ষষ্ঠ বেতন কমিশন গঠনের পরে তিন বছর কেটে গিয়েছে। কমিশনের দফতর বিকাশ ভবন থেকে প্রাথমিক খসড়ায় খরচের আভাসও গিয়েছে নবান্নে। তাতে রাজ্য কর্মীদের বর্ধিত বেতন-পেনশন মিলিয়ে প্রথম বছরেই বাড়তি ১১ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন বলে জানানো হয়। ‘ঘরোয়া ভাবে’ এ কথা জেনে কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে আর উচ্চবাচ্য করেনি নবান্ন। ফলে কমিশনও চূড়ান্ত কিছু ভাবার জায়গায় নেই বলে প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে।
শুধু তা-ই নয়, নবান্ন বরং খরচ কমানোরই ইঙ্গিত দিয়েছিল। নবান্নের মত, রাজ্যের যা আর্থিক পরিস্থিতি, তাতে বাড়তি ১১ হাজার কোটি টাকার ধাক্কা সামলানো সম্ভব নয়। তাই কমিশন বরং খরচ কমানোর কথা ভাবুক। সেই বার্তার পরেও কমিশন কর্মচারীদের এইচআরএ বা বাড়িভাড়া বাদ দিয়ে নতুন হিসেব কষেছে। তাতেও বাড়তি বোঝা চাপবে ৭০০০ কোটি টাকা। নবান্ন তার পরেও কোনও ‘সদুত্তর’ দেয়নি। ফলে কমিশন তাদের শুনানি পর্ব চালু রেখেছে। সরকার আর কমিশনের এ-হেন চাপান-উতোর পর্বে বেতন কমিশনের চেয়ারম্যান অভিরূপ সরকারের মন্তব্য, ‘‘আমি এই বিষয়ে একটি কথাও বলব না।’’
চেয়ারম্যান কিছু না-বললেও সরকারি সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে প্রায় ৯০০ আবেদনের শুনানি শেষ করেছে কমিশন। বিভিন্ন দফতরের কর্মী ইউনিয়নগুলির তরফেই ওই আবেদন পেশ করা হয়েছিল। কর্মীদের দাবিদাওয়া জানার পরে কমিশন তা নিয়ে দফতরগুলির মতামত নিতে শুরু করেছে। এবং তা চলছে নিতান্তই ঢিমেতালে। প্রতি সপ্তাহে একটি দফতর থেকে তাদের বক্তব্য জানতে চাইছে কমিশন। ১৮টি দফতরের শুনানি শেষ। বাকি আরও ৩২টি দফতর। তা চলবে আরও ৩২ সপ্তাহ। কমিশন সূত্রের জানানো হয়েছে, দফতরের শুনানি পর্ব শেষ হলে শ’চারেক কর্মীর আবেদনের শুনানি হবে। ওই কর্মীরা বিভিন্ন ইউনিয়নের দাবিদাওয়ার বাইরেও ব্যক্তিগত স্তরে আবেদন করেছেন। সেগুলি মূলত পুলিশকর্মীদের আবেদন।
আরও পড়ুন: ১০০ নয়, শবরদের ১৫০ দিনের কাজ নিশ্চিত করছে রাজ্য
বেতন কমিশন ১১ হাজার কোটি টাকার বাড়তি বোঝার হিসেব কষেছে কিসের ভিত্তিত?
২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় কর্মীদের ডিএ বা মহার্ঘ ভাতা ছিল ১২৫%। ফলে কারও মূল বেতন ১০০ টাকা হলে তিনি পেতেন ২২৫ টাকা। সেই সময় কেন্দ্রের সপ্তম বেতন কমিশন বেতন বাড়িয়ে ২৫৭ টাকা করেছিল। সমস্ত হিসেবনিকেশ করে প্রথম বছর কেন্দ্রীয় কর্মীদের ১৪.২৯% বেতন বেড়েছিল।
সেই হারে বেতন বাড়ালে অতিরিক্ত ১১ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন হবে বলে নবান্নকে জানিয়েছে রাজ্য বেতন কমিশন। কিন্তু নবান্ন খরচ কমাতে বলায় বাড়িভাড়ার খরচ না-দিয়ে অন্য একটি হিসেব পেশ করা হয়। তাতে প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা কম লাগতে পারে। সেই বিকল্প প্রস্তাবেও সাড়া নেই নবান্নের। ফলে প্রতি সপ্তাহে এক-একটি দফতরকে ডেকে শুনানি চালিয়ে যাচ্ছে কমিশন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy