Advertisement
২১ নভেম্বর ২০২৪
Bengali Serial Novel

খরস্রোত

হরপার্বতী হাসল। বলল, “আমরা আসার পথে হেমেন্দ্রমোহন বসুর বাড়ি পেরিয়ে এসেছি। তুমি হয়তো খেয়াল করোনি। বাড়ির গায়ে পাথরের ফলকে লেখা আছে, ‘এইচ. বোস’।

ছবি কুনাল বর্মণ।

ছবি কুনাল বর্মণ।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২৪ ০০:৪৪
Share: Save:

পূর্বানুবৃত্তি: শশিকান্ত আজকাল একটু আনমনা হয়ে থাকে। কাজকর্মে বিশেষ উৎসাহ পায় না। তাকে নিয়ে চিন্তায় পড়েন পিসি নিভাননী। কবরেজ দেখানোর পরামর্শ দেন। বৌবাজারে এক বন্ধুর বাড়িতে বন্ধুর ঠাকুরদাদার শ্রাদ্ধানুষ্ঠান। সেখানে হরপার্বতীর সঙ্গে তারও নিমন্ত্রণ পড়ে। বৌবাজার যাওয়ার পথে ময়দানে বসে হরপার্বতীর জন্য অপেক্ষা করছিল শশিকান্ত। এক অচেনা তরুণের সঙ্গে তার কথা হয়। তার নাম গোপীনাথ সাহা। কথা হওয়ার একটু পরেই সেই তরুণ বোমা মেরে এক সাহেবকে খুন করে। ক্ষিপ্ত জনতা তার উপর চড়াও হয়। শশিকান্তর খুব ইচ্ছে হয় তাকে বাঁচানোর, কিন্তু সেখানে উপস্থিত হরপার্বতী বন্ধুকে গোলযোগ থেকে সরিয়ে আনে। কথায় কথায় জানা যায়, শশিকান্ত নিজে হিংসাত্মক বিপ্লবেরর সঙ্গে যুক্ত না হলেও সে বিশ্বাস করে, সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমেই স্বাধীনতা আসবে। কথায় কথায় তাদের গন্তব্য, হরিমোহনের বাড়ি এসে পড়ে।

হঠাৎই এক জন লোক এসে হরপার্বতীর সামনে বসে পড়ে তার দিকে তাকিয়ে বলল, “হরপার্বতী যে! এ বাড়িতে?”

হরপার্বতী উত্তর দিল, “হরিমোহনআমার বন্ধু, নীতীনদা। তুমি ভাল আছ তো? আর তো আমাদের বাড়ি যাও না?”

“খুব কাজের চাপ রে। দাদাকে বলিস এক দিন আসতে,” বলে উঠে পড়ে লোকটি। শশিকান্ত একটু অবাক হয়ে তাকিয়েছিল লোকটির দিকে, বিশেষ করে তার সাহেবি পোশাক তার দৃষ্টি আকর্ষণ করছিল বেশি।

ভদ্রলোক সামনে থেকে উঠে গেলে, সে হরপার্বতীকে বলল, “ভদ্রলোক কে?”

হরপার্বতী এ কথার সরাসরি উত্তর না দিয়ে একটা ছড়া বলল, যেটা শশিকান্তরও জানা—

“কেশে মাখো কুন্তলীন, অঙ্গবাসে দেল খোস।

পানে খাও তাম্বুলীন, ধন্য হোক এইচ বোস॥”

শশিকান্ত বলল, “এই ছড়াটা তো আমি শুনেছি। এইচ বোস তো হেমেন্দ্রমোহন বোস। কিন্তু তার সঙ্গে এই ভদ্রলোকের কী সম্পর্ক। হেমেন্দ্রমোহন তো মারাও গেছেন!”

হরপার্বতী হাসল। বলল, “আমরা আসার পথে হেমেন্দ্রমোহন বসুর বাড়ি পেরিয়ে এসেছি। তুমি হয়তো খেয়াল করোনি। বাড়ির গায়ে পাথরের ফলকে লেখা আছে, ‘এইচ. বোস’। নীতীনদা হচ্ছে কুন্তলীন, দেলখোস ও তাম্বুলীন-খ্যাত হেমেন্দ্রমোহন বোসের ছেলে। আমার দাদার বন্ধু। নীতীনদা এখন সিনেমা ও ফোটোগ্রাফি নিয়ে কাজ করছে। নামডাকও হয়েছে।”

শশিকান্ত অবাক হয়ে শুনছিল হরপার্বতীর কথা। হঠাৎ এক শীর্ণকায় ভদ্রলোক তাদের সামনে এসে বলল, “তোমরা তো ভোজন করোনি, বাবারা। যাও ভোজন করে নাও। বামুন কায়েত আলাদা আলাদা বসার জায়গা আছে, দেখে বসবে।”

হরিমোহন কাছেই দাঁড়িয়েছিল। ভদ্রলোকের উদ্দেশে বলল, “ওরা দু’জনেই ব্রাহ্মণ।”

“তা হলে তো আর কথাই নেই। ছাদে উঠে ডান দিকে চলে যাও,” বলে ভদ্রলোক চলে গেলেন।

হরপার্বতী হরিমোহনকে বলল, “তুমি মিথ্যে বললে কেন? আমি তো ব্রাহ্মণ নই!”

“কে দেখতে আসছে?” হাসতে হাসতে এ কথা বলে হরিমোহন দুই বন্ধুকে নিয়ে গেল ছাদে।

হরপার্বতীর এক মুহূর্ত আর ওই বাড়িতে থাকার ইচ্ছে ছিল না। তার ইচ্ছে করছিল, না খেয়ে ওই বাড়ি থেকে চলে যায়। নেহাত তাতে হরিমোহনকে বিড়ম্বনায় পড়তে হবে, তাই হরিমোহনের দেখানো পথে ছাদে উঠল। উঠেই সে শশিকান্তকে বলল, “তুমি ডান দিকের সারে বসো, ওখানে ব্রাহ্মণদের জায়গা, আমি ওই দিকটায় বসি।”

শশিকান্ত কোনও কথা বলার আগেই হরপার্বতী অব্রাহ্মণদের সারে গিয়ে বসে পড়ল। শশিকান্ত একটু দাঁড়িয়ে ব্রাহ্মণদের জন্য নির্দিষ্ট জায়গার দিকে পা বাড়াল।

খাওয়াদাওয়ার পর দুই বন্ধু যখন ওই বাড়ি থেকে বেরোল, হরপার্বতীর মুখ থমথম করছে রাগে।

শশিকান্ত তাকে বলল, “এক সঙ্গেই তো বসতে পারতাম, হরিমোহন যখন বলল...”

এ কথায় মোটেই আমল না দিয়ে হরপার্বতী বলল, “আমি আজ তোমার সামনে প্রতিজ্ঞা করলাম, আর কোনও দিন কোনও ব্রাহ্মণবাড়িতে জলস্পর্শ করব না।”

“কী বলছ, হর?” শশিকান্ত অবাক।

হরপার্বতী কোনও উত্তর দিল না। একটা ট্রাম আসছিল। একটু থামতেই সে উঠে পড়ল। দেখাদেখি শশিকান্তও উঠে পড়ল সেই ট্রামে। টুংটাং শব্দ করতে করতে ট্রাম এগিয়ে চলল শ্যামবাজারের দিকে।

৩৭

দক্ষিণেশ্বরে মায়ের মন্দিরে প্রায়ই যায় শশী। পঞ্চবটী বনের নির্জনতা তাকে খুব আকর্ষণ করে। সন্ধের পর এখানে বসে থাকলে গা ছমছম করে। ঘুটঘুটে অন্ধকার নেমে আসে চার দিকে। সামনে আর কিছু দেখা যায় না। কোনও শব্দও শোনা যায় না। শুধু জোয়ার থাকলে নদীর জল পাড়ে এসে ধাক্কা মারে, তার শব্দ শোনা যায়। ভূতপ্রেতে তার খুব একটা বিশ্বাস নেই। গ্রামের ও তার নিজের বাড়ির লোকেদের সে আপ্রাণ চেষ্টা করেছে বোঝাতে যে, ভূত বলে কিছু নেই। সবটাই মানুষের কল্পনা। কিন্তু, তাতে কোনও কাজ হয়নি। তাদের বিশ্বাসে বিন্দুমাত্র চিড় ধরেনি।

আজ শনিবার। বিকেলের দিকে, আপিস-ফেরতা শশিকান্ত এসেছে দক্ষিণেশ্বরে। মন্দিরে মা ভবতারিণী ও দ্বাদশ শিবমন্দিরে প্রণাম সেরে সে এসে পঞ্চবটী উদ্যানে প্রবেশ করেছে। বট, অশ্বত্থ, বিল্ব, অশোক ও আমলকী গাছের সমাহার বলেই এই স্থানটি পঞ্চবটী নামে পরিচিত। শ্রীরামকৃষ্ণদেব এখানে সাধনা করতেন। এখনও তাঁর অনুগামী শিষ্যরা কেউ কেউ সেই সাধনস্থল দর্শন করে যান। একটু আগেও তাঁদের কাউকে কাউকে এখানে ঘোরাঘুরি করতে দেখেছে শশিকান্ত। এখন তাঁরা কেউ নেই। শশিকান্ত গাছের তলায় চোখ বুজে বসে ছিল। এর মধ্যে কখন হামাগুড়ি দিয়ে অন্ধকার নেমে এসেছে খেয়াল করেনি শশিকান্ত। সে উঠে পড়ল। ধীরে ধীরে সামনের দিকে এগিয়ে চলল। খানিকটা এগোতেই পরিষ্কার শুনতে পেল, “এ দিকে নয়, ওই পথে, ডান দিকে।”

শশিকান্তর বুকের ভিতরটা ছ্যাঁত করে উঠল। তার তো অশরীরী আত্মায় বিশ্বাস নেই... লোকজনকেও সেটা বোঝানোর চেষ্টা করে... তা হলে... তা হলে এ কার কণ্ঠস্বর? মনের ভুল? না, ভুল তো হতে পারে না, সে নিজের কানে শুনেছে। শশিকান্ত ভয়ে ভয়ে পিছনে তাকাল। কাউকে না দেখতে পেয়ে, সামনের দিকে দু’পা এগিয়েও পিছিয়ে এল। তার পর ডান দিকের পথটাই নিল। দ্রুত বেশ কয়েক পা হাঁটার পর তার চেনা রাস্তা পেয়ে গেল। বাচস্পতি পাড়ায় হঠাৎ ঈশানের সঙ্গে দেখা। ঈশানই লক্ষ করেছে তাকে। বলেছে, “শশিকান্ত যে! এ পথে?”

অনেক দিন পর ঈশানকে দেখে শশিকান্ত প্রায় বাক্যহারা হয়ে গিয়েছিল। বলল, “একটু দক্ষিণেশ্বরে মায়ের মন্দিরে গিয়েছিলাম। প্রায়ই আসি এখানে।”

“ভাল, আমাদের দলে তো এলে না, এখন ধম্মকম্ম নিয়ে থাকো!” বলে হেসে উঠল ঈশান।

“তোমাদের দলে নাম লেখাতে গেলে, কী করতে হবে? শুনেছি, সেখানেও মা কালীর কাছে তিলক কেটে শপথ নিয়ে তবে দলে অন্তর্ভুক্ত হতে হয়...” শশিকান্ত বলল।

ঈশান তার জামার পকেট থেকে সিগারেট বার করে ধরিয়ে বলল, “তুমি ঠিকই শুনেছ, শশী। তবে সে সব আগে হত। যখন বারীন্দ্রদারা ছিলেন। তাঁরা আন্দামানে চলে যাওয়ার পর অন্য নিয়ম। তবে এ সব কথা এখানে আলোচনা করা ঠিক হবে না। তুমি বরং আমার সঙ্গে চলো আমার নতুন ডেরায়। সেখানে সব বলব।”

শশিকান্তর ইচ্ছে ছিল না যাওয়ার। তবু সরাসরি ‘না’-ও বলতে পারল না ঈশানকে। এটা তার স্বভাবের দোষ। কাউকে সরাসরি না বলতে পারে না। তা ছাড়া, শশিকান্তর আপত্তি করার সুযোগও ছিল না। শশিকান্তর একটা হাত ধরে ঈশান তত ক্ষণে তার নতুন ডেরার দিকে হাঁটতে শুরু করেছে।

বেশ কয়েক পা হাঁটতেই একটা ভাঙা বাড়ির সামনে এসে পড়ল ওরা। শশিকান্তকে ভিতরে নিয়ে গেল ঈশান। শশিকান্তর ভয় করতে লাগল, আবার কৌতূহলও হল। একটা লম্বা করিডর পেরিয়ে ওরা একটা ঘরে এসে পৌঁছল। ঘরটিতে স্যাঁতসেঁতে গন্ধ। তার সঙ্গে অন্য একটি গন্ধও শশিকান্তর নাকে এল। ঈশানকে এ ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই সে বলল, “তুমি যে গন্ধটা পাচ্ছ, ওটা পিকরিক অ্যাসিডের গন্ধ। বোমা তৈরিতে লাগে।”

শশিকান্ত সভয়ে ঈশানের দিকে তাকাল।

ঈশানের নির্বিকার মুখে হাসি, “এসো, বোমা যারা তৈরি করে, তাদের সঙ্গে তোমার আলাপ করিয়ে দিই...” বলে এক অতি কৃশকায়, মাঝারি উচ্চতার যুবকের দিকে আঙুল নির্দেশ করল। যুবকের নাম ধ্রুবেশ চট্টোপাধ্যায়। ঘরে আর এক জন যুবক ছিল। ঈশান তার সঙ্গেও আলাপ করিয়ে দিল শশিকান্তর। তার নাম রাজেন লাহিড়ী।

শশিকান্ত এই দু’জনের মুখ দেখে বুঝল, এরা কেউই খুব খুশি নয় তাকে এই বোমা তৈরির কারখানায় নিয়ে আসাতে। মুখে অবশ্য তারা এ সব কিছু বলল না। শুধু ঈশানকে আড়ালে ডেকে নিয়ে গিয়ে কিছু বলল। হয়তো তার এই গর্হিত কাজের জন্য ধমক দিল। কিংবা দিল না, কে জানে! কিন্তু ঈশান তাকে এখানে নিয়ে এল কেন? সে কি ধরেই নিয়েছে যে, সে তাদের দলে যোগ দেবে? এমন কথা তো বলেনি শশিকান্ত! তা হলে?

ঈশান ফিরে আসতে শশিকান্ত বলল, “চলো এ বার যাওয়া যাক।”

ঈশান বলল, “হ্যাঁ, চলো তোমাকে খানিকটা এগিয়ে দিই, না হলে তুমি রাস্তা গুলিয়ে ফেলবে।”

ঈশানের সঙ্গে শশিকান্ত ঘরের বাইরে পা দিতেই, সে শুনতে পেল তার নাম ধরে কেউ ডাকছে। পিছনে তাকিয়ে রাজেনকে দেখতে পেল। রাজেন বলল, “পিছু ডাকলাম, কিছু মনে কোরো না। তোমাকে একটা কথা বলার ছিল।”

শশিকান্ত কোনও কথা না বলে তাকিয়ে রইল রাজেনের দিকে। রাজেন বলল, “তুমি যে এখানে এসেছ, কেউ যেন না জানতে পারে, গল্পচ্ছলেও কাউকে কিছু বোলো না।”

শশিকান্ত এই কথারও কোনও উত্তর দিল না। মৃদু হাসল শুধু। এই রাজেন লাহিড়ী জানে না সে কোন পরিবারের ছেলে। এ সব শিক্ষা অনেক আগেই হয়ে গেছে তার। “আসছি,” বলে সে বেরিয়ে এল রাস্তায়। টিমটিম করে আলো জ্বলছে রাস্তায়। শশিকান্ত দ্রুত পা চালাল বাড়ির পথে।

বাড়িতে ঢুকতেই পিসি বলল, “কোথায় ছিলি এত ক্ষণ? আজ তো পুরো আপিস নয়।”

শশিকান্ত মুখ-হাত-পা ধুতে ধুতে বলল, “দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে গিয়েছিলাম।”

“তুই আবার সেখানেও যাস?” বলে পিসি রান্নাঘরে চলে গেল। রান্নাঘর থেকেই শশিকান্তর উদ্দেশে বলল, “জেঠিমার শরীরটা খারাপ হয়েছে। তোকে খুঁজছিল। এক বার দেখা করে আয়।”

শশিকান্তর কানে কথাটা যেতেই সে জেঠিমার ঘরের দিকে পা বাড়াল। ঘরের দরজা খোলাই ছিল। সে খুব সাবধানে ঘরের মধ্যে ঢুকল, যাতে জেঠিমার ঘুমের ব্যাঘাত না ঘটে।

বিভাবতী পাশ ফিরে শুয়ে ছিলেন। শশিকান্তর পায়ের শব্দে সোজা হয়ে শুলেন। বললেন, “শশী এলি? কোথায় যে থাকিস সারা দিন!”

শশিকান্ত এ কথার উত্তর না দিয়ে বলল, “তোমার কী হয়েছে জেঠিমা?”

“কী হয়েছে, কী জানি বাপু, তবে গা-হাত-পায়ে খুব ব্যথা...” বলে আবার পাশ ফিরে শোন বিভাবতী।

শশিকান্ত ত্রস্ত পায়ে পালঙ্কের পাশে এসে জেঠিমার কপালে হাত রাখে। জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। শশিকান্ত বলে, “তোমার তো গায়ে বেশ জ্বর, জেঠিমা। কখন থেকে হয়েছে?”

“আজ সকাল থেকেই গা-গতরে ব্যথা। এখন তো উঠতেই পারছি না,” বিভাবতী বলেন।

“তোমার মাথায় জলপট্টি দিতে হবে। আমি পিসিকে বলছি। আর, এক বার কবিরাজ জেঠুর বাড়িতে যাই, তোমার জন্য ওষুধ নিয়ে আসি,” বলে শশিকান্ত ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসে।

“তুই আবার এত রাতে কবরেজের বাড়িতে যাবি?” বিভাবতী ক্ষীণ কণ্ঠস্বরে বলে।

শশিকান্ত সে কথার উত্তর দেয় না। পিসিকে জেঠিমার কপালে জলপট্টি দিতে বলে, সে দ্রুত কবিরাজ জেঠুর বাড়ির দিকে যাত্রা করে।

অবিনাশ কবিরাজের বাড়ির সামনে এসে শশী থমকে দাঁড়ায়। বাইরে থেকে দেখে, কবিরাজ জেঠু তক্তপোশে বসে বই পড়ছে। জেঠিমা নিশ্চয়ই রান্নাঘরের কাজে ব্যস্ত। তার মানে সব ঠিক আছে। শুধু এক জনই নেই। তার না থাকায় জগৎ-সংসারে কারও কিছু যায় আসে না। সব কিছু আগের নিয়মেই চলে। শশিকান্ত ভাবে, সে ফিরে যাবে। লাবণ্যহীন এই বাড়িতে তার ঢুকতে ইচ্ছে করছে না, তবু জেঠিমার অসুখের কথা ভেবে তাকে ঢুকে পড়তে হল কবিরাজ জেঠুর বাড়িতে।

শশিকান্তর পায়ের শব্দে রান্নাঘর থেকে লাবণ্যর মা বেরিয়ে এলেন। অনেক দিন পর জেঠিমাকে দেখছে শশিকান্ত। বয়স যেন অনেক বেড়ে গেছে ওঁর এই এক-দেড় বছরে।

লাবণ্যর মা চিরকালই কম কথা বলেন। আজও তা-ই করলেন। শশীকে দেখে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলেন। কোনও কথা বললেন না।

শশিকান্তর অস্বস্তি হচ্ছিল। ‘কেমন আছেন জেঠিমা’ বলতে গিয়েও না বলে, সে তার আসার উদ্দেশ্য ব্যক্ত করল।

জেঠিমা পাশের ঘরের দিকে আঙুল নির্দেশ করে আবার রান্নাঘরে চলে গেলেন। হতভম্ব হয়ে সে দিকে খানিক ক্ষণ তাকিয়ে থেকে, কবিরাজ জেঠুর ঘরের দিকে পা বাড়াল শশিকান্ত।

শশিকান্তকে দেখে বই থেকে মুখ তুলে তাকালেন অবিনাশ কবিরাজ। চোখ থেকে চশমা খুলে পাশে রাখলেন। তার পর বললেন, “বাড়িতে সবাই সুস্থ আছে তো, শশিকান্ত?”

শশিকান্ত উত্তর দিল, “হ্যাঁ জেঠামশাই, সবাই ভাল আছে, শুধু জেঠিমা ছাড়া।”

“কী হয়েছে জেঠিমার?”

“খুব জ্বর, গা-হাতে-পায়ে ব্যথা।”

“ক’দিন হয়েছে?”

“আমাকে তো বলল, আজ থেকে।”

নাকে একটিপ নস্যি নিয়ে, রুমালে ভাল করে নাক ও হাত মুছে, অবিনাশ কবিরাজ তক্তপোশ থেকে নামেন। তক্তপোশের নীচ থেকে তাঁর ওষুধের সরঞ্জাম বার করে, মুহূর্তে বানিয়ে ফেলেন একটি ওষুধ। তার পর সেটি শশিকান্তর হাতে দিয়ে বলেন, “সাধারণ জ্বরজারি হলে এতেই কমে যাবে। যদি সান্নিপাতিক হয়, তা হলে অবশ্য এই ওষুধে কমবে না। তখন অন্য ওষুধ দিতে হবে। আমি কাল সকালে গিয়ে নীলুর বৌকে দেখে আসব।”

ক্রমশ

অন্য বিষয়গুলি:

Bengali Novel Novel
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy