গমখেত দেখাচ্ছেন চাষিরা। —নিজস্ব চিত্র।
বীজ বুনে বিপাকে শতাধিক চাষি। ডোমকল থানার মোক্তারপুর, বিলাসপুর, নরজপুর, সেখালিপাড়া-সহ এলাকার চাষিদের দাবি, গাছের বয়স ৪০ দিন হওয়ার আগেই ডগায় ছোট ছোট শিষ দেখা দিচ্ছে। উন্নত গম চাষের জন্য সমবায় কৃষি ব্যাঙ্ক থেকে দেওয়া বীজ বুনে একটি গম থেকে একটি মাত্র গাছ হয়েছে। ফলে যে জমিতে বিঘা প্রতি ৬-৭ কুইন্টাল গম হওয়ার কথা, সেখানে দু’কুইন্টাল গমও হবে কিনা, তা নিয়ে তাঁরা সংশয়ে। এতে বিশেষ করে অসুবিধায় পড়েছেন ভাগ চাষি ও ঋণ নিয়ে চাষ করতে আসা মানুষ।
মোক্তারপুর-বিলাসপুর সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির কর্তাদের দাবি, বিস্কুট ও সুজি তৈরির জন্য একটি বেসরকারি কোম্পানি উৎকৃষ্ট মানের ওই বীজ সরবরাহ করেছিল। তাঁরা বলেন, “এমন হবে ভাবিনি। উন্নত গম বীজ বলে ঝকঝকে বীজ ধরিয়েছিল ওই কোম্পানি। ভাল ফলনের আশায় আমরা নিজেরাও ফেঁসে গিয়েছি। আমাদের ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নেওয়া চাষিরা বলে গিয়েছেন, ঋণের টাকা তাঁরা দিতে পারবেন না। ফলে ওঁদের পাশাপাশি বিপাকে আমরাও।” ডোমকল ব্লকের কৃষি আধিকারিক রমেন মণ্ডল বলেন, “বিষয়টি নিয়ে চাষিরা কয়েক দিন আগে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। ওই এলাকায় গিয়ে গোটা ঘটনা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এ দিকে বীজে ভাল ফলন হবে ভেবে বেশি করে সেচের কাজ করে জমিতে ভাল সার দিয়েছিলেন মোক্তারপুর গ্রামের চাষি ভিকু মণ্ডল। কিন্তু নিজের বিঘা দেড়েক জমিতে ওই গম চাষ করেল কার্যত তাঁর মাথায় হাত। তাঁর কথায়, “এক বিঘা জমিতে গম চাষ করতে ৫-৬ হাজার খরচ হয়। লাভ থাকে মেরেকেটে হাজার দুয়েক টাকা। যা অবস্থা, এখন গম কিনে খেতে হবে আমাদের। কী ভাবে সংসার চলবে বুঝতে পারছি না।”
দেড় বিঘা জমির ভাগ চাষি সামসুল মণ্ডল বলেন, “এখনও সারের দোকানে ধার বাকি। জমির মালিক বলে দিয়েছেন, গম হোক না হোক, বিঘায় ৫ মণ গম নেবেন। ভেবেছিলাম উন্নত বীজ থেকে ভাল গম পাব। কী থেকে কী হয়ে গেল বুঝতে পারছি না।”
পাশের জমিতে যখন ঝাঁকে ঝাঁকে গম হাওয়ায় দুলছে, সে সময়ে তাঁদের জমিতে টিম টিম করছে উন্নত বিজের গম। মোক্তারপুর গ্রামের হাসান মণ্ডলের কথায়, “সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির কাছ থেকে ঋণ নিয়ে গম বুনেছি। ওদের বলে এসেছি ঋণ শোধ করতে পারব না।”
কৃষি উন্নয়ন সমিতির সম্পাদক ফেরেসতুল্লা মণ্ডল বলেন, “ভাল গম ফলানোর জন্য ওই কোম্পানি লখনউ থেকে বীজ এনে আমাদের দেয়। এলাকার বেশ কিছু ব্যবসায়ীকেও ওরা সেই বীজ দিয়েছিল। বিঘা প্রতি ১৮-২০ মণ হারে ফলন হবে বলে দাবি করেছিল ওরা। কিন্তু এখন দেখছি ২ মণ গমও পাবেন না চাষিরা।”
সমিতির ম্যানেজার নাজির হোসেন বিশ্বাস বলেন, “কমিশন দিতে চেয়ে চাষিদের বীজ বেচার জন্য ওই কোম্পানি বারবার আমাদের অনুরোধ করে। শেষে চাষিদের ভালর কথা ভেবে আমরা ৬০ ব্যাগ গম ৩৩ টাকা কেজি দরে বেচেছি।” তিনি জানান, প্রায় ১২৫ জন চাষি ওই গম চাষ করেছেন। এখন কোম্পানির লোকজনেরও হদিশ মিলছে না।
কোম্পানির এক ফ্লিড সুপার ভাইজার সেরজাহান হোসেনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে আমি কিছুই বলতে পারব না।” এমনকি তাঁর কোম্পানির কর্তাদের ফোন নম্বর দিতেও রাজি হননি তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy