Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪

‘বিক্রি’ হয়ে বিপদ আসছে, ত্রস্ত কংগ্রেস

কার্যক্ষেত্রে কংগ্রেসের হাতে এখন ৩২ জন বিধায়ক। প্রধান বিরোধী দলের স্বীকৃতি খাতায়-কলমে থাকলেও বাস্তবে ঘোর সঙ্কটে আব্দুল মান্নানেরা!

সন্দীপন চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৮ ০৩:৫২
Share: Save:

সদ্য ত্রিপুরায় যা হয়েছে, তার পুনরাবৃত্তি বাংলায় না হয়! আশঙ্কা দেখা দিয়েছে কংগ্রেসে!

গত দু’বছরে নয় নয় করে ১১ জন বিধায়ক কংগ্রেস ছেড়ে নাম লিখিয়েছেন তৃণমূলে। তার মধ্যে সবংয়ের মানস ভুঁইয়া শুধু তৃণমূলের টিকিটে রাজ্যসভার প্রার্থী হওয়ায় বিধায়ক-পদে ইস্তফা দিয়েছিলেন। সেই আসন উপনির্বাচনে জিতে নিয়েছে তৃণমূল। আর নোয়াপ়াড়া কেন্দ্রে কংগ্রেস বিধায়ক মধুসূদন ঘোষের মৃত্যুর পরে সেখানেও উপনির্বাচনে জয়ী হয়েছে তৃণমূল। অর্থাৎ কার্যক্ষেত্রে কংগ্রেসের হাতে এখন ৩২ জন বিধায়ক। প্রধান বিরোধী দলের স্বীকৃতি খাতায়-কলমে থাকলেও বাস্তবে ঘোর সঙ্কটে আব্দুল মান্নানেরা!

প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের বড় অংশের আশঙ্কা, বিধায়কদের ধরে রাখার ব্যর্থতায় বিরোধী দল তাঁদের লড়াইটাই দুর্বল হচ্ছে। মাঠে-ময়দানে কংগ্রেসের অবশিষ্ট যে কর্মী-সমর্থক তৃণমূলের হাতে আক্রান্ত এবং সরকারের বিরুদ্ধে লড়তে চান, অগত্যা তাঁদের বিজেপি-কে বেছে নিতে হবে! ত্রিপুরায় যে ভাবে কংগ্রেসের ভোট ৪২% থেকে নেমে দাঁড়িয়েছে ১.৮%-এ এবং বিজেপি সেই ভোট দখল করে ১.৩% থেকে ৪৩% হয়েছে, সেই ছবির পুনরাবৃত্তি বাংলাতেও দেখার ভয় পাচ্ছেন কংগ্রেস নেতারা!

পরিস্থিতি যে সঙ্গিন, গোপন করছেন না প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও। তাঁর সোজাসুজি স্বীকারোক্তি, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দয়ায় তো আমাদের দল চালাতে গেলে চলবে না! আমাদের বিধায়কেরা বিক্রি হচ্ছেন বলেই তৃণমূল কিনতে পারছে, এটাও সত্যি কথা!’’ তবে একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘কংগ্রেসের দুর্বলতা অবশ্যই আছে। কিন্তু এই দল ভাঙানো বাংলার রাজনৈতিক সংস্কৃতি ছিল না। আজ যাঁরা দল ভাঙাচ্ছেন, পরে পরিস্থিতি পাল্টালে তাঁরাও এই খেলার স্বীকার হবেন!’’ ত্রিপুরায় কংগ্রেস ভেঙে বিধায়ক নিয়েছিল তৃণমূল এবং পরে তাঁরাই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে গিয়েছেন— মনে করাচ্ছেন তিনি।

আরও পড়ুন: কংগ্রেসকে ছাড়াই জোট চান মমতা-রাও

রাজনৈতিক শিবিরের অনেকেই বলছেন, যেখানে যে দুর্বল, সেখানে তারাই ‘নৈতিকতা’র প্রশ্ন তোলে। ত্রিপুরায় যেমন তৃণমূল যে অভিযোগ বিজেপির বিরুদ্ধে তুলেছিল, বাংলায় একই কথা তৃণমূল সম্পর্কে বলছে কংগ্রেস। অধীরবাবুর কথায়, ‘‘তৃণমূল নেত্রীর পছন্দ না হতেই পারে। কিন্তু কংগ্রেস, সিপিএম তো ধর্মনিরপেক্ষ ময়দানে বিচরণ করেছে এখানে। আর উনি বাকি বিরোধীদের দুর্বল করে বিজেপির রাস্তা প্রশস্ত করছেন!’’

চার দিন পরেই রাজ্যসভার ভোটে কংগ্রেস প্রার্থী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভিকে সমর্থন করবে তৃণমূল। দিল্লিতে কংগ্রেসের প্লেনারি অধিবেশনের ফাঁকে সিঙ্ঘভির সামনেই তৃণমূলের বিধায়ক টেনে নেওয়ার বিষয়টি এআইসিসি-র পর্যবেক্ষক সি পি জোশীকে জানিয়েছেন অধীর, মান্নানেরা। শুনেছেন রাহুল গাঁধীও। কংগ্রেস সূত্রের খবর, সিঙ্ঘভি এবং গুলাম নবি আজাদ তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের কাছে জানতে চেয়েছেন, কেন এ ভাবে কংগ্রেসের ঘর ভাঙছে তৃণমূল? প্রশ্ন করা হলে ডেরেক সোমবার মুখ খুলতে চাননি। তবে তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার বক্তব্য, ‘‘যাঁরা দল বদলেছেন, তাঁদের বিধানসভায় তৃণমূলের সদস্য হিসেবে এখন দেখানো হবে না। তাতে কংগ্রেসের সংখ্যাও কাগজে-কলমে কমবে না!’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE