ছয় আনা পরিবারের বড়মা। নিজস্ব চিত্র।
একই পরিবারে ১২ টি কালীপুজো। আর তাতেই মত্ত গোটা গ্রাম। খড়গ্রাম থানার এড়োয়ালি রায়চৌধুরী পরিবারের কালীপুজোয় সবাই যেন এক রাতের রাজা।
প্রায় পৌনে তিনশো বছর পার করেও এই পারিবারিক কালীপুজো এলাকার সবথেকে বড় উৎসব। শুধু খড়গ্রাম নয়, পাশ্ববর্তী বড়ঞা, কান্দি এমনকী বীরভূম জেলা থেকেও বহু মানুষ এই অঞ্চলে আসেন কালীপুজোর রাতে। রায়চৌধুরী পরিবারের পুজো তাঁদের কাছে এড়োয়ালি রাজ পরিবারে পুজো বলেই প্রসিদ্ধ।
জানা যায়, রাজা রামজীবন রায় এই পুজো প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। রামজীবন রায়ের বংশধররা পরবর্তীকালে ব্রিটিশ সরকারের দেওয়া চৌধুরী উপাধিটিও ব্যবহার করতেন। সেই থেকেই রায়চৌধুরী পরিবার। কালের নিয়মে রাজা গিয়েছেন, গিয়েছে তার রাজপাট। এখন সাধারণ মানুষের মতোই জীবন যাপন করেন রাজ পরিবার। কিন্তু কালীপুজোর রাতে সকলেই এক রাতের রাজা। সে কথা বলছিলেন রাজ পরিবারের সদস্য তপন রায়চৌধুরী।
তিনিই জানান, মোট ১২ টি কালীপুজো হয় এখনও। এতগুলি কালীপুজো কেন? তার পিছনেও রয়েছে এক ইতিহাস। কালের নিয়মে ভাগাভগি হয়ে যায় রায়চৌধুরী পরিবার। রাজা রামজীবন রায়ের বংশধর দেবদত্ত রায়চৌধুরী, ইন্দ্রমুনি রায়চৌধুরী ও শ্যাম সুন্দর রায়চৌধুরীরা ছিলেন তিন ভাই। মেজোভাই ইন্দ্রমুনির অকাল প্রয়াণে সম্পত্তির ভাগাভাগি শুরু হয়। দেবদত্ত এবং শ্যামসুন্দর নিজেরা পাঁচ আনা সম্পত্তি নিয়ে বিধবা ভ্রাতৃবধূকে ছয় আনা ভাগ দেন। তারপর থেকে তিন শরিকের বাড়িতে ভাগ হয়ে যায় ১২ টি কালীপুজো।
বড় পাঁচআনা পরিবারে চারটি পুজো। ছোট পাঁচআনার তিনটি পুজো হয়। এছাড়া অপর একটি পুজো হয় এই দুই পরিবারে পালা করে। এক বছর বড় তরফ অন্য বছর ছোট তরফের পালা পড়ে। এই কালীর নাম ষষ্ঠীকালী। ছয় আনা পরিবার অর্থাৎ ইন্দ্রমুনির তরফে চারটি পুজো হয়।
প্রত্যেক কালীর পৃথক পৃথক নাম আছে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই কালীকে ‘বুড়ি’ নামে ডাকা হয়। যেমন বড় পাঁচ আনা পরিবারের যে চারটি কালী আছে তাদের নাম বেলবুড়ি, কুলবুড়ি, টুঙ্গিবুড়ি ও শ্যামরূপী। ছোট পাঁচ আনা পরিবারের যে তিনটি কালী আছে তাদের নাম ধর্মবুড়ি, আমারবুড়ি ও মৌলবুড়ি। আর ছয় আনা পরিবারের চারটি কালীর নাম বড়মা, মঠবুড়ি, নিমবুড়ি ও চাতরবুড়ি। অনেকগুলি নামই গাছ নামাঙ্কিত। পরিবারের দাবি মন্দিরগুলি যে সব গাছের নীচে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সেই অনুযায়ী কালীর নামকরণ করা হয়।
এই পারিবারিক পুজোগুলিতে ‘সবাই রাজার’ ভাবধারা বহুল প্রচলিত। রায়চৌধুরীদের বংশধর শুভময় রায়চৌধুরী ও বিকাশ রায়চৌধুরীরা জানান, প্রতিটি পরিবারে তিনটি করে পুজো হত। আর প্রতিটি পরিবারেই একটি পুজো নির্দিষ্ট ছিল গোমস্তাদের জন্য। পুজোর সব খরচ খরচা রাজ পরিবার বহন করলেও গোমস্তাদের জন্যই ছিল যাবতীয় আয়োজন। এখন আর সেই রাজত্ব নেই।
বিকাশ রায়চৌধুরী বলেন, “পুজো আমাদের পারিবারিক। তবে এলাকার বাসিন্দা, পুলিশ, প্রশাসন আমাদের খুব সাহায্য করে। প্রায় পৌনে তিনশো বছর ধরে ওই পুজো হয়ে আসছে। আজও এলাকার সব মানুষ এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে থাকেন, ভালবাসেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy