরিবারের দাবি।
স্থানীয় প্রশাসন এই দাবি মানতে নারাজ। বিডিও-র বক্তব্য, শেফালিরা সচেতন ভাবেই সরকারকে ‘ভুল’ তথ্য দিয়েছেন। কিন্তু তা নিয়ে রাজনৈতিক উত্তাপ চড়তে শুরু করেছে। রাজ্য বিজেপির সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার মঙ্গলবারই বিষয়টি নিয়ে সমাজমাধ্যমে সরব হয়েছিলেন। বুধবার রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করেছেন। সুকান্ত মঙ্গলবার এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, ‘‘স্বামী জীবিত, অথচ সরকারি নথিতে স্ত্রী ‘বিধবা’! মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণায় এখন জালিয়াতি দ্বারা সবই সম্ভব বাংলায়।’’ সুকান্তের দাবি, ‘‘এমন আশ্চর্য ঘটনা শুধুমাত্র একটি-দু’টি নয়। প্রকাশ্যে না এলেও অধিকাংশ জেলাতেই নিচু স্তরের তৃণমূলের প্রতারক নেতারা এমন বহু ঘটনা ঘটিয়ে চলেছেন। যার জেরে প্রতিনিয়ত সাধারণ দরিদ্র মহিলারা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।’’
বুধবার শুভেন্দু মুখ্যমন্ত্রীর একটি সাম্প্রতিক বক্তব্যের অংশবিশেষ সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছেন। সেখানে মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘‘লক্ষ্মীর ভান্ডারের মা-বোনেদের বলব, আগামী দিনে আপনাদের বিধবা ভাতার জন্য কান্নাকাটি করতে হবে না, ছুটতে হবে না।’’ ওই ভিডিয়ো পোস্ট করে শুভেন্দু লিখেছেন, ‘‘যেমন কথা তেমন কাজ! মুখ্যমন্ত্রীর বাণীকে ধ্রুবসত্য প্রমাণ করতে চটিচাটা প্রশাসন ও তাঁর দলীয় নেতৃত্ব মাঠে নেমে পড়েছেন। লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রাপক সধবা গৃহবধূকে জোরপূর্বক বিধবা ভাতা পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিল নদিয়া জেলার শান্তিপুরের পঞ্চায়েত এবং বিডিও। অনুঘটক সেই কাটমানিখেকো স্থানীয় তোলামূল নেতৃত্ব।’’
স্থানীয় বিডিও সোমবারেই শান্তিপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগপত্রে শুধু শেফালি নয়, উত্তমের নামও রয়েছে। বিডিও বলছেন, ওই জালিয়াতির সঙ্গে যাঁরা যুক্ত, তাঁদের সকলের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করা হবে। শেফালি বা তাঁর শাশুড়ি পদ্মা যে অভিযোগ তুলছেন, তাতে আস্থা রাখতে বিডিও নারাজ। শুধু ‘দালাল’ উত্তম নন, শেফালিরাও জালিয়াতির বিষয়ে অবহিত ছিলেন বলে বিডিও-র দাবি।
শেফালির শাশুড়ি পদ্মা দে বুধবারেও প্রশাসনের অভিযোগের বিরোধিতা করেছেন। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘আমার ছেলের ডেথ সার্টিফিকেট না থাকা সত্ত্বেও বৌমাকে বিধবা ভাতা দিল কী করে?’’ একই প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধী দলনেতাও। সমাজমাধ্যমে শুভেন্দু লিখেছেন, ‘‘জীবিত মানুষের নামে ডেথ সার্টিফিকেট ইস্যু না হওয়া সত্ত্বেও কী করে তাঁর স্ত্রীর নামে বিধবা ভাতা চালু হয়ে গেল, তার তদন্ত হওয়া উচিত। এ রকম আরও কত ঘটনা ঘটেছে রাজ্যে, তার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চাই।’’
শান্তিপুরের বিডিও অবশ্য এতে প্রশাসনের কোনও ভুল দেখছেন না। তিনি বুধবার আবার বলেন, ‘‘যিনি ভাতা পাচ্ছেন, তিনি জানেন না যে তিনি কিসের ভাতা পাচ্ছেন, এটা হতেই পারে না! প্রাথমিক ভাবে মনে হয়েছে, সম্পূর্ণ পরিকল্পিত ভাবে সরকারকে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করে ভাতা নিয়েছেন ওই মহিলা। তাঁর দাবি অনুযায়ী, তাঁর সঙ্গে যুক্ত আর এক জনের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’’ বিডিও আরও বলেন, ‘‘নিয়ম অনুযায়ী, অনৈতিক ভাবে পাওয়া সমস্ত টাকা প্রথমে সরকারি কোষাগারে ফেরত দিতে বলা হয়েছিল। উল্টে ওঁরা প্রশাসনের বিরুদ্ধে কুৎসা রটিয়েছেন। তাই এ বার আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy