স্কুলে নথি অনুযায়ী মেয়ের বয়স মেরেকেটে বারো। সেই বয়সেই মেয়েকে পাত্রস্থ করতে চান নাছোড় বাবা-মা । পাত্রও দেখা হয়ে গিয়েছে। বাড়ির উঠোনে বাঁধা হয়েছে প্যান্ডেল। আত্মীয় পরিজনে গমগম করছে গোটা বাড়ি। পাত্রীর গায়ে হলুদ পর্যন্ত সারা। এমনকী পাত্রীকে আর্শীবাদ করতে হাজির পাত্রপক্ষের লোকজনও। এমন সময়ে একদল সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়ে বিয়েবাড়িতে ঢুকলেন সুতি-১ ব্লকের যুগ্ম বিডিও সুবীর দাস ও আহিরণ পুলিশ ফাঁড়ির আইসি অক্ষয় পাল। বিয়েবাড়ির ভোজ খেতে নয়। নাবালিকা মেয়ের বিয়ে রুখতে। অনেক টালাবাহানার পর নরমে-গরমে পাত্রীর বাবা-মাকে বুঝিয়ে শেষ পর্যন্ত বন্ধ করা গেল বিয়ে।
কন্যাশ্রী প্রকল্প চালু হওয়ার পরেও পরিস্থিতি যে একই থেকে গিয়েছে তারই নমুনা আহিরণের ওই নাবালিকার বিয়ে। পাত্রীর বাবা মায়ের যুক্তি, ভাল পাত্র পেয়ে হাতছাড়া করতে চাননি তাঁরা। তাই বয়সের জন্য অপেক্ষা না করে তড়িঘড়ি মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। তাই পুলিশের সামনে মিথ্যে বলতেও কসুর করেননি পাত্রীর মা। আইসিকে তিনি জানান, মেয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ে। বয়স আঠেরো পেরিয়ে গিয়েছে। সুতরাং বিয়েতে বাধা দেওয়ার এক্তিয়ার প্রশাসনের নেই। কিন্তু পাত্রীকে দেখে সন্দেহ হয় তাঁদের। অনেক খোঁজখুঁজির পর যখন পাত্রীর স্কুলে যাওয়া হলে সেখানে কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা যায় ষষ্ঠ শ্রেণির ওই ছাত্রীর বয়স মাত্র ১২ বছর ৪ মাস। তখন আর মিষ্টি কথায় অনুরোধ নয়। বরং কিছুটা কঠোর প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা। অল্প বয়েসে মেয়ের বিয়ে দিলে যে তাঁদের শাস্তি পেতে হবে তা বুঝিয়ে বলতে কিছুটা যেন নরম পাত্রীর মা। ঘটনার গুরুত্ব বুঝে এগিয়ে আসেন আত্মীয় পরিজনেরাও। তাঁরা বিষয়টি বুঝিয়ে বলতে বিয়ে বন্ধ করতে রাজি হন তিনি। মুচলেকা দিলেন সকলের সামনেই। ১৮ বছর বয়স না হওয়া পর্যন্ত মেয়ের বিয়ে দেবেন না। তাতে সই দিলেন বাবা-মা দু’জনেই।
এ দিকে, বেগতিক দেখে ততক্ষণে বাড়ির দিকে হাঁটা দিয়েছেন পাত্র পক্ষের লোকজনেরা। তাঁদেরই একজন বলেন, “পাত্রীর বয়স এত কম জানতাম না।” তাঁর কথায়, “বিয়ে বন্ধ করে ঠিকই করেছেন প্রশাসনের কতার্ব্যক্তিরা।” কম বয়েসি নাতনির বিয়ে বন্ধ হওয়ায় খুশি ৭৫ বছরের বৃদ্ধা ঠাকুমাও। তিনি জানান, তাঁর যখন বিয়ে হয় তখন তিনি মাত্র ১৪ বছরের। তাঁর অভিজ্ঞতায়, ওই বয়সে মন বা শরীর কোনোটাই বিয়ের উপযুক্ত নয়। বহু সমস্যায় পড়তে হয় মেয়েদের ওই বয়সে বিয়ে হলে। তাই তিনি ছেলেকে বলেছিলেন এত কম বয়সে মেয়ের বিয়ে না দিতে। কিন্তু ছেলে তাতে রাজি হয়নি আক্ষেপ তাঁর।
যুগ্ম বিডিও সুবীর দাস বলেন, “এত প্রচার সত্ত্বেও কম বয়সে বিয়ের ঘটনা সর্বত্র পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি।” তাই কন্যাশ্রী প্রকল্পের সুফল নিয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে সুতির স্কুলগুলিতে প্রচার করা দরকার বলে তিনি জানান। তাঁর কথায়, “প্রতিটি স্কুলের উচিত এটাকে শিক্ষার অঙ্গীভূত করে প্রচার চালানো।” তিনি জানান, আহিরণের ওই পরিবারকে বলা হয়েছে ব্লক অফিসে যোগাযোগ করতে। তাদের সবরকম ভাবে সাহায্য করার চেষ্টা করবে প্রশাসন। আইসি অক্ষয় পাল বলেন, “এখন প্রতিটি গ্রামেই সিভিক কর্মীরা কাজ করছেন। তাদের বলা হয়েছে কম এ ব্যাপারে নজর রাখতে।” এ ব্যাপারে পুলিশের পক্ষ থেকেও কিছু কর্মসূচী নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy