তামাঙ্গ উন্নয়ন ও সাংস্কৃতিক পর্ষদের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কালিম্পঙে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
বিধানসভা ভোটের দেরি আছে। কিন্তু ৩ অক্টোবর শিলিগুড়ি ও লাগোয়া পাহাড়ের পাদদেশের বিস্তীর্ণ এলাকায় মহকুমা পরিষদের ভোট। সেই আবহেই আলাদা রাজ্যের দাবির পক্ষে-বিপক্ষে ফের সুর চড়াল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা ও তৃণমূল।
দিল্লি রওনা হওয়ার মুখে মঙ্গলবার বেলা ১১টা নাগাদ বাগডোগরায় দাঁড়িয়ে ফের আলাদা গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দেন বিমল গুরুঙ্গ। মোর্চা সভাপতি তথা গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ)-এর প্রধানের ঘোষণা, ‘‘জিটিএ-র কাজে বাধা দিচ্ছে রাজ্য। নানা বোর্ড গড়ে বিভাজনের চেষ্টা করছে। প্রতিবাদে আমাদের তিন সদস্য ১৮ সেপ্টেম্বর বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেবেন। পরে আমরাও জিটিএ প্রত্যাখ্যানের কথা ভাবব।’’ এর ঘণ্টা দু’য়েকের মাথায় পাহাড়ে তামাঙ্গ বোর্ড আয়োজিত জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাল্টা ঘোষণা, ‘‘আমি কোনও অবস্থায় পাহাড় ছাড়তে পারব না। তাতে আমার যদি কিছু হয়ে যায়, হবে। আমি পাহাড়কে টুকরো করতে দেব না।’’ ওই সভায় মুখ্যমন্ত্রীর সংযোজন, পাহাড়ের নানা পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের মানুষের আর্জি মেনেই রাজ্য সরকার যথাসাধ্য সহযোগিতার চেষ্টা করছে। তাঁর দাবি, ‘‘আমি পাহাড়ে রাজনীতি করতে আসি না। পাহাড়কে ভালবাসি। পাহাড়ি ভাইবোনদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করি। তাই বারবার পাহাড়ে আসি।’’
পরে ‘ফেসবুক’-এ মুখ্যমন্ত্রী জানান, এক হাজার বাড়ি গড়তে এ দিন তামাঙ্গ বোর্ডকে ১০ কোটি টাকা দিয়েছে রাজ্য সরকার। একই কারণে শেরপা বোর্ড এবং ভুটিয়া বোর্ডকেও অর্থসাহায্য করা হয়েছে। যে সূত্র ধরে মোর্চার শীর্ষ নেতারা বলছেন, ‘‘জিটিএ থাকতে পৃথক সম্প্রদায়ের বোর্ডকে আলাদা করে সাহায্য দিয়ে বিভাজনের রাজনীতিই করা হচ্ছে।’’
তৃণমূলের তরফে পাল্টা বলা হচ্ছে, জিটিএ যদি পাহাড়ে সবার জন্য সমান ভাবে উন্নয়নের কাজ করত তা হলে তামাঙ্গ, শেরপা, ভুটিয়াদের জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করতে হতো না।
তিন সপ্তাহ আগেই দার্জিলিঙের ম্যাল চৌরাস্তায় একই মঞ্চে বসে দু’জনে পরস্পরের প্রশংসা করেছিলেন। গুরুঙ্গ বলেছিলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর হৃদয়ে পাহাড় আছে।’’ জিটিএ-রাজ্য মিলে পাহাড়ের উন্নয়নে গতি আনার আশা প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রীও। তাই মোর্চা-তৃণমূলের এই ‘সুর চড়ানো’র মধ্যে রাজনীতির অঙ্ক দেখছেন দু’দলেরই বিরোধী শিবির। সমতলের বিরোধীদের (সিপিএম, কংগ্রেস) ব্যাখ্যা, শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের ন’টি আসনের মধ্যে চারটি থেকে নেপালিভাষী অধ্যুষিত অন্তত ৩৫টি মৌজা জিটিএ-র আওতায় চেয়েছিল মোর্চা। তাই সে সব আসনে নিজেদের প্রভাব অটুট রাখতে তারা মরিয়া। তাতে সমতলে প্রাধান্য বাড়াতে সুবিধা হবে তাদের। পক্ষান্তরে, মুখ্যমন্ত্রীর ‘পাহাড়কে টুকরো হতে দেব না’ ঘোষণাকে প্রচারে রেখে সমতলবাসীর বড় অংশকে পাশে পাওয়াটা নিশ্চিত করতে মরিয়া তৃণমূলও। পাহাড়ে বিরোধীদের (অখিল ভারতীয় গোর্খা লিগ, সিপিআরএম) বিশ্লেষণ, অতীতে প্রয়াত জিএনএলএফ নেতা সুবাস ঘিসিঙ্গ যে কোনও ভোটের মুখে গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে সুর চড়াতেন। জবাবে সে সময়ে বাম নেতারা প্রতিটি সভায় নিয়ম করে ‘রক্ত দেব, তবু বাংলা ভাগ হতে দেব না’ বলতেন। পাহাড় বা সমতলে মোর্চা বা তৃণমূল-বিরোধী সব শিবিরেরই বক্তব্য ‘‘ভোট-বাজারের নিজস্ব নিয়মেই কিছু কথা বলতে হয়। মমতা এবং গুরুঙ্গ এ দিন তা-ই বলছেন।’’
ঘটনাচক্রে এ দিন রাতে কালিম্পঙে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন স্থানীয় মোর্চা বিধায়ক হরকা বাহাদুর ছেত্রী। মোর্চার দাবি, সেটা নিছক সৌজন্য সাক্ষাৎ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy