Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

বালক কৃষ্ণকে এ ভাবেই বেঁধে রেখে রোজ কাজে যান মা!

পরনে একটা চেক কাটা জামা। প্যান্টের কোনও বালাই নেই। রাস্তার উপর বসে রয়েছে। উলঙ্গ উরুর কাছে এক টুকরো দড়ি বাঁধা। সেই দড়ির অন্য প্রান্ত বাঁধা রয়েছে বিদ্যুতের খুঁটিতে। ছোট্ট ওই পরিসরেই বাঁধা অবস্থায় খেলা করে বেড়াচ্ছে ছোট্ট কৃষ্ণ। বয়স মেরেকেটে ৬ হবে। আলিপুরদুয়ার মহিলা কলেজের সামনের রাস্তায় এটা রোজকার দৃশ্য!

আলিপুরদুয়ার মহিলা কলেজের সামনে বেঁধে রাখা হয়েছে কৃষ্ণকে।—নিজস্ব চিত্র।

আলিপুরদুয়ার মহিলা কলেজের সামনে বেঁধে রাখা হয়েছে কৃষ্ণকে।—নিজস্ব চিত্র।

নারায়ণ দে
আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৬ ২০:৪৭
Share: Save:

পরনে একটা চেক কাটা জামা। প্যান্টের কোনও বালাই নেই। রাস্তার উপর বসে রয়েছে। উলঙ্গ উরুর কাছে এক টুকরো দড়ি বাঁধা। সেই দড়ির অন্য প্রান্ত বাঁধা রয়েছে বিদ্যুতের খুঁটিতে। ছোট্ট ওই পরিসরেই বাঁধা অবস্থায় খেলা করে বেড়াচ্ছে ছোট্ট কৃষ্ণ। বয়স মেরেকেটে ৬ হবে। আলিপুরদুয়ার মহিলা কলেজের সামনের রাস্তায় এটা রোজকার দৃশ্য!

কৃষ্ণের মা রিনা সাহা রোজ তাকে এ ভাবে বেঁধে রেখেই সকালে কাজের খোঁজে বেরিয়ে পড়েন। ফেরেন সেই দুপুর বেলা। তত ক্ষণ ওই চত্বরে একা একাই থাকে কৃষ্ণ। এতটা সময় সে প্রায় কিছুই না খেয়ে থাকে। খিদে পেলেও বলতে পারে না ভাল করে! এমনকী, যে কাপড়ের পাড়কে দড়ি হিসেবে ব্যবহার করে তাকে বেঁধে রাখা হয়, সেটা খোলার বোধটুকুও তৈরি হয়নি। তার মানসিক সমস্যাও রয়েছে। বুধবার ওই কলেজের সামনে গিয়ে দেখা গেল, শিশুটি কার্যত কিছুই বোঝে না। রোদে আপন মনে শুধুই খেলাধুলো করে, ওইটুকু জায়গার মধ্যেই। রিনাদেবীর সঙ্গেও দেখা হল। তিনি বলেন, ‘‘রোজ কাজ যাই। ওকে নিয়ে কোথায় যাব? তাই বেঁধে রাখি।’’

কিন্তু, রোজ ছেলেকে এ ভাবে বেঁধে কোথায় যান রিনাদেবী?

কাজের খোঁজে বেরোন তিনি। কী কাজ? যে দিন যেমন জোটে। কোনও দিন কারও বাড়ি বাসন মাজা, তো কোনও দিন কারও বাড়ি পরিষ্কারের কাজ। কোনও কোনও দিন আবার সে সব কিছুই জোটে না। কৃষ্ণের মামা অজয় পাল আলিপুরদুয়ার শহরে কলেজ লাগোয়া লোহারপুল এলাকায় থাকেন। তিনি বলেন, ‘‘বোনের বিয়ে হয়েছিল দিনহাটা এলাকায়। দু’বছর আগে ওর সঙ্গে স্বামীর ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। রোজ সকালে ছেলেটাকে কলেজের সামনে বেঁধে রাখে। আমার অনেক বারণ করেছি। ছেলেটি অসুস্থ। তাও কথা না শুনে ও কাজের খোঁজে বেরোয়। কোথাও কাজ পেলে করে, না হলে ভবঘুরের মতো ঘুরে বেড়ায়। আবার দুপুরেই ফিরে আসে। ছেলেকে নিয়ে ঘরে ঢোকে তখন।’’

আলিপুরদুয়ার মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অমিতাভ রায়ও রোজ ছেলেটিকে ওখানে বাঁধা অবস্থায় দেখেন। তিনি বলেন, ‘‘৫-৬ বছরের ওই শিশুটিকে প্রতি দিন সকালে তার মা রাস্তার ধারে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রেখে চলে যান। কলেজের শিক্ষক ও কর্মীরা সকলে একাধিক বার ও ভাবে শিশুটিকে বেঁধে রাখতে বারণ করেছেন। কিন্তু, কোনও কথাই কানে তোলেননি রিনাদেবী। আমাদের কার্যত নিরুপায় অবস্থা। মানসিক ভাবে পিছিয়ে থাকা ওই শিশুটির চিকিৎসার ব্যবস্থা করলে ভাল হয়।’’

কিন্তু, এ ভাবে একটা শিশুকে বেঁধে রাখা যায় নাকি?

জলপাইগুড়ি চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারপার্সন দেবী উপাধ্যায় জানান, বিষয়টি অমানবিক। কোন শিশুকেই এ ভাবে বেঁধে রাখা যায় না। তাঁর কথায়, ‘‘শিশুটির চিকিৎসার প্রয়োজন। সঙ্গে ওর মায়েরও কাউন্সেলিং করাতে হবে। সে জন্য আমারা জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করব।’’ আলিপুরদুয়ার হাসপাতালের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সুমনা রায়ও চিকিত্সার প্রয়োজন বলে মনে করেন। তিনি বলেন, “ শিশুটির চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে। সঙ্গে ওর মায়েরও কাউন্সেলিং প্রয়োজন।” এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছেন আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক সৌরভ চক্রবর্তীও। তিনি বলেন, ‘‘এ ভাবে শিশুকে সারা দিন বেঁধে রাখা বেদনাদায়ক। ওর চিকিৎসার প্রয়োজন। পরিবারের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

special child alipuduar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE