Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

শেষ ট্রেনে ‘দুষ্কৃতী তাণ্ডব’ শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখায়

বুধবার রাত পৌনে ১২টা নাগাদ ট্রেনটি সোনারপুর স্টেশন ছাড়ার পরেই ভেন্ডার কামরায় এক যাত্রীর সঙ্গে বেশ কয়েক জন যুবকের বচসা শুরু হয়। বচসা চলাকালীন একদল যুবক মারমুখী হয়ে ওঠে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:২৭
Share: Save:

শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার শেষ ডাউন ডায়মন্ড হারবার লোকালে দুষ্কৃতী-তাণ্ডবের অভিযোগ উঠল। অভিযোগ, ট্রেনে পাথর ও কাচের বোতল ছুড়ে ভাঙচুর করা হয়। মারধর করা হয় যাত্রীদেরও। লুঠ করা হয় সব্জি ভর্তি ঝুড়ি, টাকা, মোবাইল। এক যাত্রীকে ট্রেন থেকে নামিয়ে অপহরণের অভিযোগও ওঠে। পরে অবশ্য ওই যাত্রীকে রেল পুলিশ উদ্ধার করে।

রেল পুলিশ সূত্রের খবর, বুধবার রাত পৌনে ১২টা নাগাদ ট্রেনটি সোনারপুর স্টেশন ছাড়ার পরেই ভেন্ডার কামরায় এক যাত্রীর সঙ্গে বেশ কয়েক জন যুবকের বচসা শুরু হয়। বচসা চলাকালীন একদল যুবক মারমুখী হয়ে ওঠে। অভিযোগ, কয়েক জন যাত্রী ঘটনার প্রতিবাদ করায় শুরু হয়ে যায় মারধর ও লুঠপাট।

যাত্রীদের অভিযোগ, চলন্ত ট্রেনে এলোপাথাড়ি মারধরের পরে ট্রেনটি মল্লিকপুর স্টেশনে পৌঁছলে মারমুখী যুবকেরা প্লাটফর্মে নেমে কাচের বোতল ও রেললাইনের পাথর তুলে কামরার যাত্রীদের দিকে ছুড়তে শুরু করে। ফলে বেশ কয়েক জন যাত্রী আহত হন। ট্রেনের জানলার কাচ ভেঙে যায়। ট্রেন স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকাকালীন প্রায় চার পাঁচ মিনিট এ ভাবে দুষ্কৃতী তাণ্ডব চলে বলে যাত্রীদের একাংশের
অভিযোগ। আরও অভিযোগ, কামরা থেকে অভিজিৎ সর্দার নামে এক যাত্রীকে নামিয়ে নেয় দুষ্কৃতীরা। মল্লিকপুর ছেড়ে এর পরে ট্রেনটি বারুইপুর স্টেশনে পৌঁছতেই ক্ষিপ্ত যাত্রীরা দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের দাবিতে রেললাইনে নেমে অবরোধ শুরু করেন। বারুইপুর জিআরপি-র তরফে আহত যাত্রীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেওয়া হলে মিনিট কুড়ি পরে অবরোধ ওঠে। জখম যাত্রীদের বারুইপুর মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়। পরে মল্লিকপুর স্টেশন থেকে অপহৃত যাত্রীকে উদ্ধার করে বারুইপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যায় বারুইপুর জিআরপি।

শিয়ালদহ-ডায়মন্ড হারবার শাখার রাতের ট্রেনে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন যাত্রীরা। ডায়মন্ড হারবার জিআরপি-র মধ্যে রয়েছে ডায়মন্ড হারবার থেকে শিয়ালদহগামী ৮টি স্টেশন, প্রায় ৩৪ কিলোমিটার দূরে কল্যাণপুর স্টেশন পর্যন্ত। সকাল ৬টা থেকে ৮টা পর্যন্ত ট্রেনে ভিড় থাকায় পুলিশ যায় না। এর পর থেকে রাত অবধি জনা কয়েক পুলিশ কল্যাণপুর পর্যন্ত টহল দেয়। রাতের শেষ ট্রেনে দেউলা বা সংগ্রামপুর পর্যন্ত কয়েক জন যাত্রী থাকলেও ডায়মন্ড হারবার পৌঁছনোর আগে পর্যন্ত বহু কামরা ফাঁকা হয়ে যায়। ফলে রাতের ট্রেনে বাড়ে আতঙ্ক।

রাতের ট্রেনের নিত্যযাত্রী ডায়মন্ড হারবারের বাসিন্দা সুকমল পুরকায়েত জানালেন, মাঝে মধ্যে কারখানায় রাতের ডিউটি করে শেষ ট্রেনে ফিরতে হয়। তাঁর কথায়, ‘‘রাতের কামরায় পুলিশ থাকে না। বিশেষত শীতের সময় ফাঁকা কামরায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে শুধু মাত্র কয়েক জন যাত্রী থাকেন। তবে নিত্যযাত্রীরা জেনে গিয়েছেন, যে কোনও সময়ে দুষ্কৃতী হানা হতে পারে। তাই নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে সকলে এক কামরায় ওঠার চেষ্টা করেন। আর রাতের ট্রেনে মহিলাদের নিরাপত্তা নেই বললেই চলে।’’ তবে জিআরপি জানিয়েছে, বুধবারের শেষ ট্রেন ডায়মন্ড হারবার স্টেশনে পৌঁছনোর পরে এক দুষ্কৃতীকে ছিনতাইয়ের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে।

রেল পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিটি জিআরপি থানায় কর্মী সঙ্কটের কারণে যাত্রীদের নিরাপত্তা দিতে সমস্যা হচ্ছে। দিনের বেলায় মহিলা কামরায় মহিলা পুলিশ টহলদারিতে থাকলেও রাতে মাত্র হাতেগোনা কয়েক জন থাকেন।

এসআরপি (শিয়ালদহ) অশেষ বিশ্বাস বলেন, ‘‘দু’দল যাত্রীর মধ্যে মারামারি হয়েছে। মল্লিকপুর স্টেশনে গোলমালের ঘটনায় তিন জনকে আটক করা হয়েছে। ঘটনাটি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Sealdah South division Train Miscreants
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE